Home শিক্ষাঙ্গন রাবির ৩৪ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ

রাবির ৩৪ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ

by Newsroom

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ৩৪ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

এর আগে চলতি বছরের গত ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, ইউজিসিসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে তদন্তের দাবি জানান আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ। তারা বর্তমান প্রশাসনের অপসারণ চেয়ে গত বছরের অক্টোবরে ‘দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজে’র ব্যানারে ধারাবাহিক আন্দোলনও করেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ইউজিসির চেয়ারম্যান তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

গণশুনানিসহ বিভিন্নভাবে তদন্ত কাজটি করে ইউজিসির এই কমিটি। তবে উপাচার্য গণশুনানিতে হাজির হননি। বরং ইউজিসি চেয়ারম্যানকে লেখা চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে ইউজিসির তদন্ত কমিটি গঠনের এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন উপাচার্য।

আবদুস সোবহান ২০১৭ সালের মে থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম মেয়াদেও (২০০৯-২০১৩) তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল।

তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তদন্তে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যদের বিরুদ্ধে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণে রাষ্ট্রপতিকে (আচার্য) অসত্য তথ্য দেওয়া, শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে সুপারিশসহ ৭৩৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এতে ৩৬ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং ৭০০ পৃষ্ঠার সংযোজনী প্রতিবেদন রয়েছে। প্রতিবেদনে তাদের সম্পদের উৎস খুঁজে বের করার পাশাপাশি‌ রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারীকে অপসারণের সুপারিশও করা।

আরো জানা যায়, উপাচার্যের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতি, টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে উপাচার্যের মতো সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল পদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। এ কারণে উপাচার্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।

তারা বলেছে, উপাচার্যের নৈতিকতাবিবর্জিত এ ধরনের কর্মকাণ্ড জরুরি ভিত্তিতে বন্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যাতে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও গবেষণার সার্বিক পরিবেশের উন্নয়ন সাধিত হয়। এছাড়া নীতিমালা পরিবর্তনের সুযোগে নিয়োগ পাওয়া ৩৪ জনের নিয়োগ বাতিলের সুপারিশও করা হয়েছে।

জানা যায়, শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করে যোগ্যতা কমিয়ে দেয় রাবি উপাচার্য এম আবদুস সোবহান ও তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। এর ফলে কম যোগ্যতায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক হন উপাচার্যের মেয়ে ও জামাতা। এ রকমভাবে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য ৩৪ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগের নীতিমালা অনুযায়ী যাদের আবেদনের যোগ্যতা ছিল না।

উপাচার্য ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করে যোগ্যতা কমান। আগের নীতিমালায় আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রথম শ্রেণি বা সমমানের গ্রেড এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ ৩.৫০। এছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেধাক্রম প্রথম থেকে সপ্তমের মধ্যে অবস্থান। পরিবর্তিত নীতিমালায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩.২৫-এ নামিয়ে আনা হয় এবং মেধাক্রমে থাকার শর্তও তুলে দেয়া হয়।

এই সুযোগে মার্কেটিং বিভাগ থেকে পাস করা উপাচার্যের মেয়ে সানজানা সোবহান নিয়োগ পান ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে এবং জামাতা এটিএম শাহেদ পারভেজ নিয়োগ পান ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)।

আরও পড়ুন: ভিকারুননিসার সাবেক অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষকের জামিন বাতিল

তদন্ত কমিটি বলেছে, নীতিমালা পরিবর্তন করায় চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাবির শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা এখন সর্বনিম্ন।

এছাড়া বিভিন্ন অনুষদে প্রথম হওয়া, প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পাওয়া, এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত প্রথম বিভাগ বা শ্রেণি থাকা আবেদনকারীকে বাদ দিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন দুজনকে নিয়োগ দেয়া হয়।

উপাচার্যের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ, তাঁর জন্য নির্ধারিত বাসভবনে ওঠার পর তিনি আগের বরাদ্দ করা বাড়িটি কাগজপত্রে ছেড়ে দিলেও আসবাব রাখার জন্যে প্রায় দেড় বছর নিজের দখলে রেখেছিলেন। এরও সত্যতা পেয়েছে কমিটি।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসি সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, আমরা এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। তবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) বেলায়েত হোসেন তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তাঁর কাছে তদন্ত প্রতিবেদনটি এখনো আসেনি বলে জানান।

তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনটি ইউজিসি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া হয়েছে।

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like