মাহফুজ আনামকে ‘গণতন্ত্র হন্তারকদের নাটের গুরু’ আখ্যায়িত করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সেখানে (নিবন্ধে) অসৎ উদ্দেশ্যে অসংলগ্ন মিথ্যা কথা বলা হয়েছে। ’
ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম গণতন্ত্র দিবসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে নিবন্ধ লিখেছেন, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতা রিজভী।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে ডেইলি স্টারে ‘আফটার থার্টি ইয়ার্স অব অটোক্রেসিস ডিমাইস, ডেমোক্রেসি স্টিল রিমেইনস এ ডিস্ট্যান্ট ড্রিম’ শিরোনামে মাহফুজ আনামের ওই নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।
১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ওয়ান ইলেভেনের গণতন্ত্র ধংসের প্রধান কুশীলবদের অন্যতম হোতা এবং সেনা সমর্থিত মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত মাহফুজ আনাম এই নিবন্ধে বেগম জিয়াকে নিয়ে তিনি সরাসরি ও ইঙ্গিতে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে তিনি ইনিয়ে-বিনিয়ে বারবার বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন, যা হলুদ সাংবাদিকতা ও বর্তমান মিডনাইট সরকারের নির্লজ্জ স্তুতিরই সমতুল্য।
তিনি বলেন, মাহফুজ আনাম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে তার প্রবন্ধে যা লিখেছেন তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিষদবর্গের হাইপার-প্রপাগান্ডা ও কলুষিত মিথ্যাচারের প্রতিধ্বনি মাত্র। মিথ্যা বানোয়াট গল্প সাজিয়ে সংবাদ পরিবেশনের দায়ে বার বার ক্ষমা চেয়ে এখন সরকারের কাছে সাধু সাজার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তিনি। তার লেখালেখির ভিশন-মিশন হলো বিএনপির বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কাহিনী প্রকাশ করা। ভয়ে হোক বা উচ্ছিষ্ট ভোগিচ্ছায় হোক গণতন্ত্রহীন ও বেপরোয়া আচরণে লিপ্ত আওয়ামী লীগ সরকারকে খুশি করাই এখন তার আরাধ্য। মাহফুজ আনাম এখন আওয়ামী নব্য নাৎসিবাদের উপাসকে পরিণত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণকারীদের মাধ্যমে সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তি তাদের প্রথম লক্ষ্য হাসিল করে। সেই লক্ষ্য হাসিলে পুরোধা ছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার নিয়ে সেদিন তিনি উল্লাস করেছিলেন। এ সরকার আনার পেছনে নিজের কৃতিত্ব নিয়ে সগর্বে কলাম লিখেছিলেন- ‘দুই নেত্রীকে বিদায় নিতে হবে’। ডেইলি স্টারে গণতান্ত্রিক সরকারের পরিবর্তে সেনা সমর্থিত অগণতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসনকে স্বাগত জানিয়ে প্রকাশ করা হয়েছিল একটির পর একটি নিবন্ধ। পুরো সময়টা তারা গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে শুধুই গালমন্দ করে মনগড়া নিবন্ধ লিখে গেছেন।
‘মাইনাস টু ফর্মুলার’ বাস্তবয়নে সে সময় দেশের রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তারের ‘পটভূমি রচনার ক্ষেত্রে’ ডেইলি স্টার সম্পাদক ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন’ বলে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, মাহফুজ আনামদের চোখে সব দোষ রাজনীতিকদের, রাজনীতিবিদরা সবাই যেন চাঁদাবাজ-চোর। তারাই কেবল অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ এনে ডেইলি স্টার পত্রিকায় তালিকাও ছাপা হয়েছিল। জেলে ঢোকানো হয়েছিল দেড় শতাধিক নেতাকে।
২০১৬ সালে টেলিভিশনে এক আলোচনায় ‘সূত্রবিহীন খবর প্রকাশের জন্য’ মাহফুজ আনামের ‘ক্ষমা চাওয়ার’ কথাও তুলে ধরেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সাবেক ছাত্র নেতা ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আজিজুল বারী হেলাল, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিবর, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আসাদুল করিম শাহিন উপস্থিত ছিলেন।
ভয়েস টিভি/এসএফ