আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো প্রতি ঈর্ষা পোষণ করা বৈধ নয়। এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তা থেকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার যোগ্যতা ও ক্ষমতা দান করেছেন। অন্য ব্যক্তি যাকে আল্লাহ প্রজ্ঞা দান করেছেন এবং সে তার মাধ্যমে ন্যায়বিচার করে এবং অপরকে তা শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৩)
আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি বিশেষ গুণ উল্লেখ করেছেন এবং তা অর্জনে উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। তা হলো বৈধ পথে আয় করে বৈধ পথে ব্যয় করা এবং অর্জিত জ্ঞান মানবকল্যাণে বিতরণ করা।
ঈর্ষা বৈধ, হিংসা নয়
ইসলামী শরিয়তে অন্যের ভালো গুণ দেখে ঈর্ষা করা বৈধ; কিন্তু হিংসা করা বৈধ নয়। ঈর্ষা হলো অন্যের গুণ বা অর্জনের বিনাশ না চেয়ে তার অনুরূপ গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য অর্জনের প্রত্যাশা। আর হিংসা হলো ভালো গুণ বা অর্জন সহ্য করতে না পারা এবং তার বিনাশ চাওয়া। ইসলামের দৃষ্টিতে হিংসা হারাম। জুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের আগেকার উম্মতদের রোগ তোমাদের মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছে। তা হলো পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা। আর এই রোগ মুণ্ডন করে দেয়। আমি বলছি না যে চুল মুণ্ডন করে দেয়; বরং এটা দ্বিনকে মুণ্ডন (বিনাশ) করে দেয়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৫১০)
অন্যের ভালো দেখে আনন্দিত হয় মুমিন
মুমিন যখন অন্য কোনো মুমিনের ভালো পরিণতি ও কল্যাণ লাভ করতে দেখে, তখন সে আনন্দিত হয়। আর তারা চায় কৃতত্ব অর্জনকারীর আনন্দ দীর্ঘায়িত হোক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, এটা আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায়; সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা পুঞ্জীভূত করে তা অপেক্ষা এটা শ্রেয়।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত-৫৮)
সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা নিন্দনীয়
মুমিন আল্লাহর কাছে অভাব, পরমুখাপেক্ষী ও সংকীর্ণমুক্ত জীবন প্রত্যাশা করবে, তবে পার্থিব সহায়-সম্পদ ও ভোগ-বিলাসের ব্যাপারে সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা করবে না। বিশেষত কোনো খোদাদ্রোহীর মতো হতে যাওয়া দূষণীয়। পবিত্র কোরআনে এ শ্রেণির মানুষের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ‘আহা, কারুনকে যেরূপ দেওয়া হয়েছে আমাদেরও যদি তা দেওয়া হতো! প্রকৃতই সে মহাভাগ্যবান।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৭৯)
এ দুই ব্যক্তি ঈর্ষণীয় কেন?
হাদিসের ব্যাখ্যাকার বলেছেন, এই দুই ব্যক্তিকে ঈর্ষণীয় আখ্যা দেওয়ার কারণ হলো তাদের জ্ঞান ও সম্পদ দ্বারা অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আর আল্লাহ তার সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহশীল ও উপকারী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এ ছাড়া কোরআন ও হাদিসে সম্পদ দান, ন্যায়বিচার ও দ্বিনি জ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার অসংখ্য মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের ধনৈশ্বর্য রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের পুণ্য ফল তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে, তাদের কোনো ভয় নাই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৪)
জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত ব্যক্তির ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেন, ‘জ্ঞানীরা হলেন নবীদের উত্তরসূরি। নবীরা কোনো স্বর্ণ মুদ্রা বা রৌপ্য মুদ্রা উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যান না; তারা উত্তরাধিকার সূত্রে রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ইলম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৪১)। মহানবী (সা.) আরো বলেন, ‘সুবিচারক লোক আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর ডান হাতের দিকে নূরের মিম্বরের ওপর উপবিষ্ট থাকবেন। যারা তাদের বিচারকার্যে, পরিবারে ও দায়িত্বভুক্ত বিষয়ে ইনসাফ রক্ষা করে। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর উভয় হাতই ডান হাত।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৩৭৯)
আল্লাহ সবাইকে ভালো গুণ অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।