Home ধর্ম পর্দা নারীর নয়, পুরুষেরও

পর্দা নারীর নয়, পুরুষেরও

by Amir Shohel

পর্দার কথা প্রথম মাথায় এলেই একজন নারীর অবয়বের কথা মনে চলে আসে। এমন একটা ধারণা আমাদের মধ্যে প্রচলিত যে পর্দা কেবল নারীর একার পালনের বিষয়। শরিয়তে কি তাই বলা আছে? অথচ কুরআনে প্রথম পুরুষদের পর্দা করতে বলা হয়েছে। সূরা নূরের ৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘(হে নবী! আপনি) মুমিন (পুরুষদের) বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচু করে এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করে, এটা তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র। তারা যা কিছু করে আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত।’ অথচ আমাদের সমাজে পুরুষদের পর্দার ব্যাপারে এত আলোচনা নেই। একটি সমাজে কেবল নারী পর্দা করলেই হয়ে যাচ্ছে না, বরং সুস্থ সমাজের জন্য পুরুষদেরও পর্দা করতে হবে। মহান আল্লাহ নারীদের পর্দার আগে পুরুষদের পর্দা করতে বলেছেন। এটার বিশেষ তাৎপর্য অবশ্যই রয়েছে।

সমাজের বেশির ভাগ ধর্ষণ, পরকীয়ায় দেখা যায় পুরুষ সমাজই অগ্রগামী। ফলে পুরুষদের দৃষ্টিকে সংযত রাখা, লজ্জাস্থানের হিফাজত রাখা এসব ধর্ষণসহ বিভিন্ন অশ্লীলতা অনেকাংশে হ্রাস করবে। বুরায়দা রা. কর্তৃক বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. একবার হজরত আলী রা.-কে বলেন, ‘হে আলী! তুমি দৃষ্টির পর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে যে দৃষ্টি পড়ে তার জন্য তুমি ক্ষমা পাবে। কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য বৈধ নয়। (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, দারেমি, মিশকাত : ৩১১০)

এই হাদিসে স্পষ্ট, ইচ্ছাকৃতভাবে কারো দিকে তাকানোর বিধান শরিয়তে নেই। আর শরিয়তের এই হুকুম যদি আমরা মান্য করি, তাহলে ধর্ষণ, পরকীয়া, ইভটিজিং নামক পাপগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখা সম্ভব।

তবে নারীদেরও দায়িত্ব রয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের পরের আয়াতেই নারীদের কর্তব্য বলে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘এবং (হে নবী! আপনি) ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচু রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে; এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’

এ ছাড়া হজরত মুহাম্মদ সা. ইরশাদ করেন, ‘দুই শ্রেণির মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী যাদের আমি দেখিনি, তারা ভবিষ্যতে আসবে। প্রথম শ্রেণী অত্যাচারীর দল যাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মতো চাবুক যা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণি হলো সে নারীর দল যারা কাপড় তো পরিধান করবে কিন্তু তারা উলঙ্গ, নিজেরা অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট এবং অন্যদেরও তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে, যাদের মস্তক (খোঁপা বাঁধার কারণে) উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মতো হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তার গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।’ (মুসলিম : ২১২৮)

কোনো নারী যদি তার নিজের দৃষ্টিকে নিচু রাখে, নিজের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে, শালীনতা বজায় রাখে তাহলে সেখানে ধর্ষণ, পরকীয়ার মতো ঘৃণ্য পাপগুলো সংঘটিত হওয়ার সুযোগই নেই। তবে বর্তমানে আমাদের সমাজে সমস্যা হলো ইসলামের এই নিয়মকানুনকে সেকেলে বলে আধুনিকতার নাম নিয়ে যে দিকে পা বাড়াচ্ছি, তাতেই কেবল বিপদ বাড়ছে। অথচ, ইসলাম এখানে সহজ সমাধান নিয়ে এসেছে। কোনো পুরুষ যদি পর্দা করে তাহলে সে যেমন কোনো নারীর দিকে তাকানোকে পাপ মনে করবে, অপর দিকে কোনো নারী যদি পর্দা করে তা হলে সে নিজেকে সংযত রাখবে। এ ক্ষেত্রে ধর্ষণ, পরকীয়ার মতো ঘৃণ্য কাজগুলো সংঘটিত হওয়ার কোনো অবকাশ থাকবে না। এখন আমাদের সমাজে ধর্ম মানার বালাই নেই। ফলে সমাজে ধর্ষণের সংখ্যা বাড়ছে। ধর্ষণকারীরা কোনো না কোনো ধর্মের অনুসারী। ধর্ষকরা তার নিজ ধর্মকে, নিজ ধর্মের সিদ্ধান্তকে অবমাননা করেছে। পরকীয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। পরকীয়াতেও প্রথমে যা লঙ্ঘন হয় তা পর্দার বিধান। আর এর কুফল ব্যক্তি নিজেও যেমন দুনিয়া এবং আখেরাতে ভোগ করে, তেমনি তাদের পরিবারেও নেমে আসে অশান্তি। পরকীয়া সম্পর্কে যখন কেউ জড়ায়, সংসার থেকে মনোযোগ উঠে যায়। একটা দায়সারা ভাব হয়। শিশুদের যতেœ বা সংসারের প্রতি মনোযোগে অনীহা চলে আসে। বাবা কিংবা মায়ের পরকীয়া সন্তানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। ফলে বেশির ভাগ সময়ই সন্তানের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে না, ভুল পথে পা বাড়ায়। এভাবেই সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

আমাদের সমাজে নারীর পর্দা নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু সে অনুপাতে পুরুষের পর্দা নিয়ে কথা হয় না। অথচ শরিয়তে, কোন কোন পুরুষের সামনে শালীনতা বজায় রেখে যাওয়া যাবে তা যেমন বলা আছে, তেমনি একজন পুরুষ কোন কোন নারীর সামনে যেতে পারবে তাও বলা আছে। এক দিকে কোনো নারী যদি যথাযথ পর্দা ছাড়া বের হন, তখন ওই নারীকে ইভটিজিং কিংবা ধর্ষণের সুযোগ শরিয়তে রাখেনি। অপর দিকে, নারীদের দায়িত্ব হলো অধিকতর সময় ঘরে অবস্থান করা। নারীদের বাইরে যেতে হলেও যথাযথভাবে পর্দার নিয়মনীতি মেনেই বের হওয়া। আর নারী-পুরুষ উভয়ই যদি পর্দা পালন করে, তবে সমাজ থেকে অনেক অপরাধ দূর হয়ে যাবে। আর এতেই এক দিকে যেমন সমাজ হয়ে উঠবে সুস্থ ও আদর্শ, তেমনি আমাদের আখেরাতও হবে সুন্দর, ইনশা আল্লাহ।

লেখক : সদস্য, তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

You may also like