Home সারাদেশ বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা পেল তিন শতাধিক মানুষ

বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা পেল তিন শতাধিক মানুষ

by Newsroom
বিনামূল্যে

ফোন কল পেয়েই ফেরিওয়ালার মতো ফেনীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে অক্সিজেন নিয়ে রোগীর বাড়ি ছুটছেন কয়েকজন তরুণ। কনকনে শীতের মধ্যেও থেমে নেই তারা।

এদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তাদের সবার বাড়ি ফেনী জেলায় হওয়ায় স্বল্প সময়েই মুমুর্ষ রোগীর বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছেন তারা।

‘একটি নতুন ভোরের প্রতীক্ষা’ শ্লোগানে ৩ সেপ্টেম্বর মাত্র তিনটি সিলিন্ডার দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। পরে যুক্ত হয় আরও সাতটি। ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ নামে এ মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক স্বাধীনতা, সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী।

জেলায় অক্সিজেন সেবার সমন্বয়ক ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ফেনীর (ডুসাফ) সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম জানান, বিগত পাঁচ মাসে তাদের থেকে সেবা নিয়েছেন ৩৪২ জন। শুরুতে শুধু করোনা রোগীর জন্যে সেবা চালু থাকলেও বর্তমানে যেকোনো রোগী চিকিৎসকের পরামর্শপত্র দেখিয়ে এই সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।

জেলায় ১১ জন শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবী হয়ে কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন। তারা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ফেনী জেলার যেকোন এলাকা থেকে ০১৫১৫৬০৬৪৮৮/ ০১৮১৬২৭৭৭১৭/ ০১৭৪৭৮৮২২৬০/ ০১৮৪৩১২৩৬৭২ নাম্বারে ফোন করলে তাৎক্ষণিক রোগীর বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌছে দেয়া হচ্ছে।

সহকারি সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন, চুয়েট শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শুভ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এনায়েত তাহসিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ শোয়াইব চৌধুরী, তানজিলুল ইসলাম, শাহরিয়ার আল হোসাইন সাইমুন, আশরাফুল ইসলাম আশিক, শ ম রিদওয়ানুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম ইসতি, শাহ নেওয়াজ বাবু ও নওফেল ইমতিয়াজ।

উদ্যোক্তারা জানান, ২৫ জুন রাজধানীতে শুরু হয় এই সেবা। এরপর ২৫ ও ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহেও শুরু করে তারা। ৬ আগস্ট শুরু হয় কুরিয়ারের মাধ্যমে সারা দেশে আক্রান্ত রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ কার্যক্রম। ৩ সেপ্টেম্বর ফেনীর মাধ্যমে শুরু হয় জেলাভিত্তিক কার্যক্রম।

এরপর ৮ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর ও ২৬ নভেম্বর শুরু হয় বগুড়া জেলায়। বর্তমানে কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ এবং খুলনায় কার্যক্রম চালু প্রক্রিয়াধীন।

ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান নায়েফও জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা নিয়েছেন। তিনি জানান, আমার দাদু হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় অক্সিজেন প্রদানে চিকিৎসক পরামর্শ দেন। আমি এক বড় ভাইয়ের মধ্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবাকে খবর দেয়। তারা রাতেই দাগনভূঞা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে আমার বাড়িতে অক্সিজেন দিয়ে যায়। সুস্থ হওয়া পর্যন্ত বিনামূল্যের এই সেবা গ্রহণ করেছি। এটা অনেক মহৎ কাজ। কয়েকজন ছাত্রের এমন উদ্যোগে আমি অভিভূত।

সাদ বিন কাদের চৌধুরী জানান, ফেনী জেলায় ১০টি সিলিন্ডার দিয়ে বিনামূল্যে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবকরাও নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছেন। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছে। আমরা প্রতি মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আর্থিক বিবরণীর সম্পূর্ণ হিসাব দিয়ে থাকি।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সাদ আরও বলেন, আমাদের জন্যে কাজটি সহজ ছিল না। আমরা যখন শুরু করি তখন পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিলো। মানুষের মাঝে করোনার মারাত্মক ভীতি ছিল।

কোনো বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে গেলে আশেপাশের মানুষের হাজারও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। এমনও হয়েছে অক্সিজেন নিয়ে গেলে ছেলে সামনে আসেনি। তার বাবাকে আমরাই অক্সিজেন সেট করে দিয়ে এসেছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর ছাড়াও তিনটি জেলায় আমাদের কার্যক্রম চালু রয়েছে। আরও তিনটি জেলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও ঢাকা থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে সারাদেশে এই সেবা আমরা চলমান রেখেছি। স্বেচ্ছাসেবকদের আন্তরিকতায় এই কাজটি পরিচালনায় অনেক সহজ হয়েছে। জীবন এবং পরিবারকে ঝুঁকির মধ্যে রেখে তারা এই মানবিক কাজে আমাদের সঙ্গী হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আক্রান্ত রোগী ও তার পরিবারের দোয়া ও ভালোবাসা আমাদের কাজ করতে অনুপ্রাণিত করছে। আসলে মানুষের জন্যে কাজ করার সময় ও সুযোগ সবসময় আসে না। যতদিন এই পরিস্থিতি চলবে, ততদিন আমরা এই কার্যক্রম চলমান রাখবো।

আরও পড়ুন : ৩০ মিনিটে ৯ দিনের অক্সিজেন বিল!

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like