ভারত থেকে উপহার হিসেবে কোভিড-১৯ এর টিকা ২১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশে আসবে। প্রথম চালানে ২০ লাখ টিকা পাঠাচ্ছে ভারত সরকার। এসব তথ্য কূটনৈতিক ও বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী ভারত থেকে টিকা আসবে, সেটা আজ বুধবারও হতে পারে, কাল বৃহস্পতিবারও হতে পারে।
টিকার চালানটি এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছানোর কথা বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান। একটি কূটনৈতিক সূত্রও খবরটি নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, আজ সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের টিকার বিষয়ে ব্রিফিং করা হবে।
তবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এই টিকা এখনই দেশে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হবে না, মজুদ রাখা হবে। উপহারের টিকার বিষয়ে আগে থেকে তেমন কোনো পরিকল্পনা বা প্রস্তুতিই ছিল না স্বাস্থ্য বিভাগের। আগামী পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যেই বেক্সিমকোর মাধ্যমে সরকারের কেনা টিকার যে চালান আসবে, সেগুলোর সঙ্গে একযোগে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই মাঠপর্যায়ে এই টিকা দেওয়া শুরু হবে।
পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে, ২৬-৩০ জানুয়ারির মধ্যে প্রথমে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের কয়েকজন ক্লিনার ও নার্সকে; এই হাসপাতালেই দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা শুরু হয়। একই সঙ্গে মাঠপর্যায়ের আরো একাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সীমিত আকারে টিকা দেওয়া হবে। এরপর তাঁদের শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেই পর্যবেক্ষণের ফলাফল দেখে সপ্তাহখানেক পর ঢাকাসহ দেশের অপেক্ষাকৃত বেশি আক্রান্ত এলাকা বলে বিবেচিত আট-দশটি জেলায় টিকাদান শুরু হবে।
চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে যে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালক বা কর্মকর্তাদের আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বৈঠকে ডাকা হয়েছে। বৈঠক থেকেই তাঁদের চূড়ান্ত নির্দেশনা দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার টিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে টিকা প্রয়োগ ও সংরক্ষণসহ পূর্ববর্তী পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের পরিচালক ডা. সারওয়ার উল আলম বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের কাছ থেকে তালিকা নিয়েছে। বুধবার একটি বৈঠকও ডাকা হয়েছে। শুনেছি, ওই বৈঠকে চূড়ান্ত নির্দেশনা পাব।
ভারতীয় বিশেষ বিমানটি শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা টিকা গ্রহণ করবেন। ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন কেন্দ্রীয় ঔষধাগার, ইপিআই প্রধান কার্যালয় ও তেজগাঁও গোডাউনে টিকা রাখার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, আগের পরিকল্পনা অনুসারেই সব কিছু হবে। সবার আগে টিকা পাবে ঢাকাসহ যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি সেই এলাকার মানুষ। অন্যদিকে শুরুতে টিকা দেওয়া হবে নিচের পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, উপহারের টিকা নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই। সেরাম থেকে ২৫-২৬ জানুয়ারি যে টিকা আসবে, সেই টিকার সঙ্গে একযোগে এই টিকা ব্যবহার করা হবে টিকাদান কার্যক্রমের আওতায়।
এদিকে টিকা নিয়ে কোনো রকমের বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়, সে জন্য সরকারকে সতর্ক থেকে সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে করোনা মোকাবেলায় সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি। গত সোমবার এক সভা থেকে এই তাগিদ দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। সভা থেকে সরকারকে বলা হয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বড় বড় নগরীতে টিকা দেওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং বিধায় এসব এলাকায় টিকা ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু করতে সিটি করপোরেশনসহ সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সঠিকভাবে চলছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সভায় বলা হয়, টিকা দেওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে। টিকা কার্যকর হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। যথাযথ স্যাম্পলিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার পর অ্যান্টিবডি দেখা দরকার। ফার্মাকোভিজিল্যান্সের জন্য প্রস্তাব অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
ওই সভায় পরবর্তী বছরগুলোতেও করোনার টিকা লাগার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অভিমত তুলে ধরা হয়। দেশেই ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলেও তাগিদ দেওয়া হয়।
ভয়েসটিভি/এএস