Home সারাদেশ ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আম্পান

ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আম্পান

by Newsroom

ভয়েস রিপোর্ট: ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আম্পান। পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ‘আম্পান’ আরও শক্তিশালী হয়ে সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়েছে। এটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মঙ্গলবার শেষরাত থেকে বুধবার বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এতে চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটচ্ছে উপকুলবাসী ।

মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ‘আম্পান’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় (১৬.৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬.৮ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি মঙ্গলবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭২৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। সুপার সাইক্লোন কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৫ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪৫ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুপার সাইক্লোন কেন্দ্রের কাছে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কি.মি. বেগে দম্কা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ছয় নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এবার জানবো সাইক্লোনটির নাম কেন ‘আম্পান’:

বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরসহ ভারত মহাসাগরের উত্তরভাগে যেসব সাইক্লোন দেখা দেয়, সেগুলোর নামকরণ করে ভারতের আইএমডি সহ আরও কয়েকটি আঞ্চলিক কেন্দ্র। এবারের সুপার সাইক্লোনটির নাম দিয়েছে থাইল্যান্ড। সোমবার সকাল ৯টায় আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের সই করা বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আভাস দেয়া হয়,বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে উপকূলে আঘাত হেনে সমতলে আসতে পারে। এটি মঙ্গলবার শেষ রাত থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এই প্রবল বিধ্বংসী ঝড়টি সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে, দিক পাল্টে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে গিয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে।

এতো গেলো আম্ফান কোথায় অবস্থান করছে আর কোথায় আঘাত হানবে। এবার জানবো এর ধ্বংসের ক্ষমতা কেমন। আবহাওয়াবিদরা বলছেন , বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। আর উপকুলে আছড়ে পড়তে পারে ১৫০ কিলোমিটার গতিতে।
এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এবার জানবো কি কি প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এক ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় সরকার সব প্রস্তুতি নিয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোর সব সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার নির্দেশ দিলে কি হবে। সচেতন হতে হবে উপকুল বাসীকে। তা না হলে এ দূর্যোগ মোকাবেলা করা বেশ কঠিনই হবে। আর সব প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২০ মে ভোর পর্যন্ত।

You may also like