ঢাকা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরইমধ্যে রাশেদ চৌধুরীকে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ। এতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সুযোগ হারাতে পারেন তিনি। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন জাতির পিতার এ খুনি।বাংলাদেশে দণ্ডপ্রাপ্ত এ আসামির আশ্রয় আবেদন ১৫ বছর আগে মঞ্জুর করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
শুক্রবার মার্কিন সাময়িকি পলিটিকো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে জানানো হয়, মার্কিন বিচার বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীর আশ্রয়ের বিষয়টি আবারো পর্যলোচনা করছে। এমন তথ্য দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার। এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের সুযোগ হারাতে পারেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সরকার বহু বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। তাই উইলিয়াম বারের সাম্প্রতিক উদ্যোগে দেশটি উৎফুল্ল হবে। জানিয়েছে পত্রিকাটি।
এরআগে রাশেদ চৌধুরীর আশ্রয় পর্যালোচনার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাঠাতে ১৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বোর্ড অব ইমিগ্রেশন আপিলসকে চিঠি দিয়েছেন উইলিয়াম বার। জানা যায়, ১৯৯৬ সালে পর্যটক ভিসায় সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে যান রাশেদ চৌধুরী। দুই মাসের মধ্যেই দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদন করেন। আর প্রায় এক দশক পর মার্কিন আদালত তার আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর করে।
ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে রাশেদ চৌধুরী দাবি করেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি কিছু সহকর্মীর কাছ থেকে জানতে পারেন তারা সামরিক অভ্যুত্থান করতে যাচ্ছেন। খুনি রাশেদের দাবি, অভ্যুত্থানের সময় তাকে প্রধান রেডিও স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সেই সময় অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া অন্য সেনা কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে।
তার এই সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মার্কিন আদালত রায় দেয়, রাশেদ চৌধুরী অভ্যুত্থানে বড় কোনও ভূমিকায় জড়িত ছিলেন না। এর সঙ্গে অভিবাসন আদালতের বিচারকও মেনে নেন, তিনি কোনও হত্যাকাণ্ডে অংশ নেননি। তবে আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির যুক্তি ছিল, সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত থাকায় রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য নন।
পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনা অভ্যুত্থানের কিছুদিন পরেই অংশগ্রহণকারীদের দায়মুক্তির জন্য তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার সংবিধান সংশোধন করে। এরপর প্রায় দুই দশক রাশেদ চৌধুরী বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জয়লাভের পর অভ্যুত্থানকারীদের দায়মুক্তির অধ্যাদেশ বাতিল এবং হত্যাকারীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেন।
৯৬ সালে ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কূটনীতিক ছিলেন রাশেদ চৌধুরী। শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরপরই খুনি রাশেদকে দ্রুত দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু বিচারের ভয়ে তখন তিনি সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। এরপর থেকেই তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
ভয়েস টিভি/পাঠান/খালেক/দেলোয়ার