Home বিশ্ব ফেরিওয়ালা থেকে সিইও!

ফেরিওয়ালা থেকে সিইও!

by Mesbah Mukul

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে জন্ম নেয়া তরুণ উদ্যোক্তা শ্রীধর বেভারা। সমাজ জীবনে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন তিনি। বিশেষ করে তার ছেলেবেলা কিংবা কিশোর বয়স কেটেছে ভয়াবহ অর্থকষ্টে। দীর্ঘ সময় নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অর্থকষ্টে জীবন পার করেছে তার পরিবার। ঠিকমতো বাসায় রান্না হতো না, দুইবেলা খাবারের জন্য কখনো রাস্তায় বসে বা ঘরে ঘরে গিয়ে দুধ বিক্রি করেছেন তিনি। এ ছাড়া হোটেলে কাজ করেছেন, শহরে মুরগির দোকানে সহযোগীর কাজও করেছেন।

শ্রীধর বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকের কথা। শহরে তাজ রেসিডেন্সি হোটেলে পরিচারকের চাকরির জন্য আমার সাক্ষাৎকার ছিল। কিন্তু পরার মতো কোনো পোশাক ছিল না। এক বন্ধুর কাছ থেকে তার জামাকাপড় আর জুতা ধার করে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম। ওইদিনের অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। তখন হোটেলে দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতাম। মাঝে মধ্যেই সেখানে জনপ্রিয় লোকজন, ক্রিকেটার আর বিদেশিরা আসতেন।’

শ্রীধরের জীবন বহুবার বহুদিকে মোড় নিয়েছে। কিন্তু থেমে থাকেননি এই তরুণ উদ্যোক্তা। তার এই গল্প প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার, অর্জনের। রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন সময় যে ছেলে পণ্য বিক্রি করেছেন, সেই ছেলে এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এক সময় বাড়িতে কাজের চাপ আর কঠিন পরিস্থিতির কারণে পড়াশোনাই বন্ধ হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তিনি নিজের সংকল্প থেকে পিছপা হননি। ১৯৯৮ সালের মার্চে স্নাতক শেষ করেন। চাকরি শুরু করলেও কিছুদিন পর ছেড়ে দেন। কঠোর পরিশ্রম শুরু করে দেন আবার। গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হন তিনি। এর পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কয়েক বছরের মধ্যে কয়েকটি কোম্পানিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয় তার। ১০ বছরের মাথায় পান প্যানাসনিক করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব।

ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি পরামর্শদাতা এই কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতে শাখা রয়েছে। তার লেখা ‘মোমেন্ট অব সিগন্যাল’ ও ‘দ্য রোরিং ল্যাম্বস’ আন্তর্জাতিকভাবে সর্বাধিক বিক্রীত এবং জনপ্রিয় দুটি বই। লিডারশিপ ও বিজনেস নিয়ে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনে লেখালেখি করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (মাদ্রাজ) পরামর্শক। বড় ভাই বেভারা মুরালিধারা রাও সব সময় তাকে সাহায্য করেছেন। উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার সঙ্গে দিয়েছেন পরামর্শ। কিন্তু ১৯৯৭ সালে তার বোন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার পরিবার দরিদ্র্যতার সমুদ্রে পড়ে। এতেও মনোবল হারাননি। বড় ভাইয়ের স্মরণে তিনি দাতব্য কাজের জন্য বিএমআর ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। বড় ভাইয়ের স্মরণে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করেন তিনি। জীবনে অনেক কষ্ট ও উত্থান-পতন দেখে আসা শ্রীধরের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন তার ভাই।

প্রদেশটির ভিজিয়ানাগারাম জেলার ভানতারা গ্রামের শ্রীধর সফলতার চূড়ায় পৌঁছেছেন। তবে সংগ্রাম দিনের কথাগুলো ভুলে যাননি। ওই সময় যারা নানাভাবে তাকে পরামর্শ দিয়েছেন, তাদের প্রতি এখনো পূর্ণ কৃতজ্ঞতা রয়েছে তার। কারণ এসব ব্যক্তিই তাকে তার সহজাত ক্ষমতাটা বুঝতে সাহায্য করেছিলেন।

আরও পড়ুন : চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

ভয়েসটিভি/এমএম

You may also like