Home সারাদেশ বেগমগঞ্জে স্কুল কমিটির বিরুদ্ধে গণহারে বেতন ফি আদায়ের অভিযোগ

বেগমগঞ্জে স্কুল কমিটির বিরুদ্ধে গণহারে বেতন ফি আদায়ের অভিযোগ

by Newsroom

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে করোনাকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বাবুপুর জিরতলী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য বিধি না মেনে একসঙ্গে জড়ো করে বেতন ফি বিষয়ে বিফ্রিং দিচ্ছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সারওয়ার ও এডহক কমিটির আহবায়ক মো. মোশারফ হোসেন। পথেও অনেক ছাত্র-ছাত্রীর হাতে মাসিক বেতন ফি প্রদানের রশিদ দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা জানায়, শিক্ষকরা তাদের এই রশিদ দিয়ে বলেছে বাড়ি থেকে বেতন ফি এনে স্কুলে জমা দিতে। বেতন না দিলে তাদেরকে আগামী বছর পরবর্তী শ্রেণীতে উর্ত্তীণ করা হবে না। তাই তারা বেতন ফি জমা দিতে বাধ্য হচ্ছে। তবে বেতন ফি না দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো আদেশ আছে কিনা সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। শিক্ষকরা বলছেন দিতে, এজন্য তারা দিচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, বেগমগঞ্জ উপজেলার অন্যতম একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই বাবুপুর জিরতীল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ৯০০ ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত আছে। করোনাভাইরাসের কারণে গত আট মাস সারা দেশের ন্যায় বাবুপুর জিরতলী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ও বন্ধ রয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ করে গত ৩১ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পুরো সপ্তাহ জুড়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এডহক কমিটির আহবায়ক মোশারফ হোসেন অনলাইন ক্লাসের ঘোষণা দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিত করে নাম ও রোল নং লিখে বেতন ফি’র রশিদ হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। তারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ২০০ টাকা করে দশ বা বারো মাসের বেতন ফি জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। অন্যথায় তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে উর্ত্তীণ করা হবে না বলেও জানিয়ে দেন।

অভিভাবকরা আরো জানান, করোনার কারণে তাদের কারোরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালে শিক্ষার্থীদের বেতন ফি দিতে হবে না। সেখানে কিভাবে তারা বেতন ফি নিচ্ছেন। এ অনিয়মের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন অভিভাবকরা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সারওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সবার কাছ থেকে বাধ্যতামূলক বেতন ফি নিচ্ছি না। শুধু যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল তাদের কাছ থেকে নিচ্ছি। আমরা অসচ্ছল, প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন ফি মওকুফ করে দিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এ রকম কোনো নির্দেশনার বিষয় আমার জানা নেই।

ম্যানেজিং (এডহক) কমিটির আহবায়ক মো. মোশারফ হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের নানা ধরনের ব্যয় নির্বাহে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। একে তো করোনাকাল আবার স্কুলও বন্ধ। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে যাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো, শুধু তাদের কাছ থেকে বেতন ফি নেয়া হচ্ছে ।

হুমকির বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে মোশারফ হোসেন বলেন, কোনো অভিভাবক বা শিক্ষার্থী সামনে এসে এ কথা বলতে পারবে না। এগুলো কিছু লোকজন বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করার জন্যে প্রচার করছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন জানান, বিষয়টি আমিও অনেক অভিভাবকের কাছ থেকে শুনেছি। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বেতন ফি নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এখতিয়ার।

আরও পড়ুন: কেন্দুয়া সরকারি কলেজে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের অভিযোগ

তবে আমি যতটুকু জানি কোনো প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং (এডহক) কমিটির প্রধান কোনো ধরনের মৌলিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। বর্তমান নির্বাচনকালীন এডহক কমিটির আহবায়ক মোশারফ হোসেন কিভাবে বেতন ফি আদায় বিষয়ে প্রধান শিক্ষকসহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা তারাই ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গাউসুল আজম জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে করোনাকলে যেহেতু স্কুলের কোনো আয়ের খাত নেই। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী বেতন ফি দিয়ে স্কুলকে সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে। এর বাহিরে কেউ যদি জোরপূর্বক বা হুমকি প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গণহারে বেতন ফি আদায়ের লিখিত অভিযোগ পেলে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভয়েস টিভি/ এমএইচ

You may also like