Home জাতীয় ‘খিচুড়ি রান্নার’ জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই

‘খিচুড়ি রান্নার’ জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই

by Shohag Ferdaus
বিকল্প নেই

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের এক হাজার কর্মকর্তাকে খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ নিয়ে গতকাল সোমবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এনিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার গণমাধ্যমে কথা বলেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন।

তিনি বলেন, মিড ডে মিল চালুর ক্ষেত্রে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে অভিজ্ঞতা থাকার কথা সেটা নেই। এটা একটা নতুন সিস্টেম। ভারতে যেখানে চালু আছে সেখানে কিচেন করা আছে, হাইজেন আছে। সেই জায়গাগুলো অর্জন করার জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। সেই কারণে আমি মনে করছি যে এটা কোনো অপচয় নয়, এটা বরং আমাদের সক্ষমতা, দক্ষতা, ইফিসিয়েন্সিকে বাড়াবে।

সচিব বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় স্কুল ফিডিং পলিসি অনুমোদিত হয়েছে। এ পলিসির ভিত্তিতে ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করেছি। বর্তমানে প্রকল্পটি ১০৪টি উপজেলায়, সেটি ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পর্যায়ক্রমে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু করা হবে। সেই নির্বাচনী ইশতেহারকে সামনে রেখে আমরা ২০২৩ সাল পর্যন্ত একটা প্রকল্প প্রণয়ন করে দাখিল করেছি।’

এ প্রকল্পে দু’টি বিষয় আছে জানিয়ে সচিব আরও বলেন, বাচ্চাদের আমরা দুপুরে খাবার দেব। খাবারটা হবে দুই ধরনের। তিনদিন বিস্কুট এবং তিনদিন রান্না করা খাবার। বর্তমানে ছয় দিন বিস্কুট দেয়া হয়। রান্না করা খাবারের মধ্যে খিচুড়ি সবচেয়ে প্রোটিন সমৃদ্ধ।

আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘আর যারা এটি বাস্তবায়ন করবেন- আমাদের প্রধান শিক্ষক, কর্মকর্তা, যারা মাঠ পর্যায়ে আছেন তাদের সক্ষমতার জন্য প্রত্যেকটা প্রকল্পে দেশে এবং বিদেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছি। প্রত্যেক প্রকল্পে এ ধরনের একটা কম্পোনেন্ট থাকে। এ কম্পোনেন্টে আছে যে এক হাজার কর্মকর্তাকে বিভিন্ন দেশে (যেসব দেশে স্কুল ফিডিং চালু আছে) পাঠানোর। যেমন আমাদের প্রতিমন্ত্রী ও এডিশনাল সেক্রেটারি এবং আমাদের যাওয়ার কথা ছিল কেরালা, দিল্লিতে।’

সচিব বলেন, কীভাবে বিভিন্ন দেশে মিড ডে মিল চালু আছে, কীভাবে তারা ম্যানেজ করছে সেই বিষয়গুলোকে অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য একটা কম্পোনেন্ট আছে বিদেশে কর্মকর্তাদের যেয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা।

তিনি বলেন, খিচুড়ি কীভাবে রান্না করে- সেটার জন্য কিন্তু আমরা বিদেশে লোক পাঠাচ্ছি না। এ প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন হয়নি। গতকাল পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যের সভাপতিত্বে এটার পিইসি মিটিং ছিল। মিটিংয়ে সেটির বিষয়ে আমাদের কাছে কিছু কোয়ারি করেছে, সেগুলোর আমরা জবাব দেব। জবাবের পরে যদি তারা সন্তুষ্ট হয় তাহলে একনেকে উত্থাপিত হবে। একনেকে অনুমোদিত হলে জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়ন করতে পারব।

‘সুতরাং আমরা খিছুড়ি রান্না করার জন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বিদেশি পাঠাচ্ছি না। আমরা টাকাও চাই না এটার জন্য, কোনো একটা পত্রিকা লিখেছে যে ৫/১০ কোটি টাকা চেয়েছি, নো।’

গণশিক্ষা সচিব বলেন, এটা একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। ৬৫ হাজার ৬২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ‘মিড ডে মিল’ চালু করতে হবে। কীভাবে ম্যানেজ করব, সেই ম্যানেজমেন্ট দেখার জন্য, যেসব উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে এ ব্যবস্থা চালু আছে সেই ব্যবস্থা দেখার জন্য এবং দেশে-বিদেশে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য কম্পোনেন্ট রেখেছি সক্ষমতা অর্জনের জন্য।

যারা চালু করেছে তাদের নিয়ে এসে প্রশিক্ষণ করা যাচ্ছে না কেন- প্রশ্নে সচিব বলেন, যেসব দেশ চালু করেছে সেখানে অভিজ্ঞতাটা দেখার থাকে, এটা তো একদিনে হয়নি। তারা অনেক দিন ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করে কীভাবে পারফেক্টলি কাজ করছে। সেই অভিজ্ঞতা অর্জনের একটা প্রস্তাব, এটা পরিকল্পনা কমিশন এবং একনেক অনুমোদন না করলে থাকবে না।

সচিব বলেন, ভারত নিশ্চয় কোনো দেশকে ফলো করেছে, তাই না। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনো কোনো দেশকে তো আমরা ফলো করি।

এক হাজার কর্মকর্তাকে কেন পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে- এ বিষয়ে সচিব বলেন, আমাদের তো কত হাজার কর্মকর্তা, ৫০৯টি থানা থেকে একজন করে গেলেও তো ৫০৯ জন হয়, তাই না?

তিনি বলেন, কাজগুলো ফিল্ড লেবেলের কর্মকর্তারা বাস্তবায়ন করবেন, পিডিপি-৪ এ প্রত্যেক ব্যাচে ২০-২৫ জন করে পাঠাই। তারা সরেজমিনে গিয়ে যেটা দেখে এসে ইমপ্লিমেন্ট করবে, কীভাবে তারা স্কুল পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে। সেটার একটা ইমপ্যাক্ট হবে। একটা ভিডিও বা হ্যান্ডআউট ধরিয়ে দেব, সেটার থেকে সরেজমিনে দেখে আসার অনেক বিষয় আছে।

সচিব দাবি করে বলেন, যেখানে রান্না করা খাবার দিচ্ছি সেখানে ঝরে পড়ার হার একদম কমে গেছে, ৩ শতাংশের নিচে চলে এসেছে। বাচ্চাদের পুষ্টির পরিমাণ, ভর্তির হার ও উপস্থিতির হার বেড়েছে।

সচিব জানান, দারিদ্র্য পীড়িত ১০৪টি উপজেলায় স্কুল ফিডিং পাইলট প্রকল্প, সেখানে আমরা বিস্কুট দিচ্ছি। ১৬টি উপজেলায় রান্না করা খাবার চালু আছে।

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like