Home লাইফস্টাইল বার্ধক্যে ব্যথা-বেদনা ঝেড়ে ভালো থাকুন

বার্ধক্যে ব্যথা-বেদনা ঝেড়ে ভালো থাকুন

by Mesbah Mukul

বার্ধক্য কোনো রোগ নয়। এটা জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই বয়সজনিত হাড়ক্ষয় রোগে আক্রান্ত। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে যেমন চুল পেকে যায়, তেমনি হাড়ের ক্ষয়ও বেড়ে যায়, বিশেষ করে নারীদের মেনোপজ পরবর্তীকালে হাড়ক্ষয় দ্রুত হতে থাকে।

এ ছাড়া অস্থিসন্ধির অভ্যন্তরীণ উপাদান, যেমন- সাইনোভিয়াল ফ্লুইডও কমে যায়। ফলে শরীরের জয়েন্টগুলোয় ব্যথা-বেদনা দেখা দেয়। বিশেষ করে মেরুদ-, ঘাড়, কোমর, হাঁটু, কাঁধ ইত্যাদিতে বেশি ব্যথা করে। এসব হয়ে থাকে স্পন্ডাইলোসিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস ইত্যাদি কারণে।

স্পন্ডাইলোসিস : এটি মেরুদণ্ডের হাড় বা কশেরুকার ক্ষয়জনিত রোগ। আমাদের মেরুদণ্ড সবচেয়ে বেশি নড়াচড়া হয়। দুটি অংশে থাকে ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন ও কোমর বা লাম্বার স্পাইন। যেহেতু সারভাইক্যাল স্পাইন ও লাম্বার স্পাইনে মুভমেন্ট বা নড়াচড়া বেশি হয়, ফলে মেরুদণ্ডের এ অংশে হাড়ের ক্ষয়ও বেশি হয়। ঘাড়ের মেরুদণ্ডের ক্ষয় হওয়ার নাম সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস আর কোমরের মেরুদণ্ডের ক্ষয়রোগের নাম হলো লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস।

আরও পড়ুন : মানুষের মাথার খুলি পাচারকারী বাপ্পীর ৩ দিনের রিমান্ড

অস্টিওআর্থ্রাইটিস : এটি একটি অস্থিসন্ধির ক্ষয় রোগ। আমাদের অস্থিসন্ধি বা জয়েন্ট এক ধরনের নরম কাভার দিয়ে আবৃত থাকে। এর নাম কারটিলেজ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারের ফলে কারটিলেজগুলো ক্ষয় হতে থাকে। জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির মার্জিন অমসৃণ হয়ে যায়, অস্থিসন্ধির গ্যাপ কমে যায়। ফলে অস্থিসন্ধির নড়াচড়া করতে ব্যথা অনুভূত হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিস বিভিন্ন জয়েন্টে হতে পারে। যেমন- কব্জি বা রিস্ট জয়েন্ট, হিপ জয়েন্ট, হাঁটু বা নি জয়েন্ট, সারভাইক্যাল স্পাইন, লাম্বার স্পাইন ইত্যাদি। হাঁটু আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওজন বহনকারী জয়েন্ট। তাই হাঁটুতে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বেশি হয়ে থাকে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পঞ্চাশোর্ধ্বের বেশি বয়সী মানুষের বেশিরভাগ হাঁটুব্যথায় ভুগে থাকেন। এর অন্যতম কারণ অস্টিওআর্থ্রাটিস।

অস্টিওপোরোসিস : অস্থিক্ষয় বা হাড়ক্ষয় রোগ এমন এক অসুখ, যাতে হাড়ের ঘনত্ব নির্দিষ্ট মাত্রায় কমে যায়। ফলে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হাড় পূর্ণতা লাভ করে। ৪০ বছরের পর থেকে হাড় তার ক্যালসিয়াম ও ফসফেট হারাতে থাকে। ফলে হাড়ের পরিবর্তন হয়, দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। ৫০ বছর বয়সী ১৫ থেকে ৭০-৮০ বছর বয়সী ৩০ শতাংশ নারীর নিতম্বের হাড় ভেঙে যায়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৫ জন পুরুষের ১ জন অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত। এ ব্যথায় রোগী তার ব্যক্তিগত কাজকর্মও করতে পারে না।

চিকিৎসা : এনএসআইডিএস, ডায়েটরি সাপ্লিমেন্ট- গ্লুকোসামিন হাইড্রোক্লোরাইড, কন্ড্রোটিন সালফেট, ক্যালসিয়াম, হ্যালুরনিক অ্যাসিড ইত্যাদি। বয়স্কদের যেহেতু এ রোগ বেশি হয়, তাই ওষুধের ব্যবহার কম করা ভালো। ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি ও থেরাপিউটিক ব্যায়াম (যা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন) সমস্যা কমিয়ে এনে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপনের উপযোগী করে তোলে। রোগীর মাংসপেশির শক্তি বজায় রাখতে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের নির্দেশিত ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে বার্ধক্যজনিত ব্যথা-বেদনা কমিয়ে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়।

লেখক : ডা. এম ইয়াছিন আলী

You may also like