Home সারাদেশ সড়কে ঝরল আরেক শিক্ষার্থীর লাশ

সড়কে ঝরল আরেক শিক্ষার্থীর লাশ

by Imtiaz Ahmed

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থী ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে নোয়াখালী শহরের সোনাপুর জিরো পয়েন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত অজয় মজুমদার (২৩) নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মধ্য চরবাটা এলাকার বাদল চন্দ্র মজুমদারের ছেলে ও নোবিপ্রবির ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাঁরা সোনাপুর জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সোনাপুর-মাইজদী সড়ক অবরোধ করেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের আজ বুধবারের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থী হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ করবেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে সোনাপুর জিরো পয়েন্ট থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে (অটো) মান্নাননগরের দিকে যাচ্ছিলেন অজয়। এ সময় জিরো পয়েন্টেই বিপরীত দিক থেকে একটি দ্রুতগতির ট্রাক অটোরিকশাটির সামনে এসে পড়ে। চালক অটোটি দ্রুত ট্রাকের সামনে থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে অটো থেকে ছিটকে সড়কে পড়েন অজয়। এর পরই ট্রাকটির চাপায় গুরুতর আহত হন তিনি। স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সক মৃত ঘোষণা করেন। সুধারাম থানার ওসি মো. সাহেদ উদ্দিন জানান, ঘাতক ট্রাকটি তারা আটক করেছেন।

অজয়ের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোক প্রকাশ করেছেন। উপাচার্য মো. দিদার-উল-আলম বলেন, ‘একটি সম্ভাবনাময় তরুণ মারা গেল। আমরা তার পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করব।’

বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে অজয় হত্যার বিচারসহ ১৫ দিনের মধ্যে সোনাপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সড়ক সংস্কার, নিরাপদ সড়ক, সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া কমানো, বাসের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ কয়েক দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

সন্ধ্যায় সেখানে উপস্থিত হন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম খান, পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম, উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ মো. ফারুক উদ্দিন, প্রক্টর নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে জেলা প্রশাসক বলেন, শিক্ষার্থী মৃত্যুর বিষয়টি মর্মান্তিক। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে এবং ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।

পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা আপনাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি। সড়কের অবস্থা আসলেই খুব খারাপ। সড়কের দায়িত্বে থাকা লোকদের সঙ্গে কথা বলেছি। বৃহস্পতিবার থেকেই কাজ শুরু হবে।’

এ সময় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সব দাবি পূরণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ শিক্ষার্থীরা সড়কে শান্তিপূর্ণ মিছিল করে আন্দোলন শেষ করেন।

অজয় মজুমদারের মৃত্যুতে স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল ও বাড়ির পরিবেশ। তিন ভাই-বোনের মধ্যে অজয় মেজো। দুবাইপ্রবাসী বাবা বাদল চন্দ্র মজুমদার মৃত্যুর ঘটনা জেনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। মা পাপিয়া মজুমদার শোকে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। বোন প্রীতিলতা মজুমদারের কান্না থামছিলই না। ময়নাতদন্ত শেষে রাতেই অজয়ের লাশ বাড়িতে নেওয়া হয়। রাতেই সেখানে তাঁর সত্কার হওয়ার কথা।

ভয়েসটিভি/এমএম

You may also like