চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মার্কিন নির্বাচনের চেয়েও বেশি ‘সৌহার্দ্য’ বিরাজ করছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন।
২৪ জানুয়ারি রোববার দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চসিক নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে মার্কিন নির্বাচনের চাইতেও বেশি ‘সৌহার্দ্য’ বিরাজ করছে। প্রার্থীদের হাজার সমর্থক রাস্তায় মিছিল করে। কোথাও কোনো সংঘাতের রূপ নেয় না এখানে। নির্বাচন পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত যা আছে তা নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী।
তবে সভাশেষে সাংবাদিকরা মার্কিন নির্বাচন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিইসি বিষয়টিকে কথার কথা বলে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, মার্কিনরা নির্বাচন করবে তাদের আইডোলজি অনুযায়ী। আমরা আমাদের নির্বাচন করবো আমাদের আইডোলজি অনুযায়ী। মার্কিনটা আমাদের কি দরকার, এগুলো কথার কথা।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই এবং এর প্রয়োজনীয়তাও বোধ করি না। ইভিএমে যেখানে নির্বাচন হবে, সেখানে সশস্ত্র পুলিশ সদস্য থাকবে। ভেতরে গিয়ে একজনের ভোট আরেকজনে দেয়া ইভিএমে সম্ভব না।
চসিক নির্বাচনে হত্যা মামলার আসামিরা প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা করছেন কিনা জানতে চাইলে সিইসি বলেন, নির্বাচনী বিধিমালায় কারা প্রার্থী হতে পারবে সে সম্পর্কে বলা আছে। তাই কারও বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেই তিনি অপরাধী নন। যদি কেউ শাস্তি পান বা কারাদণ্ড হয় তাহলে তাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা আমাদের দায়িত্ব।
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, যদি কোনো ফৌজদারি কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই সুযোগে যারা কোনো ধরনের হয়রানির সঙ্গে সম্পৃক্ত না, তাদের যেন হয়রানি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছি।
এ সময় তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, এই অভিযোগ সঠিক না। পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে- এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ওয়ারেন্ট আছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
নির্বাচনের দিন সাধারণ ছুটি নিয়ে সিইসি বলেন, শনি বা বৃহস্পতিবার নির্বাচন দিয়ে আমরা আশা করি যে, ছুটি পেয়ে ভোটাররা ভোট দেবেন। কিন্তু দুই-তিনদিনের ছুটি পেয়ে ভোটাররা আর ভোট দিতে যান না। এই কারণে আমরা ছুটির ঘোষণা রাখিনি। আমরা এখন মাঝখানে (ভোটের দিন) রাখি। এখন আমরা বলছি যারা বিভিন্ন অফিস আদালতে কর্মরত থাকবেন তাদের যেন ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়।
এ সময় তিনি জানান, নির্বাচনের দিন ট্রাক ও মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। তবে মাস ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (গণপরিবহন) চালু থাকবে।
এর আগে মতবিনিময় সভায় প্রার্থীদের সহনশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে কেএম নূরুল হুদা বলেন, যারা এই নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করছেন, তাদের সহনশীল হতে হবে। সেটা যদি অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ হয় তাহলে সহিংস ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে না।
তিনি বলেন, এর মধ্যেই কয়েকজন নিরীহ মানুষের প্রাণ ঝরেছে। আমরা তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। একটি জীবন এই নির্বাচনের চাইতে অনেক মূল্যবান।
কে এম নূরুল হুদা বলেন, এ অবস্থায় নির্বাচনের প্রার্থী-সমর্থকরা খুব সতর্কতার সঙ্গে নির্বাচনী কার্যাবলী পালন করবেন। আমরা এতটুকু আশা করি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতার মধ্যে নির্বাচন হবে। সহিংসতার মধ্যদিয়ে নির্বাচন শেষ হবে না। নির্বাচনের প্রার্থী ও সমর্থকদের বলবো- নির্বাচনের পরও আপনারা এই সমাজে বসবাস করবেন। কিন্তু আসামি বা বাদী হিসেবে যেন বসবাস করতে না হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান প্রমুখ।
এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর আচরণবিধি ভঙ্গ, হামলা-হুমকিসহ গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৫৬টি অভিযোগ জমা হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ গেছে তিনজনের।
আরও পড়ুন : আমাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের শেখার আছে: সিইসি
ভয়েস টিভি/এমএইচ