Home ধর্ম পূর্ববাংলা ও আসামের ইসলাম প্রচারক ফসিহ উদ্দিন (রহ.)

পূর্ববাংলা ও আসামের ইসলাম প্রচারক ফসিহ উদ্দিন (রহ.)

by Newsroom
ফসিহ উদ্দিন

পূর্ববাংলা ও আসামের ইসলাম প্রচারক ও সীমান্তবর্তী শেরপুরের প্রাণপুরুষ মাওলানা ফসিহ উদ্দিন (রহ:)। যিনি ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

১৮৮২ সালে জেলার সদর উপজেলার যোগিনীমুড়া গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ¦ মৌলভী দ্বীন মুহাম্মদ ও পিতামহ আলহাজ¦ সুফি মজনু ফরায়েজী।

শিক্ষা জীবন ও আধ্যাত্মিক দীক্ষা লাভ:
পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী পিতার নিকট হতে আরবি, ফার্সি ও ধর্মীয় জ্ঞান লাভ করেন। খোশ মুহাম্মদ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত কামারের চর মাদ্রাসায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য দানবীর হাজি মুহাম্মদ মহসিনের প্রতিষ্ঠিত হুগলী আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরে তিনি অধিকতর শিক্ষা লাভের জন্য ভারতের কানপুরে গমন করেন এবং কানপুর মাদ্রাসা হতে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন।

প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী, আধ্যাত্মিক দীক্ষা বা ইলমে মারিফতের দিকে মনোনিবেশ করেন। এ সময় আসাম, দিল্লি, মাদ্রাজ, লখনও ও এলাহাবাদসহ ভারত বর্ষের উল্লেখ্যযোগ্য স্থানে ভ্রমণ করে বরেন্য উলামা-ই-কেরামের সংস্পর্শে আসেন এবং ভারতের প্রখ্যাত আলেম ও সূফী সাধক এলাহাবাদের পীর সাহেবের বায়াত গ্রহণ করেন। এতে তিনি ইলমে মা’রেফতের জ্ঞান লাভ করেন। তাঁর পীর তাঁকে বাংলা হতে এলাহাবাদে যোগাযোগের ‘অসুবিধা’ বিবেচনা করে বাংলার মুজাদ্দিদ হযরত মাওলানা শাহ সূফী আবু বক্কর সিদ্দীক (ফুরফুরা শরিফের পীর) এর নিকট বায়াত গ্রহণের পরামর্শ দেন।

সে অনুযায়ী  তিনি ফুরফুরা শরিফের পীর সাহেবের প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়। পরে ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দে পাশ্ববতী জামালপুরের ইসলামপুর থানার ডিপারচরে এক ঐতিহাসিক ধর্মসভায় লক্ষাধিক শ্রোতার সামনে তাঁকে খেলাফত দান করেন।

এসময় ফুরফুরার উল্লেখযোগ্য খলিফা মাওলানা নিসার উদ্দিন (রহ:), মাওলানা রহুল আমিন (রহ:) ও মাওলানা আব্দুল খালেক (রহ:) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

হজব্রত পালন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  নির্মাণ :
মাওানা ফসিহ্ উদ্দিন (রহ:) জীবনে ৩ বার হজ  পালন করেন। তাঁর পিতা দ্বীন মুহাম্মদের সাথে ২ বার   ও ১৯৪৫ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় একবার পালন করেন। ফসিহ উদ্দিন  বরিশালে  মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং কিছুদিন সেখানে শিক্ষকতা করার পর মাওলানা শেরপুরের নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। স্থানীয় মুসলমানদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দে যোগিনীমুড়া গ্রামে একটি নিউস্কিম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

এতে তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়। মাওলানা অত্যান্ত সাহসিকতার সাথে যাবতীয় বাঁধা বিপত্তি মোকাবিলা করে মাদ্রাসাটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করেন। পাক আমলের শেষের দিকে মাদ্রাসটি উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

সংস্কার ও দ্বীনের প্রচার
সকল প্রকার কুসংস্কার ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে মাওলানা ফসিহ উদ্দিন ছিলেন সোচ্চার। এ বৃহৎ অঞ্চলে বহু মসজিদ, মাদ্রাসা, মকতব প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ তাঁর কাছ থেকে বায়াত গ্রহণ কালে তাদেরকে ইসলামী রীতিনীতি, আইন কানুন, আমল, আখলাক বিষয়ে বিশেষ শিক্ষা দান করেন। মাওলানার সত্যপ্রিয়, তাকওয়া, পরহেজগারী এ অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে প্রবাদের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি ছিল অসাধারণ। তাই জন্মস্থানে তিনি পীর সাহেব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশ ছাড়াও আসামে তাঁর শত শত ভক্ত রয়েছে। মাওলানার প্রত্যক্ষ দু’আয় নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত একটি সুরম্য মসজিদ ও ঐতিহ্যবাহী ফসিহ্ উল উলুম দাখিল মাদ্রাসা আজও দ্বীনের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।

পরিবার ও ইন্তেকাল:
পারিবারিক জীবনে মাওলানা ফসিহ উদ্দিন ২ পুত্র ও ৬ কন্যার পিতা ছিলেন। তিনি ১৯৮৩ সালে শেরপুরে ইন্তেকাল করেন। বাড়ির আঙিনায় মসজিদে মামা শরিফের সামনে তাঁর মাজার রয়েছে।

যেভাবে  যাওয়া যায়:
দেশের যে কোন প্রান্ত হতে নবীনগর বাসসট্যান্ডে নেমে ইজিবাইক করে এখানে যাওয়া যায়।

আরও পড়ুন- পাকিস্তানি ভিসার আবেদন করতে গিয়ে ১৫ আফগান নিহত

ভয়েস টিভি/ডিএইচ

You may also like