Home সারাদেশ ময়মনসিংহে রাতে ক্ষুধার্তদের জন্যে বিনামূল্যে বিরিয়ানি

ময়মনসিংহে রাতে ক্ষুধার্তদের জন্যে বিনামূল্যে বিরিয়ানি

by Newsroom
বিনামূল্যে বিরিয়ানি

ময়মনসিংহ রেলস্টেশন, গাঙ্গিনাড়পাড়, নতুন বাজার, টাউনহল, চরপাড়া ও ব্রীজ মোড়ের আশপাশে প্রতিদিন রাতে রাস্তার পাশে ছিন্নমূল কিছু অসহায় মানুষদের শুয়ে থাকতে দেখা যায় ।

এ মানুষগুলো দু’মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে সারাদিন পাড়ি দিতে পারলেই মহাখুশি তারা। অনেকে রাতে গায়ে চাদর, কাঁথা কিংবা পুরাতন কম্বল জড়িয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় শুয়ে থাকে।

‘বিরিয়ানি’ তাদের কাছে স্বপ্নের খাবার। কারণ যখন তখন মন চাইলেও খেতে পারে না। হোটেল, রেস্তোরাঁর দিকে তাকিয়ে মনকে তৃপ্তি দিয়ে অভ্যাস আছে তাদের। তবে কারো খাবার ছিনিয়ে খাওয়ার ঘটনা আজও কেউ দেখেনি।

ময়মনসিংহের অলিগলিতে আর নামে বেনামে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সারাদিন রেস্টুরেন্টের খাবারগুলো বিক্রির পর অনেক ভালো খাবার উচ্ছিষ্ট থাকে। এগুলো রাতে ফেলে দেয়া হয়। খাবারের মধ্যে শুধু ভালো ‘বিরিয়ানি’ ছিন্নমূল মানুষদের খাইয়ে আত্মতৃপ্তি দেয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ (ভিবিডি) ময়মনসিংহের স্বেচ্ছাসেবকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  এরইমধ্যে  ভালো ‘বিরিয়ানি’ রেষ্টুরেন্টগুলোতে তাদের স্বেচ্ছাসেবক সদস্যদের মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে। যেই রেস্টুরেন্টে ‘বিরিয়ানি’ অবশিষ্ট থাকবে সেই রেস্টুরেন্টের মালিক কিংবা ম্যানেজার রাতে ফোন করে জানিয়ে দেবে আজকে এই পরিমাণ বিরিয়ানি অবশিষ্ট আছে। রাত যতই হোকনা কেন স্বেচ্ছাসেবকরা এসে প্যাকেটসহ ‘বিরিয়ানি’ নিয়ে যাচ্ছে।

ভলান্টিয়াররা রাতে বিরিয়ানির ব্যাগ হাতে ঝুলিয়ে রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছিন্নমূল অসহায় মানুষদের খুঁজে খুঁজে ‘বিরিয়ানি’ তুলে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হয় এই সংগঠনের সদস্য নূর আলম নাহিদের সথে।  তিনি জানান, অসহায় এসব গরীব মানুষেরা ঘোমানোর আগে ‘বিরিয়ানি’ পেয়ে অনেক খুশী হয়  কারো ফোঁকলা দাতের হাসি, কারও গাল ভর্তি হাসি’। আবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় অনেকে। মনের ভিতর অনেক প্রশান্তি খুঁঁজে পাই।

শাহাদাত হোসেন নামের আরেক সদস্য বলেন, রাতে রেস্টুরেন্ট থেকে ‘বিরিয়ানি’ সংগ্রহ করে রাস্তায় ঘুরে ক্ষুধার্ত মানুষের হাতে তুলে দেয়া কঠিন একটি কাজ। আসলে এই কাজটি করতে অনেক ধৈর্য থাকতে হয়।

তিনি বলেন, তবে মন থেকে অসহায়দের সাহায্য করে অভ্যাস করতে পারলেই কঠিন কাজটিও সহজ হয়ে যায়। বিত্তবানরা যদি ছিন্নমূল, ক্ষুধার্ত, অসহায় মানুষদের কথা একটু চিন্তা করতো, তাহলে সমাজে অসহায়রাও স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারতো।

জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটি ময়মনসিংহের সভাপতি শহিদুল ইসলাম (শহীদ) জানান, রাতের আঁধারে রাস্তায় ঘুরে ক্ষুধার্তদের খাবার দেয়া মহৎ মানুষ ছাড়া কেউ পারবে না। এর মাধ্যমে তরুণরা মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে’। এমন কাজটি আমাদের সবার করা প্রয়োজন। তরুন স্বেচ্ছাসেবীদের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

এ বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি ডাঃ রবিউল ইসলাম সাকিব বলেন, গত ৫ নভেম্বর ‘বিরিয়ানি’ সংগ্রহ কার্যক্রমের প্রথম রাতেই নগরীর সালতানাত রেস্টুরেন্ট ৩টি বাড়তি বিরিয়ানির প্যাকেট দিয়েছেন। এর পরেরদিন রাত সাড়ে ১২ টার দিকে চরপাড়া এলাকার ‘হাজ্বী বিরিয়ানি’ থেকে ফোন করে ১৩ টি বিরিয়ানির প্যাকেট দেয়। এরপর চরপাড়া এলাকার ‘নবাব বিরিয়ানি’ ৯ প্যাকেট, নগরীর নতুন বাজার এলাকার ‘আল্লাহর দান হাজ্বী বিরিয়ানি’ ১০ প্যাকেট তেহারী দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, আরও বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট সওয়াবের আশায় ভালো থাকা ‘বিরিয়ানি’ ক্ষুধার্ত মানুষের দিতে রাজি হয়েছে।আমাদের তরুণ সদস্যরা মনের আনন্দে স্বেচ্ছাশ্রমকে ভালোবাসে খাবার পৌঁছে দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

ভয়েস টিভি/ডিএইচ

You may also like