Home বিশ্ব বারাকা : আবারো কি অশান্ত হবে মধ্যপ্রাচ্য

বারাকা : আবারো কি অশান্ত হবে মধ্যপ্রাচ্য

by Newsroom

মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারা বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ান প্রযুক্তিতে তৈরি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫ দশমিক ৬ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এ বিদ্যুতে মিটবে দেশের ২৫ শতাংশ চাহিদা। কিন্তু আমিরাতের বারাকা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর বিষয়টি বাঁকা চোখে দেখছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। তাদের অভিযোগ, আমিরাতের মূল লক্ষ্যই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি।

মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম দেশ, যারা মঙ্গলগ্রহে উদেশ্যে অনুসন্ধানী রকেট পাঠিয়েছে। আর মাত্র ১১ দিন পরই তারা উদ্বোধন করলো প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর আগে ২০১২ সালে দুই হাজার কোটি ডলারের ‘বারাকা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের’ কাজ শুরু করে। সেই থেকে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির যৌক্তিকতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা।

তবে, শুরু থেকেই আমিরাত জোর দিয়ে বলছে, এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে প্রতিবেশীদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। শুধুমাত্র তেল-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতেই এটি তৈরি করা হয়েছে। কারণ এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম পরিশোধন করা হবে না। এ বিষয়ে তারা জাতিসংঘ আণবিক সংস্থার কাছে অঙ্গিকারও করেছে তারা।

কিন্তু আমিরাতের এমন কথায় ভরসা নেই প্রতিবেশী কাতার ও ইরান। তাদের অভিযোগ, দেশটির মূল লক্ষ্যই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি। যুক্তি হিসেবে তারা বলছে, উপসাগরীয় এই দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে যাচ্ছে। এর প্রমাণ লিবিয়া ও ইয়েমেনের সংঘর্ষ।

আমিরাতের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি বন্ধে এক বছর আগেই জাতিসংঘ আণবিক সংস্থার কাছে লিখিত আপত্তি দিয়েছিলো কাতার। ওই চিঠিতে তারা বারাকা পারমাণবিক স্থাপনাকে আঞ্চলিক শান্তি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে দাবি করে। দেশটি আরো দাবি করে, যে কোনো ধরণের দুর্ঘটনা হলে ওই কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় উপাদান মাত্র ১৩ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানী দোহায় চলে আসবে।

তবে ১ আগস্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর এখনো কাতার বা ইরান আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। কিন্তু তারা যে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, এই প্রকল্প মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সুযোগ করে দিতে পারে। সেইসাথে অশান্ত হয়ে উঠতে পারে গোটা উপসাররীয় অঞ্চল।

আমিরাতের শীর্ষ নেতারা এরইমধ্যে বেশ কয়েকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ইউরেনিয়াম শোধনের কোনো পরিকল্পনা বা সামরিক অভিলাষ তাদের নেই। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে মেরুকরণের রাজনীতি দিন দিন যেভাবে জোরদার হচ্ছে তাতে তাদের প্রতিশুতিতে সন্তুষ্ট নয় প্রতিবেশীরা।
প্রতিবেশী দেশগুলো বলছে, উইন্ড বা সোলার এনার্জি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে আমিরাতের। কিন্তু সেখানে এত টাকা খরচ আর প্রতিকুল ভূ-রাজনৈতিক আবহাওয়া তৈরি করে কেন পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় দেশটি। তাদের মতে নিশ্চয় এর পেছনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্য রয়েছে।

এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, কতোটা নিরাপদ বারাকা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি এলাকায় সংঘাত চলায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ওপর হামলার ঝুঁকি রয়েছে। তাই কেন্দ্রটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা জোরালো তা নিয়েও চলছে বিতর্ক। এক হিসেবে দেখানো হয়, মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক স্থাপনায় এ পর্যন্ত ১৩টি হামলা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও রয়েছে।

সৌদি আরবের ওই হামলায় প্রমাণ হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোবেশ ঝুকিতে আছে। আর আবুধাবির রুয়াইস শহর থেকে ৫৩ কিলোমিটার দুরে বারাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি তৈরির সময় ২০১৭ সালে হামলা চালানোর দাবি করেছিল ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা।

এদিকে শুধু আমিরাতই নয়, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে মাঠে নেমেছে সৌদি আরব, মিশর, এমনকি জর্ডানেও। এরইমধ্যে সৌদি আরব কয়েকটি প্রস্তাব বিবেচনা করছে। আর মিশর চারটি স্থাপনা তৈরির জন্য চুক্তি করেছে রাশিয়ার সাথে।
বিশ্লেষকদের মতে, পরোক্ষভাবে মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক প্রযুক্তি বিস্তারে নিরবে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, মার্কিন প্রতিরক্ষা ও পারমাণবিক প্রযুক্তি শিল্প এখন মধ্যপ্রাচ্যকে লোভনীয় বাজার হিসাবে বিবেচনা করছে। যার প্রধান ক্রেতা ইরানের চিরশত্রু সৌদি আরব।

লেখক : ফেরদৌস মামুন, সাংবাদিক

You may also like