রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ২১২ নম্বর কক্ষে থাকতেন মাহমুদ হাবিব হিমেল। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। মা আর ছেলের সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা তেমন ছিল না। নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি মায়ের জন্যও টাকা পাঠাতেন তিনি। বন্ধু-সহপাঠীরা তার মৃত্যুর পর এমনটাই বলছেন।
মাহমুদের বন্ধুরা বলেন, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আঁকাআঁকি নিয়ে পড়াশোনা। তাই ছবি এঁকে, কাঠ দিয়ে নানা শিল্পকর্ম করে সেগুলো বিক্রি করতেন তিনি।
একই বিভাগে মাহমুদের সহপাঠী তানভীর ইশতিয়াক বলেন, নিজের শিল্পকর্ম বিক্রি করে যে টাকা পেতেন, তা দিয়ে নিজের খরচ চালাতেন মাহমুদ। গতকাল মঙ্গলবারও মাহমুদ তার মাকে টাকা পাঠিয়েছেন।
চারুকলা অনুষদে মাহমুদের বন্ধু ছিলেন চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আতিক ইমরান। কয়েক দিন আগে তাকে মাহমুদ নক করেছিলেন ফেসবুক মেসেঞ্জারে। সে বিষয়ে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার বন্ধু। সেই প্রথম বর্ষ থেকেই ওর অনেক কথা আমার সঙ্গে শেয়ার করত। দেখা হলেই হাসিমুখে বন্ধু বলে হাতটা বাড়ায়ে দিত। ওর বাবা মারা গেছে অনেক দিন আগেই। মাকে নিয়ে অনেক সংগ্রাম করেছে। শেষ যেদিন কথা হলো, উড কোলাজের কাজগুলো বিক্রির ক্রেতা খুঁজে দিতে বলল। আমি তারে বলেছিলাম, আমার টাকা থাকলে আমিই নিয়ে নিতাম বন্ধু। তোর একটা কাজ আমার কাছে থাকত।’ এখন মাহমুদের মায়ের কী হবে, সেটা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেন তিনি।
১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে মালবাহী ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন। আজ বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাজা হয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে তার মরদেহ নিয়ে নাটোরের উদ্দেশে রওনা হন মা ও মামা। সঙ্গে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ৮টি বাসে করে শিক্ষার্থীরা।
ভয়েস টিভি/এসএফ