Home সারাদেশ তিন মাসে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ৭৬২ কোটি টাকার মাছ রফতানি

তিন মাসে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ৭৬২ কোটি টাকার মাছ রফতানি

by Newsroom

করোনার প্রার্দুভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে মৎস্য খাত। টানা কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে রফতানি। জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে দক্ষিণাঞ্চল তথা খুলনা বিভাগ থেকে রফতানি হয়েছে ৭৬২.৪৬ কোটি টাকার মাছ। এর মধ্যে বাগদা, গলদা ও হরিণা চিংড়ি ছাড়াও দেশীয় প্রজাতির মাছও রয়েছে।

সাতক্ষীরা মৎস্য অধিদফতরের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জেলায় মোট বাগদা চিংড়ি চাষি রয়েছে ৫২৩৪৫ জন। এসব চাষিদের ৬৬ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে ৫৪৯৩৫টি ঘের রয়েছে। এসব ঘেরে মোট ২১ হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন বাগদা উৎপাদন হয়েছে।

গলদা চাষি রয়েছে ৯৮৬৭ জন। তাদের ৯৩৭৮ হেক্টর জমিতে ১১৬৬২টি ঘের রয়েছে। উৎপাদিত গলদার পরিমাণ ৬৫৪২.৫ মেট্রিক চন। এসব ঘেরে হরিণা চিংড়ির উৎপাদন হয়েছে ৩৪১০ মেট্রিক টন। এছাড়া এসব মাছের ঘেরে অন্যান্য বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎপাদন হয়েছে ৩১৩৯৩.৫ মেট্রিক টন।

ব্যবসায়ীরা জানান, সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড় মাছের বাজার। অর্ধশত প্রজাতির স্বাদু ও লোনা পানির মাছের সরবরাহ হয় এ বাজারে। প্রতিদিন এই বাজার থেকে ১২-১৫ টন মাছ কেনাবেচা হয়। স্বাদু পানি থেকে লোনা পানির মাছের স্বাদ বেশি। এজন্য খুচরা ক্রেতাদের কাছে লোনা পানির মাছের চাহিদা বেশি।

সাতক্ষীরা বড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আমির হোসেন জানান, চিংড়ি মাছ রফতানিতে এগিয়ে থাকলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বেশি দেশি মাছের। খুচরা ক্রেতারা সাধারণত ভেটকি, ভাঙান, পারশে, ট্যাংরা, দাতিনা, ভোলা ও ছোট হরিণা, চাকা, চামনি চিংড়ি বেশি ক্রয় করেন। এছাড়া বাজারে রুই, কাতল, সিলভার, তেলাপিয়া. পাঙাসসহ অর্ধশত প্রজাতির বিভিন্ন ধরণের মাছের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, ঘেরগুলোতে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। তাছাড়া করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের শুরুতে টানা কয়েকমাস রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ঘের ব্যবসায়ীরা মাছ ধরতে পারেনি। এবার মাছের ঘেরে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় মাছের আকারও বড় হয়েছে।

আরও পড়ুন: মাছ আমদানি-রফতানি বেড়েছে বেনাপোল দিয়ে

করোনায় রফতনি বন্ধের কারণে জেলায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২০০ কোটি টাকা। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রফতানি শুরু হওয়ায় চাষিরা করোনাকালীন ক্ষতি পুষিতে নিতে পারবেন বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, মূলত বিদেশে চিংড়ি মাছ বেশি রফতানি হয়। আর দেশিয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছগুলো চলে যায় বিভিন্ন জেলার বাজারগুলো। চট্রগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও ঢাকায় এ অঞ্চলের মাছের চাহিদা অনেক বেশি। রফতানিতে চিংড়ি মাছ এগিয়ে থাকলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে দেশি মাছের চাহিদা বেশি। কি পরিমাণ মাছ বিদেশে রফতানি হয় সে পরিসংখ্যান করেন খুলনা কোয়ালিটি কন্ট্রোল কার্যালয়।

খুলনা কোয়ালিটি কন্ট্রোল কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনা বিভাগ থেকে ৯৯২৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে গলদা, বাগদা ও হরিণা চিংড়ি উল্লেখযোগ্য। গলদা রফতানি হয়েছে ৮১০ মেট্রিক টন, বাগদা ৬৫২০ মেট্রিক টন, হরিণা চিংড়ি ২৪২ মেট্রিক টন, ৭২ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির দেশিয় সাদা মাছ, কাঁকড়া ১২৫ মেট্রিক টন এবং বাকিগুলো মাছের আঁশ ও চিংড়ির খোসা রফতানি হয়েছে।

টাকা হিসাবে এর বাজার মূল্য ৭৬২.৪৬ কোটি। এর মধ্যে গলদা এক কোটি ২৯ লাখ ৯৬ হাজার ২৩৫ ডলার, বাগদা ৬ কোটি ১৪ লাখ ৪১ হাজার ১৬ ডলার, হরিণা ১৯ লক্ষ ৫১ হাজার ১২৮ ডলার, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬৪১ ডলার এবং আয়ের বাকি অংশ এসেছে কাঁকড়া, মাছের আশ ও চিংড়ির খোসা থেকে।

সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতা বাজার থেকে প্রতিদিন দেড় কোটি টাকার মাছ ক্রয়বিক্রয় হয় বলে জানান আড়ত ব্যবসায়ীদের নেতা আসাদুজ্জামান।

সাতক্ষীরা সদরের মাছের ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ি আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন ৩-৪ ট্রাক মাছ রপ্তানি করছি। আমি চট্রগ্রামে মাছ পৌঁছে দেয়। প্রতি ট্রাকে ১৫-১৬ টন মাছ রফতানি হয়। এক ট্রাক মাছের মূল্য কমপক্ষে ৫-৬ লাখ টাকা। করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে সবকিছু বন্ধ থাকায় টানা কয়েক মাস রফতানি বন্ধ ছিল। এখন আবার পুনরায় রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে।

খুলনা কোয়ালিটি কন্ট্রোল কার্যালয়ের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এটিএম তৌফিক মাহমুদ বলেন, বিদেশে রফতানি হওয়া মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গলদা, বাগদা ও হরিণা চিংড়ি। শতকারা ৮০ ভাগ বাগদা যায় ইউরোপের ২৭টি দেশে। ২০ ভাগ যায় আমেরিকা, জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। তাছাড়া মোট রফতানির শতকারা দুই ভাগ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রফতানি হয় অন্যান্য দেশগুলোতে।

তিনি বলেন, করোনা দূর্যোগ কাঁটিয়ে জুলাই, আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ৭৬২.৪৬ কোটি টাকার মাছ বিদেশে রফতানি হয়েছে। চলতি অক্টোবর মাসের হিসাব এখনও শেষ হয়নি। করোনার প্রার্দুভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রফতানি খাত। বর্তমানে আমরা কুচিয়া ও কাঁকড়া রফতানি বাজারটি হারিয়েছি। কেননা কুচিয়া ও কাঁকড়া রফতানির বড় বাজার চীন। কিন্তু করোনার কারণে চীনে এখনও রফতানি শুরু হয়নি।

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like