Home শিক্ষাঙ্গন ২’শ বছর আলো ছড়াচ্ছে রংপুর জিলা স্কুল

২’শ বছর আলো ছড়াচ্ছে রংপুর জিলা স্কুল

by Shohag Ferdaus
রংপুর জিলা স্কুল

রংপুর জিলা স্কুল। নগরীর কোল ঘেষে অবস্থিত প্রায় দুইশ বছরের পুরনো এই বিদ্যাপীঠটি ভারতবর্ষের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৮৩২ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক ১৫ দশমিক ৬৬ একর জমির ওপর জমিদারদের স্কুল নামে বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শিক্ষার আলো ছড়ানোর আতুর ঘর খ্যাত এ বিদ্যালয়টি সেই থেকে প্রায় দুইশ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে আলোকিত করছে সমাজ। বিদ্যালয়টির প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু কৃষ্ণকুমার সেন।

স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্নভাবে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ অবদান রেখে চলছে। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি এ অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃত। ৩য় থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত চলে পাঠদান।

শুরুর দিকে প্রাথমিকভাবে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হতো খড়ের তৈরি একটি আটচালা ঘরে। পরবর্তীতে কুচবিহার রাজার উদ্যোগে একটি বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। এখানে সমগ্র উত্তরবঙ্গ, দিনাজপুর, কুচবিহার, জলপাইগুড়ি থেকে শিক্ষার জন্যে আসতেন বিদ্যার্থীরা।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসিত ব্রিটিশ ভারতের প্রাদেশিক সরকারের শিক্ষা বিভাগ ১৮৬২ সালে রংপুরের বিখ্যাত জমিদার স্কুলকে রংপুর জিলা স্কুলে রূপান্তরিত করেন। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর স্কুলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত হয়।

আরও পড়ুন- বৃষ্টি নির্ভর আউশ ধানে সোনালী স্বপ্ন দেখছে কৃষকরা

১৮৭৩ সালে রংপুর জিলা স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ছিল ১৬০ জন। এন্ট্রাস (এসএসসি) পরীক্ষার্থী ছিল মাত্র ৪ জন। এন্ট্রাস পরীক্ষায় ওই বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় একজন প্রথম বিভাগ, দুইজন দ্বিতীয় বিভাগ, একজন তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে রংপুর জিলা স্কুল বৃহত্তর বাংলার প্রায় ৩৪টি স্কুলের মধ্যে ভালো ফলাফলের জন্যে দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজের মর্যাদা পায়।

ওই সময়ের প্রধান শিক্ষক বাবু চন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য অধ্যক্ষ এবং বিখ্যাত পণ্ডিত যাদেশ্বর তর্করত্ন সংস্কৃত বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। নানা কারণে চার বছর পর কলেজের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

জমিদারবর্গ শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তার জন্যে সম্মিলিতভাবে ভিক্টোরিয়া স্কলারশিপ চালু করেন। ১৮৭৪ সালে রংপুরের ফতেহপুর পরগণার জমিদার ধরপৎ সিং তার পিতার স্মৃতি রক্ষার্থে এবং ছাত্রদের উৎসাহ দেয়ার জন্যে দয়াল সিং রৌপ্য পদক চালু করেন। তার মৃত্যুর পর এ ব্যবস্থা চালু রাখেন তার স্ত্রী নিস্তারিণী দেবী। জেলার অন্য জমিদার কালীপ্রসন্ন সেন, দ্বারিকানাথ রায় চৌধুরী, কাকিনার জমিদার প্রমুখ মিলে আট টাকা হারে উপবৃত্তি চালু করেন। ওই অর্থ সরকারি বৃত্তি বঞ্চিত দরিদ্র-মেধাবী ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ ছিল।

১৯১১ সালে দূরের ছাত্রদের জন্য স্কুলের পিছনের মাঠের পশ্চিমে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯১৯ দূরের মুসলমান শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত হয় মুসলিম ছাত্রাবাস।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালানোর প্রতিবাদে ২২শে ফেব্রুয়ারি রংপুরের কারমাইকেল কলেজের কিছু ছাত্রনেতার নেতৃত্বে রংপুর জিলা স্কুলের প্রধান ফটক থেকে মিছিল বের করা হয়। এতে রংপুর জিলা স্কুলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

ভাষা আন্দোলনকারীদের মধ্যে বতর্মান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল বীরবিক্রম মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. ইউনুস, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মুকিতুর রহমান, পেট্রোবাংলার পরিচালক মারুফ খান, রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল গণি, রাজা রামমোহন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মনোয়ার হোসেন, ভাষা সৈনিক সুফী মোতাহার, মো. আফজালসহ নাম না জানা আরও অনেক শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্বাধীনতা উত্তরকালে রংপুর জিলা স্কুলের অবকাঠামোগত কলেবর আরও বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনসহ একাডেমিক ভবনের সংখ্যা ছয়টি। স্কুলে একটি মিলনায়তন, একটি মসজিদ, একটি হোস্টেল, একটি গ্যারেজ, একটি ডিবেটিং ক্লাব ঘর, একটি অব্যবহৃত ছাত্রাবাস, একটি অভিভাবক শেড, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন, হোস্টেল তত্ত্বাবধায়কের বাসভবন ও সামনে দুইটি খেলার মাঠ, একটি বাস্কেটবল কোর্ট, পিছনের অংশে একটি পুকুর, গাছে ঘেরা একটি মাঠ রয়েছে। এই বিদ্যালয়ে আধুনিক পাঁচটি বিজ্ঞানাগার, সহস্রাধিক বইয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, একটি কম্পিউটার ল্যাবরেটরি ও আধুনিক মিলনায়তন রয়েছে।

স্কুলে আছে প্রাচীনতম বটগাছ। যার ছায়াতলে এসে শান্তির পরশ পান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গাছগাছালি-পাখপাখালির কলরব ও বিভিন্ন ফুলের সুগন্ধ যেন শিক্ষার আলোর মিছিলে যোগ করে বাড়তি প্রশান্তি।

ভয়েস টিভি/আরআই/এসএফ

You may also like