চীনা প্রতিষ্ঠান ওরিক্স বায়োটেকের মাধ্যমে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মানবদেহের ‘প্লাজমা বিশ্লেষণ প্ল্যান্ট’ নির্মিত হবে। প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ বিদেশি বিনিয়োগে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে।
১ মার্চ সোমবার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে এই প্ল্যান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কাজের উদ্বোধন করা হয়।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চায়নাভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি ‘অরিক্স বায়োটেক প্লাজমা ফ্রাকশানেশন প্ল্যান্ট’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ছে, প্রায় ২৫ একর জমিতে এই প্ল্যান্টের নির্মাণ কাজ ২০২২ সালে শেষ হবে প্রকল্পটি। আর তার পরের বছরই বাংলাদেশেই উৎপাদিত হবে প্রাণঘাতী এইডস ও ক্যান্সারসহ নানা রোগের প্রতিষেধক। ওরিক্স এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি তথা বাংলাদেশে বায়োটেক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার দরজা খুলবে।
করোনা মহামারির মধ্যে গেল আগস্টে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে প্রথমবারের মতো প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার কথা জানানো হয়। ওই ঘোষণার ছয় মাস পর সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে হাইটেক সিটির ব্লক-২ এ মানবদেহের প্লাজমা বিশ্লেষণ প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ শুরু করলো চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওরিক্স বায়োটেক লিমিটেড।
নির্মাণকাজ শেষ হলে ২০টি স্টেশনের মাধ্যমে মানবদেহের প্লাজমা সংগ্রহ করা হবে। বছরে এই প্ল্যান্টে বিশ্লেষণ করা হবে ১২০০ টন প্লাজমা। তৈরি হবে ক্যান্সার, এইডস, সার্স, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ বিভিন্ন রোগের বায়োটেক ওষুধ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওরিক্স বায়োটেক কর্তৃপক্ষ জানায়, এই প্ল্যান্টে গবেষণা ও ওষুধ প্রস্তুতসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের সুযোগ পাবেন দুই হাজার মানুষ।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, অরিক্সের বায়োটেক প্ল্যান্ট স্থাপন একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বায়োটেক প্লাজমা প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করলো এবং রক্তের প্লাজমা বিশ্লেষণ করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ প্রস্তুত করার পথও সুগম হলো। প্রতিবছর প্লাজমা বা থেরাপিওটেক্স আমদানি করতে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয় বাংলাদেশকে। হাইটেক পার্কে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সাশ্রয় হবে আমদানি ব্যয়।
তিনি আরও বলেন, ওরিক্সের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বিশ্বে বায়োটেকনোলজিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা তৈরি হবে। তিনি বায়োটেকনোলজির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্ঞানভিত্তিক ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গঠনে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সফল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারি মোকাবিলায় প্রয়োজনে লকডাউন দিয়েও তুলেনিয়ে জীবন-জীবিকা দুটোই সমন্বয় করেছেন। সুরক্ষা ম্যানেজমেন্ট ভেক্সিনেশন কার্যক্রম সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, সামিট গ্রুপের অরিক্স বায়োটেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী শাকিল, চায়না অরিক্স বায়োটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড বো, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর লিউ জিনহূয়াসহ অন্যরা।
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উৎপাদনে রয়েছে ৫টি প্রতিষ্ঠান।
আরও পড়ুন : ৩১ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
ভয়েস টিভি/এমএইচ