লোকসাহিত্যের উর্বরভূমি হিসেবে পরিচিত নেত্রকোনা জেলার লোকসাহিত্যের সুনাম রয়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। লোকসাহিত্যের একটি প্রাচীন উপাদান হিসেবে কারবালার মর্মান্তিক কাহিনীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা নেত্রকোনার জারিগান এখন অনেকটাই হারিয়ে যাওয়ার পথে।
‘জঙ্গনামা’ পুঁথি এবং মীর মশাররফ হোসেন রচিত ‘বিষাদসিন্দু’র কাহিনীকেই মূলত জারিগানের মাধ্যমে তুলে ধরেন নেত্রকোনার বয়াতীরা।
এক সময় নেত্রকোনার প্রতিটি গ্রামেই ছিল জারিগানের দল। জেলার বিভিন্ন এলাকায় জমে উঠতো এ গানের প্রতিযোগিতামূলক আসর। বিশেষ করে মহররম মাস জুড়ে নেত্রকোনার গ্রামে গ্রামে চলতো এই জারিগান। জারিগানকে কেন্দ্র করে এ জেলায় গড়ে উঠেছিল শত শত শিল্পী। কিন্তু কালের আবর্তে জারিগান আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। পেশা বদল করছেন এ গানের সঙ্গে জড়িত শিল্পীরা। আর যারা এখনো জারিগানকে আকড়ে ধরে রেখেছেন- তাদের জীবন চলছে খুবই কষ্টে। তাই নেত্রকোনার ঐহিত্যবাহী জারিগানকে বাঁচিয়ে রাখতে অবিলম্বে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের দাবি করছেন জারিগানের শিল্পীরা।
এখনো এ জেলার অনেক বয়াতী ও শিল্পীরা জারিগানকে আকড়ে পড়ে আছেন। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ এক সময় সারা বছরব্যাপি এ জেলায় গ্রামে গ্রামে জারিগানের আসর বসতো। আর তা চলতো টানা কয়েকদিন পর্যন্ত। অনেক এলাকায় বসতো প্রতিযোগিতা। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ অধীর আগ্রহে উপভোগ করতেন বয়াতীর দিশা এবং জারিগানের শিল্পীদের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি।
বয়াতীর মুখে কারবালার করুণ কাহিনীর বর্ণনা শোনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারতেন না দর্শক-শ্রোতারা। এছাড়া এ জারিগানের মাধ্যমে নেত্রকোনার অসংখ্য বয়াতী ও শিল্পী জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এখন আর আগের সেই জৌলুশ নেই নেত্রকোনার জারিগানের। ফলে অনেক শিল্পীই তাদের পেশা বদল করেছেন। আর যারা এখন এ গান নিয়ে বেঁচে আছেন- তারা মানবেতর দিনযাপন করছেন। এ অবস্থায় জারিগান এবং শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নেত্রকোনার জারিগান শিল্পী আল আমিন, ইদ্রিস ফকির, তৌহিদ মিয়া জানান, বর্তমানে নেত্রকোনা জেলায় আগের মতো জারিগানের আসর না বসলেও একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। জেলার বিভিন্ন উপজেলার জারিগানের শিল্পীরা বিশেষ করে জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় এখনো জারিগানের অসংখ্য দল রয়েছে এবং তারা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জারিগান পরিবেশন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
ভয়েস টিভি/ডিএইচ