Home সারাদেশ রাতের সৌন্দর্য বাড়াচ্ছে ল্যাম্পপোস্টের আলো

রাতের সৌন্দর্য বাড়াচ্ছে ল্যাম্পপোস্টের আলো

by Amir Shohel

দিনের আলোর মতোই ফকফকা সাড়ে ৩ কিলোমিটার সড়ক। ১১০টি খুঁটিতে ২২০টি এলইডি বাতির আলোতে আলোকিত হচ্ছে সড়কটি। ১ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ নগরীর চড়পাড়া মোড় থেকে দিঘারকান্দা বাইপাস সড়ক পর্যন্ত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ।

দিনরাত গাড়ি চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি সবসময়ই ব্যস্ত। রাতে একের পর এক ছোট-বড় যানবাহন দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে। কেউ রিকশার প্যাডেল মারছে, পথচারীরা হেঁটে যাচ্ছে। বিভিন্ন অলিগলি আর ফাঁকা নিরিবিলি জায়গায় একসময় প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও এই সড়কটিতে চলাচলে এখন কারও বিন্দু পরিমাণ ভয় কাজ করে না।

কথা হয় সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মোনায়েম খান নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। শরীরে ডায়াবেটিসের মাত্রা বেশি। বাসায় আসার পর কখনো বিকালে আবার কখনো রাতে আধা ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করি। অফিস থেকে ফিরে বিকালে শরীর ক্লান্ত থাকে। আগে এই রাস্তা দিয়ে হাঁটা দূরের কথা, রিকশা দিয়ে গেলেও ভয়ে শরীর ঘেমে যেতো। ছিনতাইকারীদের উৎপাত বেশি ছিলো এই মহাসড়কে। এলইডি বাতি লাগিয়ে সড়কটিকে আলোকিত করায় রাতে হাঁটাহাঁটি করি। সড়কটি দেখতেও খুব ভালো লাগে।

রিকশাচালক মো. ইউনুস মিয়া জানান, আইজকা সারাদিনে ৭০০ টেহা ভাড়া মারছি। বহুদিন পরে এই রাস্তা দিয়া রিকশা নিয়া যাইতাছি। এহন আর ডরাইনা। গান গাইয়া যাইতে থাহি। রাস্তায় দুইডা টেহা পইড়া গেলেও পরিষ্কার দেহা যাইবো। মনের আনন্দে এই সড়কে রিকশা নিয়া ছুটে বেড়াই।

রিকশাতে বসে ছিলেন শহিদুল ইসলাম নামের একজন। তিনি শহরের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, ময়মনসিংহ শহরের সবগুলো সড়ক রাতে লাইটের আলোয় আলোকিত। তবে এসব সড়কের বাতিগুলো বেশি আলো দেয় না। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় অনেক বাতি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে অন্ধকারে ছিনতাই আতঙ্কে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রীজের প্রায় সবগুলো ল্যাম্পপোষ্টের বাল্ব নষ্ট। কয়েকটি বাল্ব আলো দিলেও সেগুলো কোনো কাজে আসে না। গাড়ির চালকরা সামান্য আলোয় দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। ফলে মাঝে মাঝে ঘটছে দুর্ঘটনা। এই ব্রীজের আশেপাশের স্থানে সন্ধ্যার পর থেকে অধিক রাত পর্যন্ত চলে ছিনতাই। চড়পাড়া মোড় থেকে দিঘারকান্দা বাইপাস সড়ক পর্যন্ত উন্নত এলইডি বাতির মতো যেভাবে আলোকিত করা হয়েছে। ঠিক এমনভাবেই নগরীর সবগুলো সড়কে উন্নত এলইডি বাতি লাগানোর দাবি জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাড়ে তিন কিলোমিটার এই সড়কটিতে মাঝে মাঝেই সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের কবলে পরতে হতো অনেককে। ফলে আতঙ্ক নিয়েই চলাচল ছিলো। উন্নত এলইডি লাইটের মাধ্যমে আলোকিত এই সড়কটিকে সম্পূর্ণ দিনের মতো মনে হয়। পরিবারের সদস্যরা নির্বিঘ্নে রাতবিরাতে চালাচল করতে পারে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ১ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে মসিকের প্রকৌশল বিভাগ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। মহাসড়কটিতে অতিরিক্ত আলোক সজ্জার কারণে চুরি, ছিনতাই ও বিভিন্ন প্রকার দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। গত বছরের সোমবার ২৫ নভেম্বর
রাতে আলোকিত লাইটের উদ্বোধনের পর থেকেই মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। পরিকল্পনা করে সিটি করপোরেশন এলাকার প্রত্যাকটি সড়ক উন্নত এলইডি বাতির আলোতে আলোকিত করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত এই সড়কে ছিনতাই আতঙ্ক বা দুর্ঘটনার খবর একেবারেই নেই।

আরও পড়ুন : গাইবান্ধায় এলইডি লাইটের আলোয় বিপাকে পথচারিরা

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু জানান, চুরি-ছিনতাই ও বিভিন্ন দুর্ঘটনা রোধে সড়কটি আলোকিত করা হয়েছে। এছাড়াও পথচারী ও গাড়ির চালকদের চোখে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়টিও পর্যালোচনা করে উন্নত এলইডি বাতি লাগানো হয়েছে।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like