ইয়েমেন উপকুল থেকে ২২০ মাইল দূরে রহস্যে ঘেরা দ্বীপ, সকোত্রা। চারপাশে আছে আরো তিনটি দ্বীপ আব্দ আল কুরি, সামহা ও ডারসা। এরমধ্যে সকোত্রাই সবচেয়ে বড়। দ্বীপটি ১৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ আর ৫০ কিলোমিটার চওড়া। অদ্ভুত সব গাছপালা আর কিছু পশু-পাখি বিশ্বের অন্যসব দ্বীপ থেকে আলাদা করে রেখেছে সকোত্রাকে। ২০০৮ সালে এই দ্বীপপুঞ্জকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেসকো।
সকোত্রা দ্বীপ দেখলেই যে কারো মনে হবে, কোনো ভীন গ্রহ। চারপাশে অদ্ভূদ সব গাছপালা। মধ্যে কোনোটা ছাতার মতো। কোনটা বামন আকৃতির। আবার কিছু গাছের পাতাই নেই। তবুও সব ডালেই ফুটে আছে ফুল। এজন্যই এই দ্বীপটিকে ডাকা হয়, ভিন গ্রহ নামে। তবে দ্বীপের সবচে অদ্ভুত গাছটি- ড্রাগন। দেখতে একদম ছাতার মতো। উচ্চতা ৭ থেকে ৮ ফুট। গাছগুলো সাড়ে ৬’শ বছরেরও বেশি সময় বাঁচে। আর দশ বছরে বাড়ে মাত্র তিনফুট। তবে গাছটির ফল টকটকে লাল। সেইসাথে এ গাছ থেকে পাওয়া যায় এক ধরনের আঠা, যা বিভিন্ন ভেজষ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
এ দ্বীপে রয়েছে কমপক্ষে ৮২৫ প্রজাতির গাছপালা। এরমধ্যে ৩০৭টি প্রজাতিই স্থানীয়। উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকোত্রায় যতো গাছ আছে, তার এক-তৃতীয়াংশই বিরল। এমন গাছ বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না। এরমধ্যে কিছু গাছ টিকে আছে দুই কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অতিরিক্ত পানির অভাব আর তীব্র সূর্যের তাপের কারণেই গাছগুলোর এমন অদ্ভুতভাবে জন্মেছে।
সকোত্রায় ২০ প্রজাতির পাখি আছে, যা শুধুমাত্র এই দ্বীপেই পাওয়া যায়। আর ৯০ শতাংশ সরীসৃপ ও স্থল শামুকের ৯৫ শতাংশেরই দেখা মেলেনা বিশ্বের অন্য কোথাও। এছাড়া ৩৫ প্রজাতির প্রাণির মধ্যে ২০টিই স্থানীয়। আরো রয়েছে নানা প্রজাতির মাকরসা, পা ছাড়া টিকটিকিও। দ্বীপের একমাত্র স্তন্যপানী প্রাণি হচ্ছে বাদুর।
অদ্ভুত এই দ্বীপটির সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণী হলো এক ধরণের মাকরশা। নাম ব্লু বেবুন স্পাইডার। বর্নিল এই মাকশার চলাফেরাও অন্য প্রজাতির মাকরশা থেকে একেবারে আলাদা।
সকোত্রা দ্বীপটি ঘিরে আছে বেশ কিছু পাহাড়। আর চারপাশে রয়েছে মনোরম সৈকত। এসব সৈকতের পাশে শুভ্র বালিয়াড়ি যেকোনো পর্যটকের নজর কাড়বেই। এমন সারি সারি বালিয়াড়ির কারণেও দ্বীপটিকে ভীনগ্রহ বলে মনে হয়। এখানকার সবচেয়ে উচু পাহাড়ের নাম হাজহির। গ্রানাইড পাথরের এই পাহাড়টি সকাল-বিকেল রং বদলায়। এই পাহাড়ের নীচেই গড়ে উঠেছে স্থানীয়দের আবাসভূমি। গড়ে উঠেছে দ্বীপের প্রধান উপকূলীয় শহর।
বর্তমানে দ্বীপটিতে বাস করে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। এদের অধিকাংশই মাছ ধরে জীবিকা চালায়। এসব জেলে সম্প্রদায় সারা বছর সমুদ্রে মাছ ছাড়াও ডলফিন, তিমিও শিকার করে। এছাড়া অন্যরা খেজুর চাষ ও মেষ পালন করে।
অনুবাদ : ফেরদৌস মামুন, সাংবাদিক