Home জাতীয় নগরবাসীর বড় আতঙ্ক মশা

নগরবাসীর বড় আতঙ্ক মশা

by Newsroom
নগরবাসীর বড় আতঙ্ক

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। হঠাৎই বেড়েছে মশার উপদ্রব। যা বিপর্যস্ত করে তুলছে জনজীবন। মশার উপদ্রব বাড়ায় নগরবাসীর মনে দেখা দিচ্ছে ডেঙ্গুসহ নানা রোগের আতঙ্ক।

২০১৯ সালে দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় লক্ষাধিক মানুষ। সে সময় দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনাও হয়।

এদিকে এবারের শীত মৌসুমেও মশার উপদ্রবে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যায়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন নগরবাসী।

তাদের অভিযোগ, নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। মশক নিধন স্প্রেও করা হয়, তবে তা অকার্যকর। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। সেই সঙ্গে রয়েছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়াসহ নানা রোগব্যাধির আতঙ্ক।

অভিজাত এলাকার বাসিন্দারাও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ। বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুম। এ বিষয়ে প্রতি বছরের এ সময় প্রায় একই চিত্র লক্ষ করা যায়। তবে এ মশার প্রজননস্থলগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে এসব মশার উপদ্রব কমিয়ে আনা সম্ভব।

মশক নিধনে রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে তৎপরতা লক্ষ করা গেলেও, অন্য এলাকায়, বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের নতুন অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলোতে তেমন তৎপরতা নেই। মশা নানা রোগের ভাইরাস ছড়ায়। তাই মশার কামড় থেকে সুরক্ষাই সেসব রোগ থেকে দূরে থাকার সবচেয়ে ভালো উপায়।

তবে সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ওষুধের গুণগত মানও পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন খাল ও ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যে জানা গেছে, হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মশা ক্ষুদ্র প্রাণী হলেও এর কামড়ে বহন করে অনেক ক্ষতিকারক ও জীবননাশক জীবাণু। করোনাভাইরাসের মহামারীর সময়ে মশাবাহিত রোগ থেকে দূরে থাকতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মশার কামড়ে শুধু ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া হয় তা কিন্তু নয়। এছাড়াও এনকেফালাইটিস, জিকা ভাইরাস, পীতজ্বর ও চিকনগুনিয়ার মতো মশাবাহী রোগ হতে পারে।

এনকেফালাইটিস রোগটি ‘কিউলেক্স’ মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এর প্রকোপ সবচাইতে বেশি এশিয়া মহাদেশে, বিশেষত জাপানে। এর উপসর্গ হল জ্বর ও মাথাব্যথা। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি আড়াইশ জনের মধ্যে একজনের দেখা দেয় খিঁচুনি, মানসিক ভারসাম্যহীনতা এবং প্যারালাইসিস বা অসাড়তা। টিকাই এই রোগের সবচাইতে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

জিকা ভাইরাস বহনকারী মশার বৈজ্ঞানিক নাম ‘এইডেস অ্যালবোপিকটাস’। লোকমুখে ‘এশিয়ান টাইগার মসকিটো’ নামেও এর পরিচিতি আছে। জিকা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ হল চোখ লাল হয়ে যাওয়া, অবসাদ এবং পেশিতে ব্যথা। তবে আশার কথা হল এই ভাইরাসে আক্রান্ত সিংহভাগ রোগী সুস্থ হয়ে যায় কোনো রকম মারাত্বক জটিলতা ছাড়াই। গর্ভবতী কোনো নারী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, মায়ের কাছ থেকে সন্তানের মাঝেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে জিকা ভাইরাস।

প্রায় প্রতি বর্ষায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেখা যায়। ‘এডিস অ্যাজিপ্টাই’ মশার কামড়ের মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে। সংক্রমণের শিকার হওয়ার পর রোগের উপসর্গ দেখা দিতে তিন থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। উপসর্গগুলো ফ্লু বা মৌসুমি সর্দিজ্বরের মতো, যা আবার কয়েকদিন পরেই ভালো হয়ে যায়।

পীতজ্বর বা ইয়েলো ফিভার নামে পরিচিত এই রোগের বাহকও ‘এডিস অ্যাজিপ্টাই’, যার প্রাদুর্ভাব মূলত আফ্রিকা ও আমেরিকায় সবচাইতে বেশি। জ্বর, মাথাব্যথা, জন্ডিস, পেশি ব্যথা ইত্যাদি এই রোগের প্রধান উপসর্গ। সংক্রমণের ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই রোগ সেরে যায়। তবে কিছু রোগীকে নাক, মুখ ও পাকস্থলির রক্তপাতে ভুগতে দেখা যায়।

বাংলাদেশে চিকনগুনিয়ার ভয়ানক প্রকোপ খুব বেশিদিন পুরনো নয়। মশার কামড়ের মাধ্যমে শরীরে রোগের জীবাণু প্রবেশের দুই থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ চোখে পড়া শুরু হয়। জ্বর, মাথাব্যথা, ত্বকের র‌্যাশ, বমিভাব ও বমি ইত্যাদি ছাড়াও শরীর ব্যথা, বিশেষত, হাড়ের জোড়ে ব্যথা হওয়া এর বিশেষ লক্ষণ। রোগ সেরে যাওয়ার পরও হাড়ের জোড়ের ব্যথা সপ্তাহ, মাস কিংবা বছরব্যাপী ভোগাতে পারে। আর এই রোগের বাহকও ওই ‘এডিস অ্যাজিপ্টাই’ মশা।

স্ত্রী ‘অ্যানোফিলিস’ মশা মানবদেহে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে থাকা পরজীবী জীবাণু প্রথমে মশাকে আক্রান্ত করে। পরে ওই মশা সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে তার শরীরেও জীবাণু প্রবেশ করে। উপসর্গের মধ্যে আছে জ্বর, কাপুনি, মাথাব্যথা।

সঠিক সময়ে এই রোগগুলোর চিকিৎসা করা না হলে প্রায় সবগুলোই প্রাণঘাতি হওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই মশার কামড় থেকে বাঁচতে অ্যারোসল, মশারি, কয়েল, ধুপ, মসকিটো রেপেলেন্ট ইত্যাদি সাধ্য অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। মশার বংশবিস্তার হতে পারে এমন স্থান ধ্বংস করতে হবে। সর্বপরি, মশার কামড় থেকে দূরে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন : ৭৫ কোটি মশা ছাড়া হচ্ছে ফ্লোরিডায়!

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like