Home সারাদেশ অধিক লাভজনক হওয়ায় বাড়ছে পানিফল চাষ

অধিক লাভজনক হওয়ায় বাড়ছে পানিফল চাষ

by Shohag Ferdaus
পানিফল

অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় সাতক্ষীরা জেলায় দিন দিন বাড়ছে পানিফলের চাষ। সুস্বাদু এ ফলটি বাজারজাতকরণ খুবই সহজ। জলাবদ্ধ এলাকায় পতিত জমিতে খুব সহজেই চাষ করা যায় এ ফলটি। অল্প খরচ করে উৎপাদন বেশি ও বেচাবিক্রি লাভজনক হওয়ায় পানিফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।

এদিকে সুস্বাদু হওয়ায় এ অঞ্চলে ক্রেতাদের মাঝে বেড়েছে পানিফলের জনপ্রিয়তা। এছাড়া সাতক্ষীরা থেকে উৎপন্ন এ ফলটি এখন দেশের বিভিন্ন বাজারেও বিক্রি হচ্ছে ।

সাতক্ষীরা সদরের আগরদাড়ি ইউনিয়নের বালিয়াডাঙা গ্রামের শফিকুল ইসলাম। চলতি মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে পানি ফলের চাষ করেছেন তিনি। পানিফল চাষি শফিকুল ইসলাম জানান, পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় এ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অন্য কৃষিকাজ করা সম্ভব হয় না। যার কারণে গত কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ শুরু করেছি। এতে বাড়তি লাভ হচ্ছে। খরচ কম আবার উৎপাদন ও বিক্রি বেশি।

তিনি আরও বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে পানি ফল চাষ করেছি। এতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। দেড় লাখ টাকারও বেশি পানিফল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

পানিফল

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১১৫ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২০ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ১৮ হেক্টর, তালা উপজেলায় দুই হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ২২ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৫০ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় দুই হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় এক হেক্টর জমিতে।

এ বছর জেলায় ১৬০০ চাষির পানিফলের উৎপাদন হয়েছে ২৩০০ মেট্রিকটন। এগুলো বিক্রি হবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায়। গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে তিন হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ বেড়েছে। গত বছর জেলায় পানিফলের চাষ হয়েছিল ১১২ হেক্টর জমিতে। জেলায় ১৬০০ জন কৃষক পানিফলের চাষাবাদ করেছেন।

পানিফল কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ ও পরিপক্ক হলে কালো রং ধারণ করে। ফলটির পুরু খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিণ্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাস। কাঁচা ফলের এ নরম শাসটি খেতে বেশ সুস্বাদু।

সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ মহাসড়কের সখিপুর ও ডেল্টা মোড়, কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সড়ক, সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোড মোড়, পাকাপোল ব্রিজ, বড় বাজারসহ, কলারোয়া সদরে খুচরা বিক্রি হচ্ছে পানিফল। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা। প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়। পাইকারিতে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়।

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার থেকে পানিফল ক্রেতা জাকির লিটন বলেন, আমি দুই কেজি ফল কিনেছি ৫০ টাকায়। পরিবারের সদস্যরা মিলে খাওয়ার জন্য। ফলের ভিতরের শাসটি সুস্বাদু।

দেবহাটা উপজেলার কামটা গ্রামের মৃত আব্দুল ছালেকের ছেলে খোকন বাবু সরদার। তিনি পানিফলের পাইকারি ব্যবসায়ী। তিনি জানান, পানিফল চাষের মৌসুম আসার আগেই অর্ধ শতাধিক চাষিকে আমি বিনিয়োগ করেছি। ফলন আসার পর সেই চাষিদের নিকট থেকেই আমি ফল সংগ্রহ করছি।

পানিফল

এভাবে এক যুগেরও বেশি সময় পানিফল ব্যবসা করছি। বর্তমানে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, চট্রগাম, সিলেট, রাজশাহী, বেনাপোল, যশোর, নাটোর, বগুড়া, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরাসহ বিভিন্নস্থানে এ ফল বাজারজাত করছি। এতে আমার লাভও হচ্ছে। এখন পানিফল প্রতিকেজি পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা।

দেবহাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফ মোহাম্মাদ তিতুমীর জানান, প্রতি বিঘা জমিতে পানি ফল চাষ করতে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে উৎপাদিত ফল বিক্রি হয় ৩৫-৪০ হাজার টাকা। হেক্টর প্রতি পানি ফলের উৎপাদন হয় ৩০ মেট্রিকটন। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় পানিফল চাষ বেড়েছে। তাছাড়া জলাবদ্ধ জমিতেই এই ফলের চাষ হয় ভোগান্তিও কম আবার ফলনও বেশি।

তিনি বলেন, ফল চাষের জমি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডোবা, বদ্ধ জলাশয় বা মাছের ঘেরের সুবিধাজনক স্থান। সামান্য লবণাক্ত ও মিষ্টি পানিতে পানিফল চাষ করা যায়। পানিফল গাছ কচুরিপানার মতো পানির ওপরে ভেসে থাকে।

পাতার গোড়া থেকে শিকড়ের মতো বের হয়ে বংশ বিস্তার করে ও শিকড় থেকে ফল ধারণ করে। এ ফলটি চাষে খুব বেশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। সার ও কীটনাশকের পরিমাণও কম লাগে। মূলত বর্ষা মৌসুমেই পানি ফল চাষ হয়।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, পানিফল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এর ইংরেজি নাম Water chestnut ও উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Trapa bispinosa। পানিফলের আদি নিবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা হলেও এর প্রথম দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় পানি ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। জলাশয় ও খাল-বিলে এ ফলটি উৎপন্ন হয়। এর শেকড় থাকে পানির নিচে মাটিতে ও পাতা পানির উপর ভাসে। পানিফলের একটি গাছ প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানি ‘সিংড়া’ বলেও এলাকায় পরিচিতি পেয়েছে এ ফলটি।

নুরুল ইসলাম বলেন, কোনো চাষি কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে তাদের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। জেলায় চলতি মৌসুমে ২৩০০ মেট্রিকটন পানি ফলের উৎপাদন হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে পানিফল দেশের বিভিন্ন হাটেবাজারেও চলে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: পোশাকের সমালোচনায় নেটিজেনরা, প্রতিক্রিয়াহীন ‘পাখি’

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like