Home লাইফস্টাইল ‘ভালো মানুষ’ হওয়া সম্ভব?

‘ভালো মানুষ’ হওয়া সম্ভব?

by Newsroom
ভালো মানুষ

‘আমি একজন ভালো মানুষ’, বুকে হাত দিয়ে এই বাক্যটি বলে দেয়ার সক্ষমতা কি রয়েছে আপনার? অথবা আপনি সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান একজন ভালো মানুষ হিসেবে? কিন্তু ভালো মানুষ হওয়া কি সম্ভব আদৌ?  ভালো মানুষের মাপকাঠিই বা কি?

যদি সত্যিই ভালোমানুষ হতে চান তাহলে এসমস্ত প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে আপনার যাওয়া উচিত কিছু চর্চার মধ্য দিয়ে।  এগুলোর প্রয়োগবিধি খুব বেশি কঠিন না হলেও থাকতে হবে প্রবল সদিচ্ছা। আসুন চোখ বুলিয়ে নেই ধাপগুলোর দিকে।

  • নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন –

সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষের বিরুদ্ধে প্রচলিত অভিযোগ যা তা হচ্ছে নিজের প্রতি উদাসীনতা। মানুষ নিজের প্রতি যত্নবান এটা খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এখানে নিজের প্রতি যত্ন বলতে শুধু শারীরিক কিংবা বাহ্যিক যত্ন না কিন্তু। যত্ন নিতে হবে মানসিকতারও।

সেক্ষেত্রে বিভিন্ন শারীরিক চর্চার পাশাপাশি মানসিক চর্চার জন্য পড়তে হবে প্রচুর পরিমানে বই। মানুষ যত জ্ঞান লাভ করবে ততই মাগজিক উন্নয়ন হবে। অনেক সময় আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়েই প্রায় ভুলেই যাই নিজের কথা। এটা একদম অনুচিত। প্রতিটা ভালো কাজের পর নিজেকে নিজে বাহবা দেওয়ার মধ্যেও দোষের কিছু নেই বরং অত্যন্ত জরুরি এটা।

  • অপারগতাকে অস্বীকার না করা-

একজন মানুষ যে জগতের সমস্ত কাজ পারবে এমন কোন কথা নেই। জগতের সমস্ত কাজ যে তাকে পারতেই হবে এমনও কোন কথা নেই। এক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই যে ভুলটা করি সেটা হচ্ছে, যেটা পারি নি জেতার মানসে সেটাকেও পারি বলে প্রচার করি। কিন্তু এখানেই হয়ে যায় সবচে বড় পতন। মানসিক ও আদর্শিক এই পতন থেকে নিজেকে টেনে তোলা প্রায় অসম্ভব।

  • ‘না’ ভেবে,ভাবুন ‘হ্যাঁ’

আমাদের চারপাশে নেতিবাচক ভাবনার মানুষের অভাব নেই। এরা প্রায় সব ক্ষেত্রেই খুঁজে বেড়ায় নেতিবাচকতা। যেকোন ভালো কাজের বীপরিতেও তারা খুঁজতে থাকে লুকিয়ে থাকা ‘কুপ্রবণতা’। যখন ভালো কাজ প্রশংসা পায় তখন নেতিবাচক ভাবনার মানুষগুলো নিমজ্জিত হয় হতাশায়।

সুতরাং ভালো মানুষ হতে গেলে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরির কোন বিকল্প নেই। ইংরেজি সেই প্রবাদটা এক্ষেত্রে সব সময় মাথায় রাখা জরুরি “থিঙ্ক পজেটিভ, বি পজেটিভ”। আর কারও কোন ভালো কাজ চোখের সামনে এলে তার উদার প্রশংসা করতেও ভুলবেন না। অন্যের ভালোকাজের প্রশংসা করলে নিজেও ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হবে। বিশ্বাস না হলে মিলিয়েই দেখুন না!

  • ‘রাগগুলো সব ফুল হয়ে যাক’

আপনার ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠলো চারপাশ। ক্রোধের আগুনে আপনি উত্তাপ ছড়ালেন চারপাশে। আপনার মুখ দিয়ে কিছু শব্দ বের হল যা স্বাভাবিক মস্তিস্কে শুনলে লজ্জা পেয়ে যাবেন নিজেই। তারচে বরং রেগে গেলে হেসে উঠুন। ক্রোধের আগুনে উত্তপ্ত পরিবেশের চেয়ে ভালোবাসার ফুলে কোমল পারিপার্শ্বিকতা মঙ্গলময় হবে আপনার জন্যেও, অন্যের জন্যেও। এটা খুব সহজ প্রক্রিয়া না। লড়াই করতে হবে নিজের মনের সাথে।

তবে অসম্ভবও না। শুধু ভাববেন, ‘এমন কোন আচরণ আমি করবো না যা পরে লজ্জা দেবে আমাকেই’। এরপরেও কারও কারও ক্ষেত্রে রাগ দমন করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে। কারণ ভালো মানুষ হতে গেলে এই ধাপটা পাড় হওয়া অত্যাবশ্যকীয়।

‘আমি মানি শতমত’

ধরুণ আপনি আর এক বন্ধু বের হয়েছেন বৈকালিক ভ্রমণে। আপনি খেতে চান আখের রস, আপনার বন্ধু খেতে চায় বাদাম। কি করবেন আপনি? বন্ধুর পছন্দ উপেক্ষা করে বলবেন, “আখের রসই খেতে হবে’’। না এটা সুপ্রক্রিয়া নয়। আপনাকে মানতে হবে তার পছন্দও। আপনি যখনই অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিখবেন তখনই মানুষ হিসেবে উঠতে সক্ষম হবেন আরেক ধাপ উপরে।

  • বিনয় ও সাহসের সম্মিলন ঘটাতে হবে

আপনাকে অবশ্যই ব্যাক্তিজীবনে বিনয়ী হতে হবে পাশাপাশি থাকতে হবে সাহস। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাহসিকতাহীন বিনয় তোষামোদির পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

  • সহানুভূতিশীল হতে হবে, ত্যাগ করতে হবে পরশ্রীকাতরতা

আমরা অনেক সময় সহানুভূতি হারিয়ে ফেলি। পারিপার্শ্বিক নানাচাপে কিংবা জন্মগত অভ্যাসে আমরা মানুষের বেদনা দেখলে আহত হই না। বরং বিক্ষত মানুষটাকে পাশ কাটিয়ে মেতে উঠি নিজেকে নিয়েই। এই প্রবণতা ত্যাগ করা জরুরি। পাশাপাশি বেরিয়ে আসতে হবে পরশ্রীকাতরতা থেকেও। মনে রাখবেন  অন্যের উন্নতিতে হিংসায় জ্বলে মরলে পতনটা আপনার নিজেরই হবে।

  • ‘ধন্যবাদ’ লেগে থাকুক ঠোঁটে-

প্রতিদিন আমরা অন্যের দ্বারা নানাভাবে উপকৃত হই। যেমন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মা,বোন কিংবা স্ত্রী আমাদের নাশতা দেয়। রিক্সা বা অন্য কোন বাহনে পৌছাই গন্তব্যে। টং দোকানে কিংবা অফিস স্টাফের হাত দিয়ে পেয়ে চা কিংবা কফি। কখনও কি এদের কাউকে ধন্যবাদ বলেছেন? বলেন নি? তাহলে এই চর্চাটা শুরু করুন আগামীকাল থেকেই। মনে রাখবেন আপনার একটা ধন্যবাদ বিপরীত মানুষটাকে আপনার প্রতি আরও যত্নশীল করে তুলবে। আর নিজেও মানুষ হিসেবে আরও সমৃদ্ধ হবেন।

  • আর কোন অজুহাত নয়-

আমরা অফিসে অনেকসময় অজুহাতের খুব বেশি প্রয়োগ ঘটাই। কখনো কোন কাজ এড়ানোর জন্য কখনও বা কারও উপরে দায় চাপানোর জন্য। এতে হয়তো সাময়িক প্রশান্তি পাচ্ছেন বলে ভাবছেন আপনি। কিন্তু চিরতরে কুড়াল মারছেন নিজের পায়েই। তাই আজ থেকে অজুহাত শব্দটি মুছে ফেলুন নিজের অভিধান থেকে। আর হয়ে উঠুন একজন ঋদ্ধ মানুষ।

  • ভালোবাসা হোক পাথেয়-

শেষ করি হজরত মোহাম্মদ সঃ একটা গল্প দিয়ে। এক বুড়ি নবীজির পথে কাঁটা ছড়িয়ে রাখতেন। নবীজি প্রতিদিন সেই কাঁটা উপড়ে পৌছাতেন নিজস্ব গন্তব্যে। কিন্তু সেই বুড়িকে কখনও ধিক্কার দিতেন না। একদিন তিনি দেখলেন তার পথ কন্টকমুক্ত। চলে গেলেন সেই বুড়ির বাড়িতে। শুশ্রূষায় সুস্থ্য করে তুললেন তাকে। এরপর অনুতপ্ত হলেন সেই বুড়ি। এ থেকে আমরা বুঝতে ভালোবাসার ও সহনশীলতা কতটা শক্তিশালী ও কার্যকরী। সুতরাং ভালোমানুষ হতে গেলে পথে পথে ভালোবাসা বিলিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।

ভয়েস টিভি/আরআর/ টিআর

You may also like