Home সারাদেশ ‘ভিক্ষা করলে সম্মান থাকে না বলে মাস্ক বিক্রি করি’

‘ভিক্ষা করলে সম্মান থাকে না বলে মাস্ক বিক্রি করি’

by Newsroom

‘আমি ভিক্ষা চাই না, করিও না। ভিক্ষা করলে বাবা-মায়ের মানসম্মান চলে যায়। তাই মাস্ক বিক্রি করি। মাস্ক বিক্রির টাকাগুলো তুলে দেই বাবা-মায়ের হাতে। তারা বাড়ির বাজার করেন। বাকি টাকা সমিতির কিস্তি পরিশোধ করেন বাবা।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলো সাতক্ষীরা জজ কোর্ট চত্বরে মাস্ক বিক্রেতা তৃতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্র তরিকুল ইসলাম। সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সে।

তরিকুল শহরের খুলনা রোড মোড় এলাকার মধুমল্লারডাঙ্গী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। বাবা পেশায় একজন ভ্যানচালক।

নয় বছর বয়সী তরিকুল ইসলাম জানান, বাবা ভ্যান চালান। অসুস্থ হয়ে বাড়িতেই আছেন। সুস্থ হলে আবারও ভ্যান চালানো শুরু করবেন। আমি মাস্ক বিক্রি করছি। এক প্যাকেটে থাকা একশো মাস্ক আমি ক্রয় করি দেড়শ টাকায়। প্রতিটি মাস্ক বিক্রি করি পাঁচ টাকা। দিনে ৪০০-৫০০ টাকার মাস্ক বিক্রি হয়। আমার লাভ হয় ২০০-৩০০ টাকা।

আমার একটি ছোট সাইকেলের সখ ছিলো। কিন্তু বাবা কিনে দিতে পারেনি। থাকলে সেই সাইকেলে চড়ে মাস্ক বিক্রি করতে পারতাম, স্কুলে যেতাম।

মাস্ক বিক্রির অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে সে বলে, একদিন শহরের চায়না বাংলায় একজন আন্টি ভিক্ষা করছেন। আমি বল্লাম, আন্টি আপনি তো সুস্থ মানুষ। ভিক্ষা করেন কেন। কারো বাড়িতে গেলে তো আপনাকে কাজে নিবে। এই বলতেই সে আমাকে মারপিট করতে আসলো। বল্লো, এক আছাড় দিয়ে নাড়িভুড়ি বের করে দিব।

তৃতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্র তরিকুল ইসলাম তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। বড় বোনটি বিয়ে হয়ে গেছে। মেঝো বোনের বয়স ১২ বছর। ছোট্ট বয়সেই পরিবারের হাল ধরেছে ছেলেটি।

সাতক্ষীরা জজকোর্ট চত্বরে কৌতুহলী হয়ে এসব ঘটনা জানার পর তরিকুলকে ব্যবসার পুজির জন্যে ২০০ টাকা দেন শ্যামনগর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বুলবুল।

তিনি বলেন, এই বয়সে ছেলেটি পরিবারের হাল ধরেছে। সে বুঝতে শিখেছে ভিক্ষা করা খারাপ, সম্মান নষ্ট হয়। তাই ছেলেটি ভিক্ষা করে না। মাস্ক বিক্রি করে টাকা রোজগার করছে। এটি অন্যদের জন্যে একটি দৃষ্টান্ত।

জজকোর্টের এক ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা জানান, ছেলেটি প্রতিদিন মাস্ক বিক্রি করে কোর্টের মধ্যে। অনেকেই ভিক্ষা করে, মিথ্যা বলে মানুষদের কাছে টাকা চায়। কিন্তু তরিকুল ভিক্ষা করে না।

তরিকুলে বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, আমি লিভার জন্ডিসে আক্রান্ত। ঠিকমত ভ্যান চালাতে পারি না। একদিন চালালে ১০দিন বাড়িতে বসে থাকতে হয়। বড় ছেলে তরিকুল পরিবারের অভাব দেখে নিজেই ব্যবসায় নেমেছে। ও খুব শান্ত।

মা সালমা বেগম জানান, বাড়িতে অভাব অনটন দেখে দুই বছর আগে একদিন আমাকে বলেছিল, মা বাবা অসুস্থ ঠিকমত ভ্যান চালাতে পারে না। এভাবে কি সংসার চলে। আমি ব্যবসা করলে সংসারটা ভালো চলতো। বলেছিল, খেলনা বিক্রি করবো। এরপর আমি ওকে চারশো টাকা দেই খেলনা কেনার জন্য। তারপর থেকে তরিকুল স্কুলের সময় স্কুলে যায় পরে খেলনা বিক্রি শুরু করে।

তিনি জানান, এখন পলাশপোল স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। করোনার লকডাউনে স্কুল বন্ধ বলে মাস্ক বিক্রি করে। প্রতিদিন ১৫০-২০০ আবার কোনদিন ৩০০ টাকা আমাকে এনে দেয়। সে টাকাতে সংসার চলে আর সমিতির কিস্তি দেয়।

আরও পড়ুন: জালিয়াতির মামলায় ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি মুমিন গ্রেফতার

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like