Home সারাদেশ অযত্ন অবহেলায় মোঘল আমলের খানবাড়ী মসজিদ

অযত্ন অবহেলায় মোঘল আমলের খানবাড়ী মসজিদ

by Newsroom

মোঘল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন শেরপুরের ঘাঘড়া লস্কর খানবাড়ী জামে মসজিদ। ২০০ বছর আগের মুসলিম স্থাপত্যের এই নিদর্শনটি চরম অযত্ন অবহেলায় রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব জাতীয় যাদুঘরের প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের থাকার পরও প্রায় ১৬ বছর ধরে মসজিদটির কোন সংস্কার হয় না বলে জানায় তারা।

স্থানীয়রা জানান, অনুমতি না মেলায় নিজ উদ্যোগে মসজিদটি সংস্কারও করতে পারছেন না তারা। ফলে সঠিক পরিচর্যার অভাবে মসজিদটির এখন ভঙ্গুর দশা। এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা মসজিদটির সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

জান গেছে, স্থাপত্য কলার অনুপম নিদর্শন ঐতিহাসিক ‘লস্কর খানবাড়ী’র মসজিদটি ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামে অবস্থিত। কালের আবর্তে এ মসজিদের নাম ঘাগড়া লস্কর খান মসজিদ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে। উপজেলা সদর থেকে এর দূরত প্রায় ৮ কিলোমিটার।

নির্দশন অনুসারে ধারণা করা হয়, বক্সার বিদ্রোহীদের নেতা হিরোঙ্গি খাঁর বিদ্রোহের সময় মসজিদটি নির্মিত হয়। আজিমোল্লাহ খান মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর একটি মাত্র দরজার উপর মূল্যবান কষ্টি পাথরের উপর খোদাই করে আরবিতে প্রতিষ্ঠাকাল উল্লেখ করা হয়েছে হিজরি ১২২৮ বা ইংরেজী ১৮০৮ সাল। এর গঠন পদ্ধতি ও স্থাপত্য কৌশল শিল্পসমৃদ্ধ ও সুদৃশ্য।

এক গম্বুজবিশিষ্ট বর্গাকৃতির মসজিদটির ভেতর রয়েছে দুটো সুদৃঢ় খিলান। মাঝখানে বড় গম্বুজের চারপাশ ঘিরে ছোট-বড় বারটি মিনার। এর মধ্যে চারকোণায় রয়েছে চারটি। ভেতরে মেহরাব ও দেয়াল অঙ্কিত রয়েছে বিভিন্ন কারু কাজ। মসজিদের দেয়াল চুন ও সুরকির ৪ ফুট গাঁথুনী।

তৎকালীন খান বাড়ির লোকজনসহ গ্রামের অনেকে ৫৮ শতক জমি মসজিদের জন্যে ওয়াকফ করে দেয়। এর মধ্যে মসজিদটির মূলভবন ও চেহান রয়েছে ১৭ শতকের উপর এবং ৪১ শতকের উপর রয়েছে কবরস্থান।

মসজিদটি বাইরে থেকে বিশাল আকৃতির দেখা গেলেও ভিতরে জায়গা খুব বেশি বড় নয়। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে দুটি জানালা। মসজিদের ভিতর ইমাম বাদে তিনটি কাতারে ১২জন করে মোট ৩৬ জন মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরের অংশে অর্থাৎ চেহানে আরও প্রায় অর্ধশত মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে জাতীয় যাদুঘর এর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ, একটি সতর্কবাণী, একবার দায়সারা রং করা এবং মসজিদটির বাউন্ডারি দেয়াল ছাড়া আর কোন ভূমিকা পালন করেনি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নিয়োগপ্রাপ্ত খাদেম মো. সাইফুল ইসলাম গত দুই বছর আগে বদলী হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার আর কাউকে নিয়োগ দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

মসজিদটির মেঝে বসে যাওয়ার পাশাপাশি দেয়ালে ফাটল ধরছে। দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা না নিলে কালের এ সাক্ষী হয়তো নীরবেই হারিয়ে যাবে বলে স্থানীয়দের আশংকা।

মসজিদের বর্তমান ইমাম মুফতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৪ সালের পর থেকে মসজিদটিতে কোনো চুনকাম করা হয়নি। মসজিদের ভিতরে ও বাইরের বিভিন্ন অংশে শেওলা ধরে কালো হয়ে গেছে। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরাসহ আস্তর খসে পড়ছে।

মসজিদ কমিটির সভাপতি আফজাল খান বলেন, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে মসজিদটির সংস্কারের ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এই আশ্বাসের কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর আর কোনো কর্মকর্তা এ মুখো হননি।

আরও পড়ুন : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ নিদর্শন নাফ নদী

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like