Home সারাদেশ সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্ট সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র

সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্ট সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র

by Newsroom
মুহুরী প্রজেক্ট

ফেনী জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট অন্যতম। মুহুরী, কহুয়া, কালিদাস পাহালিয়া ও বড় ফেনী নদীর ভাটি এলাকায় উপজেলার থাকখোয়াজের লামছি মোজায় আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট এই মুহুরী প্রজেক্ট।

ফেনী সদর থেকে এর দুরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরে সোনাগাজী ও চট্টগ্রামের মিরসরাই সীমান্তে এটি অবস্থিত। সিড়া. ইইসি ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে জাপানের সিমুজো কোম্পানি ১৬৮ কোটি টাকা ব্যায়ে ফেনী সদর, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া উপজেলা ও চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই এলাকায় আমন ফসলে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা ও বন্যার প্রকট কমানোর জন্যে এই প্রকল্প সম্পন্ন করে।

১৯৭৭-৭৮ সালে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘মুহুরী সেচ প্রকল্প’ নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। এটি নির্মাণের ফলে প্রায় ৪৭ হাজার একর জমি সেচ ও সম্পূরক সেচ সুবিধার আওতায় আসে। এই প্রকল্প এলাকার পাশ দিয়ে ফেনী নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।

চল্লিশটি বৃহদাকার পানি নিষ্কাসন গেইট বিশিষ্ট মুহুরী রেগুলেটর এর দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ, পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপত্তি হওয়া ফেনী নদীর পরিস্কার জলরাশি, পানি প্রবাহের সুন্দর দৃশ্য, এলাকার নির্মল পরিবেশ, পাশে অবস্থিত বনবিভাগের সুন্দর বন রয়েছে। নানান জাতের অতিথি পাখির বিচরণ ও কলকাকলিতে মুখরিত এই মুহুরী প্রকল্প এলাকা। পর্যটকদের বসা ও ঘুরে বেড়ানোর জন্যে রয়েছে অনেক সুযোগ-সুবিধা।

নদীর নীচ থেকে উঠানো পাথরের ব্লক ও বাগানে ঘাস পরিপাটি করে বিছানো রয়েছে। রয়েছে পার্শ্ববর্তী বিস্তৃত চর এলাকায় গরু মহিষ ও ভেড়াসহ নানান গবাদিপশুর খামার। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি রেষ্ট হাউজ, পুলিশ ক্যাম্প, মসজিদ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ভারতের নেবুলা টেকনোলজি কর্তৃক নির্মিত ২৫ কিলোওয়াটের চারটি টাওয়ার বিশিষ্ট দেশের প্রথম পরীক্ষা মূলক বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ কেন্দ্রের পাখাগুলো খুবই দৃষ্টিনন্দন।

দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন এই মুহুরী প্রকল্প এলাকা। এখানে রয়েছে সরকারি পোনামাছ উৎপাদনের বৃহৎ হ্যাচারীসহ দেশের নামীদামী অনেক কোম্পানির মৎস্য ও ডেইরি প্রকল্প। রয়েছে ফলজ বনজ, ভেষজ ও ঔষধি বৃক্ষের বাগান। ফেনী জেলার বাজারগুলোতে দেশিয় ফল-ফলাদির অধিকাংশ চাহিদা মেটায় এই মুহুরী প্রকল্প এলাকা।

মুহুরী প্রজেক্ট

দর্শনীয় অনেক কিছু রয়েছে এখানে। ফেনী নদীর উপর নির্মাণাধীন রয়েছে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার বিকল্প মহাসড়কের পিসি গার্ডার সেতু। এর নিকটেই গড়ে উঠছে দেশের সর্ববৃহৎ ‘বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চল’ সামগ্রিকভাবে এখানকার পরিবেশ পর্যটনের জন্যে খুবই উপযোগী। শীতকাল ও ছুটির দিনসহ বিশেষ দিনগুলোতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে।

বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানান শ্রেণি পেশার মানুষ এখানে পিকনিক করতে আসে। মুহুরী প্রকল্প এলাকার উন্নয়নের জন্যে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার ও সংসদের একাত্তর বিধি ও সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে বারবার বক্তব্য দিয়েছেন এখানকার সাংসদ। বাংলাদেশে সরকারের পর্যটন মন্ত্রণালয় সুদৃষ্টি দিলে এখানে পর্যটক সমাগম বাড়ার পাশাপাশি পর্যটনকেন্দ্র করে সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় করতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু ইউছুফ বলেন, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে। স্থানীয়দের জীবনমানের অনেক উন্নয়ন হবে।

এখানে ঘুরতে আসা পর্যটক বাহার উল্যাহ বলেন- এক সময় এখানকার পরিবেশ খারাপ ছিলো। উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের আন্তরিকতায় দর্শনার্থীদের বসার জন্যে বেঞ্চ ও ছাতা স্থাপন এবং জেলা পরিষদের অর্থায়নে গেইট, মসজিদ ও বাথরুম সুবিধাসহ বেশকিছু উন্নয়ন হয়েছে। আরও উন্নয়ন হওয়া দরকার।

সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সাজেদুল ইসলাম পলাশ ও পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বলেন, মুহুরী প্রকল্প এলাকার মৎস্য ও ডেইরি প্রকল্পসহ আগত পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে সোনাগাজী মডেল থানার পুলিশ ও এখানে নিয়োজিত আনসার সদস্যগণ বদ্ধপরিকর।

কোথাও চুরি ডাকাতি ও আগত পর্যটকদের হয়রানি করা হলে তাৎক্ষণিক মুহুরী প্রজেক্ট পুলিশ ক্যাম্প অথবা সোনাগাজী মডেল থানায় অবহিত করার অনুরোধ করেন তিনি।

আরও পড়ুন : ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস ও দর্শনীয় স্থান

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like