Home লাইফস্টাইল শরীরের যত্নে তেল

শরীরের যত্নে তেল

by Amir Shohel

গাছের হাইড্রেশনের জন্য যেমন পানি প্রয়োজন হয়, তেমনি ত্বকের বাহ্যিক আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজার খুবই জরুরি। যুগ যুগ ধরে রূপচর্চায় প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে ফুল, ফল, পাতা, বীজের নির্যাস থেকে তৈরি নানা রকম সুবাস তেল। কেমিক্যালমুক্ত এ তেল ত্বক, নখ ও চুলের যত্নে এবং ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে দারুণ কার্যকর। শুধু কি তাই? কিছু রোগের চিকিৎসায়ও তেল কাজ করে জাদুর মতো।

নারিকেল তেল:

আগে আমাদের মা-খালারা বলতেন, দীঘল ঘন-কালো চুলের রহস্য হলো নারিকেল তেল। ধারণাটি কিন্তু মিথ্যা নয়। এই তেল একদিকে ন্যাচারাল কন্ডিশনার হিসেবে যেমন কাজ করে, তেমনি চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়, প্রাণহীন ও রুক্ষ চুলে আনে প্রাণের ছোঁয়া। ড্যানড্রাফ, সোরিয়াসিস এসব স্কাল্প ডিজিজে নারিকেল তেল ওষুধের মতো কাজ করে। এ ছাড়া রিফাইন্ড নারিকেল তেল চুলের মতো ত্বকের জন্যও একটি নিরাপদ ময়েশ্চারাইজার। এটি এতই নিরাপদ যে, চোখের নিচের সংবেদনশীল স্থানেও ব্যবহার করা যায় নিশ্চিন্তে। আন্ডার আই ডার্ক সার্কেল হালকা করার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের আর্দ্রতাও বাড়িয়ে দেয়। আবার মেকআপ রিমুভে নারিকেল তেলের জুড়ি নেই। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, হিউমিডিটি, রাস্তার ধুলাবালু, রোদের প্রখরতা- এসব ত্বকের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। তাই প্রতিদিন কাজ শেষে ঘরে ফিরে কটন বল তেলে দিয়ে ত্বক পরিস্কার করলে লোমকূপে ময়লা জমবে না, ত্বকও থাকবে পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ। নারিকেল তেলের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে স্ট্ক্রাব বানিয়ে হালকা ঘষলে মুখের বহিঃস্তরের মৃত কোষ দূর হবে। ফলে ত্বক হবে আরও উজ্জ্বল এবং দ্যুতিময়।

জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল:

গ্রিক মহাকবি হোমার অলিভ অয়েলকে তুলনা করেছেন তরল স্বর্ণের সঙ্গে। একসময় ইউরোপে অলিভ অয়েল তৈরি হলেও এখন সারাবিশ্বেই এ তেল বেশ জনপ্রিয়। এ যুগের মেয়েদের রূপচর্চায় অলিভ অয়েল ছাড়া যেন চলেই না। আজকাল ক্রিম, লোশন, শ্যাম্পু অনেক প্রসাধনীতে ব্যবহূত হচ্ছে এই তেল। এটা অতি সহজেই ত্বকের গভীরে পৌঁছে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। এর ক্লিনজিং ইফেক্টের কারণে ত্বকে ময়লা জমতে পারে না। রাতে শোবার আগে অলিভ অয়েল মুখে ও ঘাড়ে ম্যাসাজ করে একটি টিস্যু পেপার দিয়ে হালকা করে মুছে নিলে অতিরিক্ত তেল শুষে নেবে এবং ভালো নাইট ক্রিম হিসেবে কাজ করবে। ডার্মাটোলজিস্টরা ত্বকের ফাটা দাগ বা স্ট্রেস মার্কে অলিভ অয়েল ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এসব ফাটা দাগে নিয়মিত ম্যাসাজ করলে দাগগুলো ধীরে ধীরে হালকা হয়ে যায়। যারা বাচ্চা নিতে ভয় করেন, তারা শুরু থেকেই রাতে শোবার আগে ও গোসলের পর পেট ও থাইয়ে অলিভ অয়েল ব্যবহার শুরু করতে পারেন। যা অ্যান্টি স্ট্রেস মার্ক ক্রিম হিসেবে কাজ করবে। ড্যামেজ চুল ও নখের কিউটিসল রিপেয়ারে এর ভূমিকা অতুলনীয়।

কাঠবাদাম তেল বা আমন্ড অয়েল:

এই তেলে চিটচিটে ভাব থাকে না। ত্বক, চুল ও নখের যত্নে এটি জাদুর মতো কাজ করে। মেয়েদের কাছে আমন্ড অয়েল বেশ সমাদৃত। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এ তেল নিয়মিত ব্যবহারে আপনি অতি সহজেই পেতে পারেন কোমল, মসৃণ, দাগহীন উজ্জ্বল ত্বক। রোদে পোড়া কালো দাগ, অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস, এসব চর্মরোগের চিকিৎসায় ব্যবহূত হয় কাঠবাদাম তেল। যারা আন্ডার আই ডার্ক সার্কেল সমস্যায় ভুগছেন, প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে চোখের নিচে আমন্ড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। শুধু তাই নয়, শুষ্ক ঠোঁটে আমন্ড অয়েল ব্যবহারে ঠোঁট ফাটা সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এটি চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়, চুলপড়া ও আগা ফাটা সমস্যার সমাধান করে এবং চুলকে করে ঘন, কালো, সিল্কি ও ছন্দময়।

লেখক: ডার্মাটোলজিস্ট, শিওর সেল মেডিকেল (বাংলাদেশ) লি.

You may also like