Home সারাদেশ সিন্ডিকেটের দখলে ফেনীর সবজি বাজার, বিপাকে ভোক্তারা

সিন্ডিকেটের দখলে ফেনীর সবজি বাজার, বিপাকে ভোক্তারা

by Newsroom
ফেনীর সবজি বাজার

চাহিদা অনুযায়ী সবজির সরবরাহ থাকলেও আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণে ফেনীর খুচরা বাজারে একই সবজি ৩ দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।  ফলে বিপাকে পড়ছেন খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা।

ফেনী শহরের বড় বাজার, সুলতান মাহমুদ পৌর হকার্স মার্কেট, মহিপাল ও মুক্ত বাজার সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

চড়া দামে সবজি বিক্রির কারণ জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, বিগত এক থেকে দেড় মাস চড়া দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। এর আগে বর্তমানের চেয়ে প্রতি সবজিতে অর্ধেক দাম ছিল। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছু কম হলেও আড়তদাররা সঠিক তদারকী করলে এমন চড়া দামে বিক্রি হতো না।

বেশীরভাগ খুচরা ব্যবসায়ীর অভিযোগ, আড়তদারদের যোগসাজসে কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, টমেটো ১০০-৯০ টাকা, ফুলকপি ৮৫-৯০টাকা, বরবটি ৭৫-৭০ টাকা, বাধাকপি ৫৫-৬০টাকা, করলা ৬০-৫৫ টাকা, বেগুন ৬০-৫৫ টাকা, ঝিঙ্গা ৪৫-৫০ টাকা, মুলা ৪৫-৫০ টাকা , ঢেঁঢ়শ ৫০-৪৫ টাকা, শসিন্দা ৬০-৫৫, শসা (বড়) ৬০-৫৫টাকা, শসা (ছোট) ৩০-৩৫ টাকা, পটল ৬০-৫৫ টাকা, গাজর ৬০-৫৫ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৫০-৪৫ টাকা, প্রতি আঁটি পুঁইশাক ২৫ টাকা, কুমড়ার শাক ২৫ টাকা, লাল শাক ১৫টাকা, চড়া কেজি ৫০-৪৫টাকা, পেঁপে কেজি ৩৫-৩০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও আলু প্রথমে ৩০ টাকা ও পরে ৩৫টাকা সরকার নির্ধারণ করলেও তা না মেনে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকার বেশি। লেবু প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৬-৫টাকা।

খুচরা ব্যবসায়ী মানিক মিয়া জানান, আড়তদাররা তিনরকম দামে কাঁচামাল বিক্রি করায় খুচরা দাম ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। একই বাজারে পাইকারি দাম একই মালের ৭৫ টাকা আবার কোন কোন ব্যবসায়ী ৭০টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। পাশাপাশি দোকান হওয়ায় ক্রয়ের চাইতে বিক্রিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। আড়তদারদের কারনে খুচরা ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। এরইমধ্যে কিছু খুচরা ব্যবসায়ী কাঁচামাল ব্যবসা ছেড়ে অন্য কাজ করছেন বলে তারা জানান।

মুক্ত বাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ী জানান, আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে একই কাঁচামাল ৩ ধরণের দামে বিক্রি করেন। ভোরবেলায় চড়া দাম থাকলেও সকাল ১০টার দিকে কেজিতে ৫-৭টাকা কমে যায়। দুপুরে আরো ১০-১২টাকা কমিয়ে বিক্রি করা হয়। সেই কারনে যেসব খুচরা ব্যবসায়ী ভোর বেলা আড়তদার থেকে চড়া দামে কিনে তা আরো বেশী দামে বিক্রি করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না।

পৌর হকার্স মার্কেটে ব্যবসায়ী মিজান জানান, খুচরা ব্যবসা এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে। কাঁচামালের প্রতিটি ক্যারেটে দুই এক কেজি মাল পঁচা পড়ে। মালের ধরন অনুযায়ী ক্যারেটে ৪-৫ কেজিও পঁচা পড়ে। এতে লাভ তো দূরের কথা লোকসান গুনতে মাথায় হাত।

বড় বাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ী জানান, একসময় আড়তদাররা কমিশনে কাঁচামাল বিক্রি করতো। তখন খুচরা ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনতে হয়নি। এখন প্রতিদিন খুচরা ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

এটির একমাত্র কারন হিসেবে তারা বলেন, আড়তদাররা এখন অতিমাত্রায় ব্যবসা করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। তারা রাতারাতি বড় লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বলে খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে।

মহিপালের খুচরা ব্যবসায়ী হারুন জানান, আড়তদার থেকে যে দামে কাঁচামাল কিনেন সে মালের সাথে সমন্বয় করে বিক্রি করা কস্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কারন কাঁচামালের ধরন অনুযায়ী পঁচা পড়ে ক্যারেটে ৩-৫কেজি তাই বেশী দামে বিক্রি করতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী জানান, কাঁচা বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে আড়তদারদের আন্তরিকতা ছাড়া সম্ভব নয়। আড়তদারা আন্তরিক হলে কাঁচাবাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা যায়।

তবে ফেনী কাঁচামাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, যে সবজি পাইকারি ৫০ টাকা দরে কিনে তা কেন ৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। তারা প্রতি কেজিতে ২০ টাকা লাভ না করে ৫-১০ টাকা লাভ করতে পারেন।

জেলা কাঁচামাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আগে ৫০ ট্রাক মাল আসলেও এখন ৩০ ট্রাক আসে। তাই বেশী দামে সবজি বিক্রি করতে হয়।

তিন দামে সবজি বিক্রির বিষয়ে তিনি জানান, সবজি কাঁচামাল হওয়ায় রাখা যায় না। তাই সময়সাপেক্ষে কম-বেশী দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আগামী ১৫দিনের মধ্যে সবজিরক দাম অর্ধেকে নেমে আসবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ভয়েস টিভি/টিআর

You may also like