Home সারাদেশ শীত মৌসুমের শুরুতেই পাখির কলতানে মুখরিত ‘পাখিগ্রাম’

শীত মৌসুমের শুরুতেই পাখির কলতানে মুখরিত ‘পাখিগ্রাম’

by Mesbah Mukul

নড়াইলের নড়াগাতি থানার পানি পাড়া গ্রামের ‘কৃষি পর্যটনকেন্দ্র অরুনিমা ইকো র্পাক’-এ ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছরই শীত মৌসুমসহ বছরের ৮ মাস বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলীতে মুখরিত হয়। এবছরও মৌসুমের শুরুতেই অক্টোবরের প্রথম থেকে অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে গ্রামটি। পাখি সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করায় ১৫ বছর আগে থেকেই এলাকাটি পরিচিতি পায় ‘পাখিগ্রাম’ নামে।

বিকেল হলেই বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন গাছের ডালে আসতে থাকে পাখিরা। রাত যত গভীর হয় পাখিদের আগমন বাড়তে থাকে। সারারাত পাখির কলতানে মুখরিত থাকে পুরো এলাকা।

এসব পাখিদের মধ্যে আছে- বক, হাসপাখি, পানকৌড়ী, শালিখ, টিয়া, দোয়েল, ময়না, মাছরাঙা, ঘুঘু, শ্যামা, কোকিল, টুনটুনি, চড়ুইসহ নাম না জানা দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

দেশের একমাত্র এই কৃষি পর্যটন কেন্দ্রটি এখন পরিনত হয়েছে পাখির অভয়ারন্যে। আর এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে প্রতিনিয়ত দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে অসংখ্য পাখি প্রেমী মানুষ।

প্রায় ৬৮ একর এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির পাখির  বাসস্থান। হাজার হাজার অতিথি পাখির কলতান দেশী-বিদেশী ভ্রমন পিপাসুদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। এলাকাতে দেশী-বিদেশী পর্যটক আসায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে কয়েক শত বেকার যুবকেরও।

পাখি শিকার নিষিদ্ধ ঘোষনা হওয়ায় পাখিদের অন্তত পক্ষে মারা পড়ার ভয় নেই। আর এই ভরসায় সম্ভবত এখানে দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে পাখির আনাগোনা। পর্যটকরাও পাখি সংরক্ষনের নিশ্চয়তা দিয়ে যেন পাখি নিধন বন্ধের নতুন শপথ নেন।

কৃষি পর্যটন কেন্দ্রের ম্যানেজার সাজিকুল ইসলাম বেল্টু ভয়েস টেলিভিশনকে বলেন, ২০০১ সাল থেকেই মৌশুমে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখিসহ দেশীয় পাখি ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে আর আসছে। এখানে প্রজননের সুযোগ সুবিধা থাকায় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে পাখির সংখ্যা। আর বাড়ছে পাখির কলতান। এই কলতানে মুখরিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক অপরূপ পরিবেশ। পাখির এই অভয়ারণ্যের অনুকরণে দেশের অনেক স্থানে কৃষি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে অনেকেই আগ্রহী হবেন এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সবার।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়েছে। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পরিবেশ আর বিনোদনের আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধায় সন্তুষ্ট ভ্রমনপিপাসুরা। দেশের একমাত্র এগ্রো-ইকো-রিভারাইন-স্পোর্টস পর্যটন কেন্দ্র হল ‘অরুনিমা’। এর পুরো নাম অরুনিমা রিসোর্ট গলফক্লাব। ইতিমধ্যেই সেখানে ভীড় জমেছে বিনোদনপ্রিয় দেশী-বিদেশী বহু পর্যটকদের। তাদের পদভারে এখন মুখরিত কৃষিভিত্তিক পরিবেশবান্ধব এ পর্যটন কেন্দ্রটি।

পার্শবর্তী জেলা গোপালগঞ্জ থেকে পাখি দেখতে আসা আমিনুল ইসলাম রনি বলেন, প্রতিবছরই তিনি ছেলে মেয়েদের নিয়ে পাখি দেখার জন্য এখানে আসেন। কৃষির জন্য যে প্রকৃতির কোন বিকল্প নেই তা এখানে না এলে অভাবনীয়ই রয়ে যাবে। এখানে শুধু পাখিই নয় বরং পাখিদের বাসস্থান হিসেবে রয়েছে নানা প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধী বৃক্ষ। এছাড়া রয়েছে আমাদের দেশীয় প্রজাতির বেশ কিছু পশুপাখি এবং অনন্য সাধারণ একটি প্রাকৃতিক লেক।

খুলনা জেলার পাখি প্রেমী বাইয়েজিদ হোসেন ভয়েস টেলিভিশনকে বলেন, এত পাখি তিনি কখনও এক সাথে দেখেনি। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবেনা এখানের পাখির গল্প।
প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত বিনোদনপ্রিয় মানুষ ও পর্যটক আসছেন এ অরুনিমা ইকোপার্কে। উপভোগ করছেন প্রকৃতিকে, আবার ফিরে চলে যাচ্ছেন।

দেশি-বিদেশী পর্যটকদের আবাসিক সুবিধার জন্য এখানে রয়েছে সুইমিং পুল, এসি, নন-এসি ৩৪টি কটেজ। এক রুমবিশিষ্ট ভাসমান কটেজ রয়েছে দুটি। এখানে আবাসিক বোটসহ প্রতিটি কটেজেই রয়েছে খাবারের সু-ব্যবস্থা। লেকের মাঝে রয়েছে দ্বীপ রেষ্টুরেন্ট, চিত্রা কনভেনশন হল, এস এম সুলতান লাউন্স, দ্বীপ কটেজেস এবং সরকার অনুমোদিত টিপসি বার। ভাসমান ব্যাংককুয়েট। এ রেষ্টুরেন্টে দেশী-বিদেশী খাবার, ফলের জুস, নিজস্ব খামারে উৎপাদিত সবজি ও মাছের ফ্রাইসহ আরও আছে বারবিকিউ। প্রায় ৪’শ জনের সেমিনার বা কনফারেন্সের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে প্রায় একশ জনের আবাসিক সুবিধা।

কৃষকদের নিয়ে কাজ করা স্থানীয় একটি এনজিওর নির্বাহী পরিচালক কাজী বাসাক বলেন, পাখি আমাদের পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী প্রানী। অতিথি পাখি আগমনের ফলে এলাকার মৎস চাষ ও বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে খুবই উপকার হয়।

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কৃষি পর্যটনকেন্দ্র অরুনিমা ইকো র্পাক-এর চেয়ারম্যান খবির উদ্দিন আহমেদ ভয়েস টেলিভিশনকে বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র কৃষি পর্যটনকেন্দ্র পরিণত হয়েছে পাখিদের অভয়ারণ্যে। এই মৌসুমে এরকম হাজার হাজার পাখির আগমন এদেশে কল্পনাতীত।

ভয়েসটিভি/এমএম

You may also like