Home সারাদেশ লেবু চাষে লাখপতি

লেবু চাষে লাখপতি

by Newsroom

কৃষকদের প্রযুক্তিগত কলা-কৌশল আর উদ্বুদ্ধকরণের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে লেবু চাষ। দেশে অনেক জাতের লেবুর চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে কাগজি, পাতি, এলাচি, বাতাবি ও হাইব্রিড নতুন জাতের সিডলেস (বীজহীন) লেবু উল্লেখযোগ্য। তবে ফলন ও দাম বিবেচনায় শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় সিডলেস লেবুর চাষ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

জানা গেছে, লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা অন্য আবাদ ছেড়ে এ লেবুতে ঝুঁকছেন। সিডলেস লেবুতে এক বছরের আয় দিয়েই ব্যয় উঠে যায় এবং দ্বিতীয় বছর থেকে লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকে।

নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বাছুরআলগা উত্তর পাড়া গ্রামের এমনই এক সফল চাষি মো. আবু রায়হান শামীম। তিনি ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে ৪ একর জমি লিজ নিয়ে সিডলেস লেবু চাষ শুরু করেন। জমি বন্ধক, কলম, জমি তৈরিসহ বিভিন্ন খাতে তার খরচ হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। প্রথম বছরের ফলনেই তার খরচ উঠে আসে।

শামীম জানান, তিনি প্রতি একর জমি বছরে ৩০ হাজার টাকা হারে লিজ নিয়েছেন। ২২ টাকা হারে ২ হাজার কলম ক্রয়সহ জমি তৈরি, সেচ, সার, বেড়া দেয়াসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা তার ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে ৮০ ভাগ গাছে ফলন আসায় সে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৫ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করতে পারছেন। তার বাগান পরিচর্যার জন্যে পাঁচজন শ্রমিক রয়েছে। এতে করে নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি জানান, ওই গ্রামের আবদুল হাসেম, লুৎফর রহমান ও তার ছোট ভাই মোস্তাক আহমেদসহ উপজেলার অনেকেই এখন লেবু চাষে ঝুঁকছেন। এ বছর লেবুর দাম ভালো থাকায় বেশ লাভে লেবু বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার হাজার লেবু বিক্রি করছেন।

সরজমিনে উপজলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে উজেলার বানেশ্বরদী, পাঠাকাটা, টালকী, চরঅষ্টধর, উরফা, গনপদ্দী, গৌড়দ্বার ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়ন এবং নকলা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বেলে-দোআঁশ মাটিতে লেবু চাষ করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।

খরচের তুলনায় কয়েক গুণ লাভ পাওয়ায় এ চাষে কৃষকদের আগ্রহ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব লেবু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া লেবু বিক্রির পাশাপাশি কলম বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছেন পুরাতন চাষিরা।

আরও কয়েকজন লেবু চাষিরা জানান, তাদের লেবুর বাগান সাধারণত বাড়ির আশেপাশে থাকায় স্ত্রী ও সন্তানরা সহযোগিতা করার সুযোগ পায়। ফলে শ্রমিক ব্যয় কম হয়। লেবু বাগানের আয় দিয়েই তাদের সংসারের খরচ নির্বাহ হয়।

রোপণের বছর বাদে প্রতি বছর একবার ডালপালা ছাটাই, মাটি কোপানো, প্রতি ৩ মাসে একবার নিড়ানি ও ২ থেকে ৩ মাস অন্তর সেচ ও সামান্য জৈব সার ব্যবহার ছাড়া আর কোন খরচ নেই বলে জানান কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, উপজেলায় অন্তত ৩০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে। সারা বছর ফলন দেয়া, অধিক ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ, প্রচুর রস ও ঘ্রাণযুক্ত হাইব্রিড জাতের এ বীজ বিহীন (সিডলেস) লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে দাম ভালো পাওয়ায় লেবু চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সঠিকভাবে বাগানের পরিচর্যা করলে একবার চারা রোপণ করলে ১৫-২০ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন : দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতুর ৫ হাজার ৮৫০ মিটার

তিনি বলেন, চাষিদের কৃষি বিভাগ থেকে সার্বক্ষণিক পরার্মশ সেবা দেয়া হচ্ছে। এমনকি উপজেলায় লেবু জাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় এরই মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বেশ কিছু বাগান গড়ে উঠেছে। অধিক লাভজনক এ লেবু বাড়ির আঙ্গিনাসহ পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন।

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like