Home ভিডিও সংবাদ নরসিংদী জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য

নরসিংদী জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য

by Imtiaz Ahmed

মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, আড়িয়াল খাঁ ও পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদীর তীর বিধৌত জেলা নরসিংদী। নরসিংদী জেলার গোড়াপত্তন হয় আনুমানিক পঞ্চাদশ শতাব্দীতে। রাজা নরসিংহ প্রাচীন ব্রক্ষপুত্র নদের পশ্চীম তীরে নরসিংহপুর নামে একটি ছোট নগর স্থাপন করেছিলেন। কালের বিবর্তনে এ নদকে কেন্দ্র করে অসংখ্য চরের পাড়ে বসতি গড়ে ওঠে। পরর্বতীতে রাজা  নরসিংহের নামানুসারেই এ জেলার নামকরণ করা হয়। বর্তমানে ৬ টি পৌরসভা, ৭টি থানা, ৬ টি উপজেলা, ৭১ টি ইউনিয়ন ও ১০৯৫ টি গ্রাম নিয়েই এ জেলা। নরসিংদী জেলার মোট জনসংখ্যা ২২,২৪,৯৪৪।

এর মোট আয়তন ৩,৩৬০.৫৯ বর্গ কি:মি: । রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ৫৭ কি:মি: ও রেলপথে ৫৫ কি:মি:। জেলাটি বাংলাদেশের পূর্বাংশে অবস্থিত। এর উত্তরে কিশোরগঞ্জ, পূর্বে ব্রাহ্মনবাড়িয়া, দক্ষিণে নারায়নগঞ্জ এবং পশ্চিমে গাজীপুর জেলা পরিবেষ্টিত ।

এক সময় নরসিংদী ছিল প্রশাসনিক ভাবে ঢাকা জেলাধীন, নারায়ণগঞ্জ মহকোমার একটি থানা। পরর্বতীতে ১৯৭৭ সালে ঢাকা জেলার মহকোমায় উন্নিত হয়। ১৯৮৪ সালে নরসিংদী সদর, পলাশ, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব, রায়পুরা এই ৬ টি উপজেলা এবং নরসিংদী পৌরসভা নিয়ে নরসিংদীকে জেলা ঘোষণা করে সরকার।

জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে, উয়ারী বটেশ্বর, বেলাবো বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ইরানি মাজার, সোনাইমুড়ি টেক, চরসিন্দুর শীতলক্ষ্যা সেতু, ড্রিম হলিডে পার্ক, পান্থশালা, ঘোড়াশাল রেলওয়ে সেতু, হেরিটেজ নওপাড়া রিসোর্ট, লক্ষ্ন সাহার জমিদার বাড়ি, পারুলিয়া দরগা মসজিদ,  গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি।

এ ছাড়াও রয়েছে শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন চিনাদী বিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় বিলটি দেখতে আসেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। আর বর্ষা মৌসুমে চিনাদি বিলের সৌর্ন্দয্য আরো ফুটে ওঠে। এখানে আসলে চোখে পড়েবে বক, চিল, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, বালিহাঁস, ঘুঘুসহ,  নানান প্রজাতির পাখি।

শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে বিলটি। ‘স্বপ্ন চিনাদি নাম দিয়ে ২০১৬ সালের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান বিল কে পর্যকটের জন্য আকর্ষনীয় করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আগত দর্শনার্থীদের জন্য নির্মাণ করা হয় গনশৌচাগার, একটি গোলঘর ও নৌকা ঘাট।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যে দিক থেকে এ জেলা অত্যন্ত সমৃদ্ধ । নরসিংদীকে রাজনৈতিক সাহিত্যিক সামরীক ও বেসামরীক ব্যক্তিত্বরা মুহিমান্বিত করেছেন। তাদের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, ৬৯ এর গণ অভ্যূথানের মহানায়ক শহীদ আসাদ, আধুনিক বাংলা সাহ্যিতে দেশ বরেণ্য কবি শামসুর রাহমান, সাহিত্যিক-প্রাবন্দ্রিক ও সমালোচক ড: আলাউদ্দিন আল আজাদ, কবি আল হরিচরণ আচার্য্য এবং বিখ্যাত চিত্র শিল্পি সাহাবুদ্দিন , পবিত্র কোরানের বাংলা অনুবাদক ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন, উপমহাদেশের প্রথম আইপিএস অফিসার স্যার কে.জি গুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিসি আ .আ .ম.স. আরিফিন সিদ্দিক।

এ ছাড়াও ইতিহাসের পাতায় অন্যন্য আবিষ্কার আড়াই থেকে তিন হাজার বছরের প্রচীন সভ্যতার সাক্ষর বহনকারী  বেলাবো উপজেলার উয়ারী বটেশ্বর। উয়ারীতে প্রাপ্ত খ্রীষ্টপূর্ব কালের ছাপাঙ্কক্ষীত রূপ্য মূদ্রা, শিবপুরের জয়মঙ্গল গ্রামের গুপ্তযুগের স্বর্ণ মুদ্রা ও সপ্তম সতাব্দীর মহা রাজা দেব খড়গের ত্র্যাম্বলীপি।

রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময়  ইতিহাস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ঢাকার বাইরে প্রথম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পাঁচদোনা নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা প্রবলভাবে প্রতিরোধ করে এবং শুরু হয় যুদ্ধ। এ যুদ্ধে  পাকিস্তানী হানাদার  বাহিনীর একটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস হয় । হতাহত হয় বেশ কিছু পাকিস্তানী সৈন্য।

জেলায় শিক্ষার হার ৪৫%। মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৭৪৬ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৩৬ টি, কলেজ ৩৬ টি,কারিগরী বিদ্যালয় ১৬টি। এখানকার প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে নরসিংদী সরকারি কলেজ, সরকারি শহিদ আসাদ কলেজ, নরসিংদী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট,আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ।

নরসিংদী জেলা কৃষি, শিল্প, অর্থনীতি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে এক সমৃদ্ধ জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কলার জন্যও বিখ্যাত নরসিংদী জেলা। তা ছাড়া লটকন একসময় অপ্রচলিত ফলের তালিকায় থাকলেও নরসিংদীতে এর  ব্যাপক পরিমানের চাষ হওয়ায় বর্তমানে সারা দেশে জনপ্রিয়তাও বেশ বেড়েছে লটকনের। বর্তমানে তা বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।

তাঁত শিল্পের মেলাও বলা হয় এ জেলাকে, আধুনিক শিল্প ও বাণিজ্য সমৃদ্ধ বর্তমানে নরসিংদীতে রয়েছে ক্ষুদ্র তাঁত শিল্পের গৌরবময় ইতিহাস। প্রায় একশত বছর পূর্বে এ অঞ্চলে ছোট ছোট তাঁত শিল্প গড়ে ওঠে। এ ছাড়াও রয়েছে নরসিংদী শেখের চর বাবুরহাট  কাপড়ের বাজার ।

নরসিংদী জেলায় আরো রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার  মধ্যে বৃহত্তম ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানা। এটি  জেলার পলাশ উপজেলায় অবস্থিত।

যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় দেশের অনেক অঞ্চলের সারের চাহিদা এ সারকারখানা পূরণ করে। ১ হাজার ৩শত মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা সর্ম্পূন কারখানাটিতে  দুটি গ্যাস টারবাইন জেনারেটর, যার প্রতিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৯ মেগাওয়াট করে। কিন্তু কারখানাটি সচল রাখার জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় ১৩ মেগাওয়াট।

বিশিষ্ট দানবীর ও শিক্ষানুরাগী,আব্দুল কাদির মোল্লার জন্ম এ জেলাতেই। তিনি নরসিংদীকে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে আর্দশিক, নৈতিক, শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত করার লক্ষ্যে “মানুষ মানুষের জন্য, সেবাই আমাদের অঙ্গীকার এই মিশন এবং ভিশন নিয়ে গড়ে তোলেন পিতার নামে মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন।

এছাড়াও নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্কুল,কলেজে অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন। তিনি ২০১৮ সালে  মাদার তেরেসা সম্মাননা এবং ২০১৫ সালে দেশসেরা করদাতা  পুরস্কার পেয়েছেন ।

সমাজের দুস্থ, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসনের অনন্য সৃষ্টি বাঁধনহারা।

”বাঁধনহারা হতে পারি শূন্য ছাড়া নয় আমাদেরও ইচ্ছে করে ভাল মানুষ হই” এ স্লোগান নিয়ে জেলার এই ব্যতিক্রমী সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে । বাঁধনহারা সদস্যদের লেখাপড়ার ব্যয়সহ অন্যন্যা সুযোগ সুবিধা জেলা প্রশাসন বহন করে।

ভয়েস টিভি /আইএ

You may also like