Home সারাদেশ মুজিববর্ষে মডেল হবে ‘আদর্শ মৎস্য গ্রাম’

মুজিববর্ষে মডেল হবে ‘আদর্শ মৎস্য গ্রাম’

by Newsroom
মুজিববর্ষে

৪০ জনের ৬০টি পুকুর নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে (মুজিববর্ষে) গড়ে উঠেছে ‘আদর্শ মৎস্য গ্রাম’। নীলফামারীর সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর রামকলা গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এই মৎস্য গ্রাম।

এখানে ২০ শতক থেকে শুরু করে ১৫০ শতক আয়তনের পুকুর রয়েছে। পুকুরগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশিয় প্রজাতির মাছ চাষ ও রেনু উৎপাদন করা হচ্ছে।

মৎস্য বিভাগ বলছে, এর ফলে ছোট-বড় সব জলাশয়ে চাষ, প্রাকৃতিক পরিবেশে বংশ বিস্তার, মিশ্র চাষ, পরিবেশ সহনশীল ও অধিক ফলনশীল, সুস্বাদু ও রোগীর পথ্য হিসেবে ব্যবহার, পারিবারিক পুষ্টির যোগান এবং চাহিদা ও বাজার মুল্য বেশি পাওয়া যাবে। এছাড়া সনাতন পদ্ধতিতে মাছ চাষের ব্যাপারে চাষিদের ধারণা পাল্টাবে ও সক্ষমতা বাড়বে মাছ ও রেনু উৎপাদনের ক্ষেত্রে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৬০টি পুকুরে চাষিদের নাম লেখে রাখা হয়েছে। কেউবা রেনু উৎপাদন আবার কেউ দেশিয় প্রজাতির মাছ চাষ করছেন। সুবিধাভোগী চাষীরা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পুকুরে দেয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় চুন ও সার পেয়েছেন।

মাছ চাষী হাজ্জাজ রব্বানী জানান, আমি সাতটি পুকুরে মাছ চাষ করছি। ৪০ শতক থেকে শুরু করে ১৫০ শতক আয়তনের পুকুর রয়েছে। মৎস্য গ্রাম হওয়ার পর আমরা প্রশিক্ষণসহ চুন ও সার পেয়েছি। প্রদর্শণী প্লট করছে মৎস্য বিভাগ। উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পর্যবেক্ষণে রাখছেন মাছ চাষীদের। সরকারি অন্যান্য দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে দিচ্ছে। এর ফলে আমরা বিশেষ উপকার পাচ্ছি।

মেহেদি হাসান নামে আরেক চাষি জানান, এই এলাকা মাছ চাষের জন্যে উর্বর ভূমি হিসেবে পরিচিত। এখানকার মাছ জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে যায়। আগে আমরা যেনতেনভাবে পুকুরে মাছ চাষ করতাম। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর ধারণা বদলেছে। তাছাড়া বাজারে মুল্য বেশি পাওয়ার একটি পদক্ষেপ তৈরি হয়েছে।

চাষি মমিনুর রহমান জানান, মাছ চাষে লোকসানের দুঃচিন্তা কম। যদি পদ্ধতি জানা থাকে তাহলে লাভবান বেশি হওয়া যায়। একদিকে আমরা এখন লাভবান হচ্ছি ঠিকই। আরেক দিকে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই গ্রামে অনেক মানুষ উপার্জনে জড়িত।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্র জানায়, মুজিবর্ষে রংপুর বিভাগের আট জেলায় একটি করে মৎস্য গ্রাম গড়ে উঠেছে। মুলত মাছ চাষের সম্প্রসারণ, রেনু উৎপাদন বৃদ্ধি, চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদান, সরকারি সব দফতরের সমন্বিত সেবা প্রদান এবং দেশিয় মাছ উৎপাদনে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শারমিন আকতার জানান, গ্রামটিতে গিয়ে মাছ চাষীদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়। প্রতি মাসের প্রথম ও তৃতীয় মঙ্গলবার সেখানে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাগণ যান। গুণমান ঠিক রয়েছে কিনা সেটি দেখেন এবং চাষিদের কথা শোনার মাধ্যমে পরামর্শ প্রদান করেন।

তিনি বলেন, সঠিক এই ধারণাটা অনেকের নেই। এক শতক জমির পুকুরে ১০থেকে ১৫টি পোনা ছাড়তে হয়। কিন্তু এলোমেলো ভাবে মাছ চাষ করতো এখানকার চাষিরা। মৎস্য গ্রাম হওয়ার পর আমরা যথাযথ নিয়মে মাছ চাষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। এর ফলে মাছের বৃদ্ধি এবং ওজন বেশি হবে এমন প্রযুক্তি দেয়া হয়েছে তাদের।

যুব উন্নয়নের মৎস্য প্রশিক্ষক রাজা সহিদুল আসলাম বলেন, আমি যুব উন্নয়ন থেকে এখানে মাসব্যাপী মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এটা সম্ভব হয়েছে গ্রামটি তৈরি হওয়ার ফলে। এই দফতরের মত সরকারী অন্যান্য দফতরও তাদের কার্যক্রমগুলো এখানে করে সেবা দিতে পারছেন এখন। বলা যায় এক ছাতায় সব সেবা পাচ্ছেন এখানকার মানুষরা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, আমরা একটি উদ্দেশ্য নিয়ে এই গ্রাম গড়ে তুলেছি। মুজিববর্ষে এটি বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। মডেল হিসেবে যেন গড়ে উঠে সে লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছি আমরা। ইতোমধ্যে বেশ সফলতাও এসেছে।

তিনি বলেন, এক মৌসুমে ৫ হেক্টরের পুকুরে ৩০ লাখ পোনা এবং ১০ লাখ হেক্টরের পুকুর থেকে ৬০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করা যাবে। ‘নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, মুজিববর্ষে বাংলাদেশ‘ এবং ‘মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করি, সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ি’ স্লোগান বাস্তবায়িত হবে।

আরও পড়ুন : পুলিশ সদস্যরা জনতার পুলিশে পরিণত হবে : প্রধানমন্ত্রী

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like