ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ‘মানুষের আবেগ নিয়ে নোংরা রাজনীতির’ অভিযোগ তুলে ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ’ ভেঙে আলাদা কমিটি করেছে একটি অংশ।
সংগঠনটির ‘বহিষ্কৃত’ যুগ্ম আহ্বায়ক এ পি এম সুহেলের নেতৃত্বে ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে ২২ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
১৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলন করে নুরুলবিরোধীরা নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। তারা নুরের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও তুলেছেন। নুর ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক।
নতুন গঠিত সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কমিটিতে এ পি এম সুহেলকে আহ্বায়ক ও ইসমাঈল সম্রাটকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। যুগ্ম সচিব পদে আছেন সৈয়দ সামিউল ইসলাম।
নতুন কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন ১৪ জন। তারা হলেন আমিনুর রহমান, জালাল আহমেদ, আবদুর রহিম, আমিনুল হক, রিয়াদ হোসেন, মো. সেলিম, শাকিল আদনান, নাদিম খান, এ কে এম রাজন হোসেন, সাইফুল ইসলাম, সাজ্জাদুর রহমান, আফরান নাহিদ ও জাহেদুল ইসলাম।
কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে মিজানুর রহমান, মো. সিয়াম ও মো. জুনায়েদকে। এ ছাড়া উপদেষ্টা হিসেবে আছেন মোহাম্মদ উল্লাহ মধু ও মুজাম্মেল মিয়াজি।
নতুন সংগঠনের কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের দাবি, তারা সবাই নুরের সংগঠনের (ছাত্র অধিকার পরিষদ) বিভিন্ন ইউনিটে ছিলেন। তবে নুর বলছেন, সুহেল ছাড়া আর কেউ তার সংগঠনে ছিলেন না।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং নতুন কমিটির আহ্বায়ক এপিএম সুহেল বলেন, ‘মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে মানুষের আবেগ ও বিশ্বাস নিয়ে নোংরা রাজনীতি, আর্থিক অস্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাচারিতা, অগণতান্ত্রিকভাবে সংগঠন পরিচালনা, ত্যাগী ও দুঃসময়ের সহযোদ্ধাদের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অবমূল্যায়ন করা এবং সম্প্রতি ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলাকে কেন্দ্র করে নোংরা রাজনীতিকীকরণের অপচেষ্টার প্রতিবাদে ও সাংগঠনিক সংস্কারের উদ্দেশে আজকের সংবাদ সম্মেলন।’
কমিটির সদস্যসচিব ও ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ইসমাইল সম্রাট বলেন, ‘এর ভয়াবহতা এতটাই প্রকট হয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলাকে রাজনীতিকীকরণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমকে নোংরাভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, যেখানে সংগঠনের ৮০ভাগ সহযোদ্ধা এই বিষয়ে জানে এবং সমাধানের প্রক্রিয়ায় অনেকেই অংশগ্রহণ করে। এই মামলাটা তখনই রাজনৈতিক মামলা হতো যদি সংগঠনের সবাই এটা অনেক আগে থেকে না জানতো।’
তিনি বলেন, ‘এপিএম সুহেলকে বহিষ্কার ঢাবি সিন্ডিকেটের একক সিদ্ধান্ত ছিল। কেন্দ্রীয় কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। ঢাবি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তখনই সবাই মিলে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সংগঠনের স্বার্থে এবং তাদের শোধরানোর সুযোগসহ নানাবিধ চিন্তা করে আমরা সব বিষয়ে এত দিন চুপ করে ছিলাম। তবে সম্প্রতি তাদের আর্থিক অস্বচ্ছতা, নারী কেলেঙ্কারি, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত, নীতিনৈতিকতাহীন আচরণ, তৃণমূলকে অবমূল্যায়ন, ত্যাগী ও পুরাতন নেতাদের সাময়িক বহিষ্কার করাসহ নানাবিধ বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে কথা বলার জন্য আমরা উপস্থিত হয়ে বুকভরা দুঃখ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ভয় থাকা সত্ত্বেও।’
ইসমাইল সম্রাট আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে মিলেমিশে কাঁধে কাঁধ রেখে একসঙ্গে পথ চলা, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে ভালো। কিন্তু সে আদর্শ থেকে তারা আজ যোজন যোজন দূরত্বে সরে গেছে। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্লোগান নিয়ে আমরা আমাদের সাংগঠনিক যাত্রা শুরু করেছিলাম। সেই সংগঠনে নিজেরাই বারবার যারা রাজনীতির নামে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে চায় তাদের মাধ্যমে অন্যায়ের শিকার হচ্ছি। গুটিকয়েক নেতার অহমিকা, অহংকার, একরোখা সিদ্ধান্তের কারণে সাংগঠনিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে আমাদের হাজারো মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে গড়ে ওঠা সংগঠন। এরই ফলশ্রুতিতে একে একে বিভিন্ন কেলেঙ্কারি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে যা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাকর এবং দুঃখজনক।’
আরও পড়ুন: নুরের বিরুদ্ধে এবার তরুণীকে অপহরণ-ধর্ষণ ও ডিজিটাল আইনে মামলা
ভয়েস টিভি/এসএফ