Home জাতীয় মহানায়কের শতবছর পূর্ণ

মহানায়কের শতবছর পূর্ণ

by Shohag Ferdaus
বঙ্গবন্ধু

আজ ১৭ মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হলো। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই নেতা। গোটা জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে তাঁর জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন করবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন শুরু গেল শতকের চল্লিশের দশকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম প্রমুখের হাত ধরে। তাঁরা ছিলেন তৎকালীন মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতা। ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ আগস্ট ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে বিভক্ত বাংলার পূর্বাংশ পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হয়। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বৈরী ও বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে প্রথম যারা আন্দোলন–সংগ্রাম করেছেন, জনগণকে সংগঠিত করেছেন, তাঁদের প্রথম সারিতে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আওয়ামী লীগের নেতা, প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী, জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি বিরতিহীনভাবে পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। পাকিস্তান পর্বে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষার দাবিতে ডাকা ধর্মঘট পালনকালে তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব প্রথম জেলে যান। এরপর কারাগার যেন হয়ে ওঠে তাঁর দ্বিতীয় আবাসস্থল। ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসনের অর্ধেকের বেশি সময় তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন।

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলে তা হয়ে ওঠে এ দেশের জনমানুষের মুক্তিসনদ। ছয় দফা কর্মসূচি শুধু বাঙালি নয়, পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সিন্ধি, পাঠান ও বালুচদেরও প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানি শাসকেরা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করলে তাঁর জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়।

উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে তিনি অধিনায়কের বেশে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে আসেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসক চক্র ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করলে বঙ্গবন্ধু সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন; যা ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের পূর্বপ্রস্তুতি। ১ মার্চ থেকে পুরো বাংলাদেশ চলেছে তাঁর নির্দেশে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তার হওয়ার আগমুহূর্তে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরবর্তী ৯ মাস তাঁর নামে ও নির্দেশেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে শুধু স্বাধীন করেননি, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানি জিন্দানখানা থেকে ফিরে এসে প্রায় শূন্য হাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কাজেও সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। স্বল্পতম সময়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের স্বীকৃতি আদায়ের পাশাপাশি ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ তাঁর বিরল কূটনৈতিক সাফল্যের স্বাক্ষর বহন করে। তিনি মাত্র ৯ মাসে দেশবাসীকে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। ধর্মকেন্দ্রিক জাতীয়তার বিপরীতে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা প্রতিষ্ঠা ছিল বঙ্গবন্ধুর মহত্তম রাজনৈতিক প্রত্যয়।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্য তাঁকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করে। কিন্তু ঘাতকের বন্দুকের নল বাংলাদেশের সঙ্গে এই মহান নেতার যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক, তা ছিন্ন করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জর্জ ওয়াশিংটনের, ভারতের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর, চীনের সঙ্গে মাও সে–তুংয়ের, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভ ই লেনিনের নাম যেভাবে জড়িয়ে আছে, বাংলাদেশের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামও সেভাবে অবিচ্ছেদ্য সত্তা হয়ে থাকবে।

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like