Home ধর্ম শাহাদাতে কারবালা ও মুসলমানদের করণীয়

শাহাদাতে কারবালা ও মুসলমানদের করণীয়

by Amir Shohel

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরির ১০ মহররম কারবালায় হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা ঘটে। নিঃসন্দেহে তাঁর শাহাদাত তাঁর জন্য উঁচু মাকাম ও উচ্চ মর্যাদার বিষয়। কিন্তু উম্মতের জন্য তা হয়ে গেছে অনেক বড় পরীক্ষার বিষয়। ওই ঘটনা মানুষ ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারে না। স্মরণ রাখতে হবে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের আগেই ইসলামী শরিয়ত পূর্ণতা লাভ করেছে। কিয়ামত পর্যন্ত এই শরিয়ত পূর্ণাঙ্গরূপেই সংরক্ষিত থাকবে। আল্লাহ তাআলা নিজে এই শরিয়ত, শরিয়তের দলিল ও দলিলের উৎসগুলো রক্ষা করার ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামী শরিয়ত যেভাবে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে আজ পর্যন্ত সেভাবেই সংরক্ষিত আছে। সুতরাং সে অনুযায়ী সবার আমল করা জরুরি। তাতে কোনো ধরনের সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ নেই। অতএব রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর সংঘটিত কোনো বিপদ বা আনন্দের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো দিন বা কোনো মাসের নতুন কোনো মর্যাদা বা নতুন কোনো বিধান আবিষ্কার করা যাবে না। এমন করা হলে তা হবে পরিষ্কার বিদআত ও গোমরাহি।

দুঃখ ও আনন্দ উভয়টির বিধান শরিয়তে আছে। উম্মতের ওপর ওয়াজিব হলো ওই বিধান অনুযায়ী আমল করা। বিপদের সময় একজন বান্দার কী করণীয়, কী বর্জনীয়—সে সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে—‘আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের মৃত বোলো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না। আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়-ভীতি, জীবন-সম্পদের ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতির দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদের, যারা (এরূপ অবস্থায়) ধৈর্যের পরিচয় দেয়। যারা কোনো বিপদ দেখা দিলে বলে ওঠে, আমরা সবাই আল্লাহরই এবং আমাদের তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়া আছে এবং এরাই আছে সুপথের ওপর প্রতিষ্ঠিত। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৪-১৫৭)

তাই শাহাদাতের মতো বিরাট বিপদেও শরিয়তের হুকুম হলো, মুসিবতগ্রস্ত লোকেরা সবর করবে। ‘ইন্না লিল্লাহ…’ পড়বে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে সওয়াবের আশা করবে।

কারো ইন্তেকালে ইসলামের বিধান হলো ধৈর্য ধারণ করা। এমনকি ইসলামী শরিয়ত ধৈর্য ধারণের দোয়াও শিখিয়ে দিয়েছে। যেমন—

১. সব মানুষ আল্লাহর : ইরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ যাকে উঠিয়ে নিয়েছেন সে তাঁরই। যাকে রেখে দিয়েছেন সেও তাঁর। তাঁর কাছে প্রত্যেক জিনিসেরই নির্ধারিত মেয়াদ আছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৮৪)

২. আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কথা নয় : হাদিসে এসেছে, ‘চোখ অশ্রুবর্ষণ করছে। মন অস্থির হয়ে উঠছে। তবে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ডেকে আনে এমন কোনো কথা আমরা বলব না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩০৩)

৩. সওয়াবের আশা : ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর। তাঁর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ, আমাকে এই বিপদের সাওয়াব দান করুন। যা হারিয়েছি আমার জন্য তার চেয়ে উত্তম কিছুর ব্যবস্থা করুন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯১৮)

৪. উত্তম বিনিময় প্রত্যাশা করা : ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর। আমাদের তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছেই আমার বিপদ-আপদের বিনিময় চাই। সুতরাং আমাকে এর বিনিময়ে সওয়াব দান করুন এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬৩৪৩

৫. অসংযত আচরণ না করা : অধৈর্য হয়ে অভিযোগপূর্ণ কোনো কথা বলা, বিলাপ করা, হাত-পা আছড়ানো, বুক চাপড়ানো, চেহারা খামচানো, শোকের পোশাক পরা হারাম। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখে আঘাত করে, জামার বুক ছিঁড়ে, জাহেলি যুগের বিলাপ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৯৪) (সংক্ষেপিত)

আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

You may also like