সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় ১৯৯০ সালে নির্মিত হয় সরকারি মৎস্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন অব্যবহৃত ৩৬.৩৭ একর ভূমি ইজারা নিয়ে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার একমাত্র এই খামারটি স্থাপন করেন মৎস্য অধিদফতর।
খামারটিতে রাজস্ব খাতে আটটি স্থায়ী পদ রয়েছে। এতে আটটি পুকুর, একটি করে লেক, অফিস ভবন, ফিস ল্যাণ্ডিং সেন্টার, গোডাউন, ডরমিটরি, গ্যারেজ ও দুটি গার্ড সেড নির্মাণ করা হয়।
এক সময় খামারটি থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির ও উন্নত জাতের মাছের পোনা ফেনী ও মুহুরী নদীসহ আশপাশের পুকুর ও জলাশয়ে অবমুক্ত করা হতো। এটাকে কেন্দ্র করেই আশপাশে শতশত বেসরকারি মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে অসংখ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এর ফলে দেশের বৃহৎ বাণিজ্যিক মৎস্য জোনে পরিণত হয় এই মুহুরী প্রজেক্ট এলাকা।
ফেনী জেলার সোনাগাজী ও চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই এলাকার হাজার হাজার মৎস্য চাষিরা সরকারি এই খামার থেকে উন্নত জাতের বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও আধুনিক প্রযুক্তিতে মাছ চাষের পরামর্শ পেয়ে থাকেন। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে এটা মাছ চাষে উদ্যোক্তা তৈরি, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, আমিষের চাহিদা পুরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই খামার থেকে সরকারের বার্ষিক প্রায় ১৫ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা গেছে, সরকারের এই লাভজনক প্রকল্পটি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে খামারের ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ইজারার মেয়াদ বৃদ্ধি করছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড উক্ত খামারটির জায়গায় একটি মিঠাপানির সংরক্ষণাগার (জলাধার) নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, অত্র এলাকার একদিকে বড় ফেনী নদীর মতো বিশালা আকারের মিঠাপানির জলাধার রয়েছে। অন্যদিকে মাত্র ৩০/৪০ ফুট মাটির নীচ হতে অগভীর নলকূপের মাধ্যমে মিঠাপানি পাওয়া যায়। তাছাড়া পানি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করার মতো মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরও হাজার হাজার একর অব্যবহৃত ভূমি রয়েছে সেখানে জলাধার নির্মাণ করলে কারোরই আপত্তি থাকবে না।
সোনাগাজীর গুরুত্বপূর্ণ এই মৎস্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রটি বিলুপ্ত হলে একদিকে যেমন সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হবে, অন্যদিকে প্রতি বছর মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মৎস্য চাষীসহ স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান তারা।
স্থানীয়রা সাংসদ লে. জেনারেল (অবঃ) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে মৎস্য উৎপাদনে সমৃদ্ধশালী সরকারি এই কেন্দ্রটি ধ্বংস না করার দাবি জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার অজিত দেব জানান, জেলা মিটিংয়ে ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা মৎস্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রটি ওই স্থানে বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলাধার নির্মাণের জন্যে বিকল্প স্থান নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছি।
আরও পড়ুন : সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্ট সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র
ভয়েস টিভি/এমএইচ