Home ভিডিও সংবাদ বিশ্বের বিস্ময় টাঙ্গুয়ার হাওর

বিশ্বের বিস্ময় টাঙ্গুয়ার হাওর

by Amir Shohel

সুনামগঞ্জ জেলার অন্যতম পর্যটন সম্ভাবনাময় জনপদ তাহিরপুর। জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত অপরিমেয় সৌন্দর্যের লীলাভূমি তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম জলমহালগুলোর অন্যতম। আর এর যে সৌন্দর্য, চোখে না দেখলে ঠিক বোঝা যাবে না। এটি আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ রামসার সাইট’। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধরমপাশা উপজেলার ৯ হাজার ৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের কোলঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলাভূমি।

ভারতের মেঘালয়ের পাদদেশে সারি সারি হিজল-করচ গাছের শোভা আর পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে টাঙ্গুয়ার হাওর। মাছ, পাখিসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভায়শ্রম এটি। এর আয়াতন প্রায় ২০ হাজার একর।

এছাড়াও তাহিরপুরে রয়েছে যাদুকাটা নদী, বারেক টিলা, সীমান্তের ওপারে মেঘালয় পাহাড় ও নীলাদ্রি লেকের মতো মনোরম দর্শনীয় স্থান। এর পাশাপাশি নতুন পর্যটন কেন্দ্র লাল শাপলার বিকি বিলও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ক্রমে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

যান্ত্রিক কোলাহল থেকে মুক্ত নির্জন গাছের ছায়া পেতে টাঙ্গুয়ার হাওরের বিকল্প নেই। সবুজের সমারোহ, দিগন্ত বিস্তৃত সাদা মেঘের খেলা, ছোট বড় পাথর ছড়ানো চারপাশ, চারদিকে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। এই অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতেই হবে পর্যটকদের।

সীমান্ত ঘেষা যাদুকাটা নদীর ছল ছল স্বচ্ছ পানি দেখে মনে আনন্দ না জেগে উঠার উপায় নেই। উঁচু নিচু বারেক টিলার উপর দাঁড়িয়ে যাদুকাটা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এর দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার। এ নদী থেকে ১২ মাসই কয়েক হাজারেরও বেশি পাথরশ্রমিক পরিবার জীবিকার তাগিদে নদী থেকে বালু, নুড়ি পাথর আহরণ করে। আহরিত বালু ও পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগায়।

বর্ষায় পাহাড়ি নদী যাদুকাটার বুকে জলের স্রোতধারা আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়ায় দেখা যায় ধু-ধু বালুচর। ভারতের সারি সারি উঁচু-নিচু মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ও বারেক টিলার বুকে ঘন সবুজের সমারোহ পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়।ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে প্রবাহিত তাহিরপুরের সীমান্ত নদী যাদুকাটার একদিকে ভারত সীমান্তের উঁচু সবুজ পাহাড়, মধ্যে ছোট ছোট টিলা আর নিচে শান্ত স্বচ্ছ জলরাশি। নদীটির পাশেই রয়েছে তাহিরপুরের আরেক পর্যটন স্থান বারেকের টিলা। বারেকের টিলার পাশ দিয়ে প্রবহমান যাদুকাটা নদীর ধু-ধু বালু আর চকচকে স্বচ্ছ নীলাভ পানি আচ্ছন্ন করবে যে কোনো ভ্রমণপিয়াসীকে।

হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করে সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া এবং তিব্বতের হিমশীতলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে এসব পাখিরা বংশপরম্পরায় পাড়ি জমাচ্ছে পাখির অভয়ারণ্য হিসাবে খ্যাত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে। ডিসেম্বরেই ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করে অতিথি পাখি। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে টাঙ্গুয়ার হাওর। শীতকালীন ঋতুতে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ বরফে ঢাকা পড়ে। তাই অতিথি পাখিগুলো বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

অতিথি পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বালুহাঁস, বিদেশী পানকৌড়ি, সরালি, মৌলভীহাঁস, পিয়ারি, লেমজা, মেগিহাস, হালিম পাখি, সিংলাই, রামকুড়া, মুরাল, গাঙ্গচিল, জল কবুতর, কালি ডাহুক, বক, শালিকসহ বিভিন্ন জাতের অতিথি পাখি শীতের মৌসুমেই এসে থাকে। এছাড়াও তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওর, শনির হাওরসহ ছোট-বড় বেশ কয়েকটি হাওরে অতিথি পাখির কোলাহলে মুখরিত থাকে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসব অতিথি পাখির আগমনের হয় সবচেয়ে বেশি। মার্চ ও এপ্রিল রেশমি শীতের ছোঁয়া গায়ে লাগিয়ে আবারো ডানায় ভর দিয়ে হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করে পাড়ি দেয় নিজ গন্তব্যে।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like