Home সারাদেশ আম্পানের ছোবলে লণ্ডভণ্ড উপকূল, নিহত ১১

আম্পানের ছোবলে লণ্ডভণ্ড উপকূল, নিহত ১১

by Newsroom


ভয়েস রিপোর্ট: প্রবল শক্তি নিয়ে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে ১১ জন নিহত হয়েছে। এরমধ্যে যশোরে দু’জন, পটুয়াখালীর দু’জন, ভোলার দু’জন, পিরোজপুরে একজন, সন্দ্বীপে একজন, রংপুরে একজন ঝিনাইদহে একজন এবং সাতক্ষীরায় একজন নিহত হয়েছে। এছাড়া এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক ঘর-বাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ভেঙে গেছে বেড়িবাধ। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা জানান, আম্পানের মূল অংশ অর্থাৎ কেন্দ্র ভারতের মধ্য দিয়েই যাওয়ার কারণেই প্রথম দিকের ঝড়ের যে তীব্র গতি সেই ধাক্কা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যায়নি।। কিন্তু এর ব্যাস বড় হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের একেবারে কাছাকাছি খুলনা, সাতক্ষীরা অঞ্চলে প্রথমে ঝড়ের তীব্রতা দেখা যায়। একইসঙ্গে প্রায় সারা দেশের ওপর দিকে দমকা হাওয়া এবং বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর আম্পান উপকূল থেকে স্থলভাগের দিকে উঠতে থাকে।
আম্পানের মূল কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গ হয়ে অতিক্রম করতে শুরু করে। এ সময় সাতক্ষীরা, খুলনাসহ পশ্চিম উপকূলে ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস বয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে জোয়ার শুরু হলে ১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়। এতে প্লাবিত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা।
এবারও সুন্দরবন ঢাল হয়ে দাঁড়ানোয় উপকূলীয় জনপদে জীবন ও সম্পদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়েছে, বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অনেক বাঁধ। গাছপালা উপড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে এক ঘণ্টার মধ্যেই উপকূলীয় এলাকার ৫১ লাখের মতো গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন বলেন, আম্পানের প্রভাবে তাদের উপকূলীয় ২২টি সমিতিতে আংশিক বা পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছে। এতে পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও বরিশালের কিছু অংশসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর প্রায় ৫০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ওজোপাডিকো) লাখখানেক গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, রাতভর ঝড় হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। এসময় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ মে) আকাশ মেঘলা থাকতে পারে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে মোংলার পশুর নদীতে ট্যুরিস্ট লঞ্চ ডুবে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাসহ কাঁচা ঘরবাড়ী ও গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির খবরও পাওয়া গেছে। প্লাবিত হয়েছে চিংড়ি ঘের। পশুর চ্যানেলের তীরে কানাইনগর, কলাতলা, সুন্দরতলাসহ বিভিন্ন জায়গার বেরিবাঁধের কয়েকটি স্থান ধসে গেছে।
সুন্দরবনসহ খুলনাতে বহু কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি ধসে পড়ে গেছে। উপড়ে গেছে অনেক গাছ ও বিদ্যুতের খুটি। গাছ পড়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় নদীতে জোয়ার থাকায় কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপের নিম্নাঞ্চলের বেরিবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে।
সাতক্ষীরা শহরের সংগীতা মোড় এলাকায় আম কুড়াতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বাঁধ ভেঙে ১৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজারে ঘুর্ণিঝড়ের আগেই সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে জোয়ারের পানি বেড়ে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফ উপজেলার ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় বেরিবাধের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে গেছে। আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক ফসলি জমি ও মাছের খামার। নষ্ট হয়েছে পানের বরজ।
বুধবার (২০মে) সন্ধ্যায় বাংলাদেশের উপকূলের একেবারেই খুব কাছ দিয়ে ভারতের আছড়ে পড়ে সুপার সাইক্লোন আম্পান। যদিও মূল অংশ ভারতে ছিল কিন্তু এই ঝড়ের ব্যাস ছিল প্রায় ৫০০ কিলোমিটারের মতো। ফলে তীব্র গতির এই ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হয় উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা অঞ্চল দিয়ে। এর প্রভাবে বুধবার সকাল থেকেই ঢাকার আকাশ ছিল মেঘলা। সন্ধ্যায় ঝড় আসার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের অন্য জেলাগুলোর মতো ঢাকাও শুরু হয় দমকা হাওয়া আর বৃষ্টি। বৃষ্টি কখনও মুষলধারে আবার কখনও কম ছিল। তবে দমকা বাতাসের দাপট এত বেশি ছিল যে রাজধানীবাসীর অনেকেই ধরে নেন আম্পান ঢাকায় চলে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝড়ের তাণ্ডবে অনেক এলাকায় গাছ, গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। গাছ পড়ে কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঢাকার বাইরের তিন জেলায় চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও ঢাকার এমন কোনও ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে দমকা বাতাসের ভয়ে অনেকেই রাতভর আতঙ্কে কাটিয়েছে।

You may also like