Home সারাদেশ ইতিহাস ঐতিহ্যে শেরপুর জেলা

ইতিহাস ঐতিহ্যে শেরপুর জেলা

by Newsroom
শেরপুর

ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষা শেরপুর জেলা ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। প্রাকৃৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি ও ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর জেলাটি।

১৮২৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এটি ঢাকা বিভাগের অধিনে ছিল। পূর্বে জামালপুর জেলার একটি মহকুমা ছিল শেরপুর। ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এটিকে জেলায় উন্নীত করা হয়। যার আয়তন এক হাজার ৩৬৪ দশমিক ৬৭ বর্গ কিলোমিটার এবং ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্যানুযায়ী জনসংখ্যা প্রায় ১৩ লক্ষ ৩৪ হাজার জন।

রাজধানী ঢাকা থেকে ১৯৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত জেলাটি। যেখানে গারো, কোচ, হাজং, বর্মন, বানাই, ডালু ও হদিসহ সাতটি নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বাস রয়েছে।

জানা গেছে, শেরপুর অঞ্চল প্রাচীনকালে কামরূপা রাজ্যের অংশ ছিল। মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে এই এলাকা ‘দশকাহনিয়া বাজু’ নামে পরিচিত ছিল। পূর্বে শেরপুরে যেতে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিতে হত। খেয়া পারাপারের জন্যে দশকাহন কড়ি নির্ধারিত ছিল বলে এ এলাকা দশকাহনিয়া নামে পরিচিতি লাভ করে।

সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ভাওয়ালের গাজী, ঈসা খানের বংশধর থেকে দশকাহনিয়া এলাকা দখল করে নেয়। দশকাহনিয়া পরগনা পরবর্তীতে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজীর নামানুসারে শেরপুর নামে নামকরণ করা হয়।

১৯৬৯ সালে শের আলী গাজী স্মরণে বহিরাগত মেহমানদের স্বাগত জানাবার জন্যে স্থানীয় জি,কে পাইলট বিদ্যালয়ের পূর্র্ব দক্ষিণে রাস্তার উপর একটি তোরণ নিমার্ণ করা হয়। যা এখনও মোগল আমলের স্থাপত্য শিল্পের নমুনা ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে।

ওয়ারেন হেস্টিংস থেকে কর্ণওয়ালিসের সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং স্থানীয় জমিদারদের বিরুদ্ধে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ অনুষ্ঠিত হয়। ফকির আন্দোলনের নেতা টিপু শাহ এই এলাকায় সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেন এবং গরজরিপায় তার রাজধানী স্থাপন করেন।

খোশ মুহাম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে শেরপুরের কামারের চরে ১৯০৬, ১৯১৪ ও ১৯১৭ সালে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৩৮-৪৮ সালে নানকার, টঙ্ক, বাওয়ালী, মহাজনী, ইজারাদারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শেরপুরে কমিউনিস্টরা বিদ্রোহ করে।

শেরপুর

১৮৯৭ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পশ্চিম দিকে পরিবর্তন করে এবং যমুনার সঙ্গে একত্রীকরণ হয়ে যায়। এতে অনেক প্রাচীন ভবনেও মারাত্মক ক্ষতি হয়।

বৃটিশ আমলে এবং পাকিস্তান আমলে নাম হয় শেরপুর সার্কেল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেরপুরকে ৬১তম জেলা ঘোষণা করেন। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তা স্থগিত হয়ে যায়।

১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শেরপুরকে মহকুমা, ১৯৮৪ সালে রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ শেরপুরকে জেলায় উন্নীত করেন। একই সঙ্গে জেলার পাঁচটি থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করেন। বর্তমানে ৫২টি ইউনিয়ন, ৪৫৮টি মৌজা, ৬৯৫টি গ্রাম, চারটি পৌরসভা, ৩৬টি ওয়ার্ড এবং ৯৯টি মহল্লা এ জেলায়।

জমিদারী আমলে ১৮৬৯ সালে শেরপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়। সে সময় শেরপুর পৌর ভবনের নাম ছিল চারু ভবন। চারু ভবন রাখার পেছনে রয়েছে একটি ইতিহাস।

জানা যায়, ১৯৩০ সালে হেমন্ত চন্দ্র চৌধুরী চেয়ারম্যান থাকাকালে পৌর ভবনের মূল অংশটি নির্মিত হয়। এ নির্মাণকাজে ব্যয় হয় ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়। এই টাকায় ভবনের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছিল না।

তখন হেমন্ত চন্দ্র চৌধুরী নিজেই এগিয়ে আসেন। তিনি তাঁর বাবা রায় বাহাদুর চারু চন্দ্র চৌধুরীর নামানুসারে পৌর ভবনটির নাম ‘চারু ভবন’ রাখার শর্তে অবশিষ্ট পাঁচ হাজার টাকা দান করেন। সেই থেকে শেরপুর পৌর ভবন চারু ভবন হিসেবে অভিহিত হয়ে আসছে।

লাল রঙের ইটের গাঁথুনিতে নির্মিত চারু ভবনের দেয়ালের কাজ অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এটির নিচ ও দোতলায় আছে যথাক্রমে পাঁচ ও দুটি করে কক্ষ। ভবনটির নিচ ও দোতলায় আছে কাঠের তৈরি আটটি দরজা ও ২০টি জানালা। চলতি বছরের গত ২৫ নভেম্বর বুধবার চারু ভবনকে যাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী বিষয়গুলোর মধ্যে আছে বর্তমান শেরপুর পৌর এলাকার কসবা নামের গ্রামটি। এর আরবী মুল শব্দ কসবাহ। এর অর্থ শহর হতে ছোট, কিন্তু গ্রামের মধ্যে বড় ও সমৃদ্ধশালী। বর্তমানে গ্রামটি ১৮টি মহল্লায় বিভক্ত। মোগল আমলে বাঙ্গলার সুবেদার শাহজাদা সুজা এ কসবাতেই তার আঞ্চলিক প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন।

শেরপুর

চারদিকে পরিখাবেষ্টিত মোগলবাড়ী, কাছারী পাড়া, তার পশ্চিমে কাঠগড়, তার উত্তর পশ্চিমে কাজীদের বসতবাড়ী কাজী গলী, কাজী গলী মসজিদ, দরবেশ শাহ কামালের দরগাহ, ধোপা ঘাট যেখানে ছিল ধোপাদের বাস, নাপিত বাড়ী নামের স্থানগুলোর মাধ্যমে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

যোগিনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক জুলহাস উদ্দিন বলেন, চরশেরপুরের যোগিনীমুড়া গ্রামে যোগিদের বাস ছিল। তারা শামুক থেকে মুক্তা আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত। যোগিদের নামমানুসারে এ গ্রামের নাম যোগিনীমুড়া হয়।

তিনি আরও বলেন, নাগপাড়া একসময় ঝোপ-জঙ্গলে ভরা ছিল। আর এই জঙ্গলে থাকত বিভিন্ন ধরণের সাপ। সাপের আধিক্যের কারণেই এ গ্রামের নাম নাগপাড়া। নাগপাড়ার পরের গ্রামটি তুলনামুলক উঁচু এবং বন্যার সময় পানি ওঠে না। তাই এ গ্রামের নাম রাখা হয় কান্দাপাড়া। আর কাজির চরে অনেক বিচারক, গ্রাম্য মাতাব্বরদের বাড়ি ছিল। তাই অই এলাকার নাম কাজির চর হয়।

মানবাধিকার কর্মী আরিফুর রহমান আকিব বলেন, মোবারকপুরের গারো পাড়ায় এক সময় অনেক গারোরা বাস করত। পর্যায়ক্রমে তারা সবাই বাবলাকোনা, হারিয়াকোনা, বাকাকুড়া, দুধনই, ডেফলাই, কালাকুমাসহ গারোপাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। গারোদের নামানুসারে এখানকার নাম হয় গারোপাড়া।

বর্তমানে গারো পাড়ার নাম পরিবর্তন করে দক্ষিন মোবারকপুর রাখা হয়েছে। একইভাবে পার্শ্ববর্তী হদি পাড়ায় হদিদের বাস ছিল একসময়। তাই এখানকার নাম হদিপাড়া হয়। পরবর্তীতে হদিপাড়ার নাম নয়াপাড়া রাখা হয়েছে। তাছাড়া রামকৃষ্ণাপুরে হিন্দুদের বাস ছিল অনেক বেশি। তাই এ গ্রামের নাম রামকৃষ্ণাপুর রাখা হয়।

মোবারকপুর মহল্লার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমাদের মুরুব্বিরা বলেছেন শেরপুর শহরের প্রবেশদ্বার খোয়ারপাড়ার অদূরে বড় একটি খোয়াড় ছিল। আশেপাশের গ্রামগুলোতে কারর ক্ষেতে গরু, চাগল ফসল খেয়ে ফেললে ধরে এনে এই খোয়াড়ে রেখে যেত। আর এভাবেই এখানকার নাম খোয়ারপাড় হয়। সম্প্রতি খোয়াপাড় মোড়ে দৃষ্টি নন্দন শাপলা চত্বর বানানো হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, শেরপুর পৌর এলাকার উত্তরাংশে কালীগঞ্জে ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্ট ছিল। আসামের দক্ষিণাঞ্চল, পশ্চিমে দেওয়ানগঞ্জ হতে পূর্বে নেত্রকোনা পর্যন্ত বিচারকার্য ও শাসন সংরক্ষণ এ কেন্দ্র থেকেই সম্পন্ন হত। এই কালীগঞ্জেই সেনানিবাস ছিল এবং মোবারকপুর মহল্লার কোদালঝাড়া নামক উঁচু টিলার উপর সামরিক কসরৎ পরিচালনা করা হত।

বর্তমানে কোদালঝাড়া আর নেই। প্রাচীন এ টিলাটিকে প্রভাবশালী মহল কিনে নিয়ে মাটি কেটে সমতল ভূমি করে রেখেছে। কোদালঝাড়ার দক্ষিণে মীরগঞ্জে মৃগী নদীর পূর্ব তীরে থানা ছিল। পরবর্তীকালে থানা কার্যালয়টি শহরের পূর্ব দক্ষিণে স্থাপিত হয়। থানাঘাট নামটি এখনও রয়ে গেছে।

শেরপুর

কোদালঝাড়া নামের পিছনে রয়েছে অনেক কথা। মোবারকপুর মহল্লা ও কারীগঞ্জ মহল্লার অনেকেই বলেন, কোদালঝাড়া সংলগ্ম ইচলী বিল ও গড়জরিপার কালীদহ সাগর খননকালে শ্রমিকেরা এখানে একত্র হয়ে তাদের কোদালের মাটি ঝেড়ে ফেলত। তাতেই ঐ টিলাটির সৃষ্টি হয় এবং নামকরণ করা হয় কোদালঝাড়া।

কোদালঝাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ আলী বলেন, আমরা পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি যে, সেসময় জীনেরা কালীদহ সাগর খনন করে রাত্রি বেলায় এখানে এসে বিশ্রাম নিত। আর তখন তাদের কোদাল ও খাঁচার (ঝুড়ি) মাটি পড়ে এ টিলার সৃষ্টি হয়।

জনশ্রুতিতে আছে, সেকালে নদীপথে যাত্রার সময় কালীদহ সাগরে এসে চাঁন্দ সওদাগরের ডিঙ্গা ডুবেছিল। চারপাশে ঘন কাঁশফুলগাছে ঘেরা নৌকার আদলে কিছু একটা অনুমান করা যায় এখনও।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সাগরের পানি কমলে কিংবা বাড়লে পানির তালে সেই ডিঙ্গাটি ওঠানামা করে। খননকার্য চালালে হয়তো বেরিয়ে আসবে এ অঞ্চলের হাজার বৎসরের প্রাচীন সভ্যতার নানা উপকরণ। বর্তমানে সাগরটিতে তেমন পানি নেই এবং এর মাঝ দিয়ে ইন্দিলপুর বাজার হয়ে জাঙ্গালপাড়া পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। যা দিয়ে বার দুয়ারি মসজিদে যাওয়া যায়।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত শেরপুরবাসীর একটানা দীর্ঘ ১০০ বৎসরের সংগ্রামের ইতিহাস। এ সংগ্রাম প্রত্যক্ষভাবে পরিচালিত হয়েছিল প্রজাদের উপর জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং পরোক্ষভাবে অনেক ক্ষেত্রে ইংরেজ শাসনের উচ্ছেদকল্পে।

একসময় পাগলপন্থী নেতা টিপু পাগল শেরপুরের ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র স্থাপন করেছিলেন। কংশ নদীর তীরবর্তী লেটির কান্দা গ্রামে এখন তাঁর বংশধররা পাগল বাড়িতে বসবাস করছে। জমিদারদের অত্যাচারের বিরূদ্ধে প্রজারা প্রায় সময়ই আন্দোলনে লিপ্ত থাকত। আন্দোলনগুলোর মধ্যে ছিল বক্সারী বিদ্রোহ, প্রজা আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন ও ক্ষত্রিয় আন্দোলন।

সেসময় পল্লী ও শহর অঞ্চলে মক্তব-মাদ্রাসা, উচ্চ প্রাইমারি ও নিম্ন প্রাইমারি, জুনিয়র মাদ্রাসা, মাইনর স্কুল, সাংস্কৃতিক টোল ছিল। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিল না। শেরপুরের নয় আনী জমিদারদের উদ্যোগে সর্ব প্রথম একটি মধ্য ইংরেজী স্কুল স্থাপন করা হয়।

১৮৮৭ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার জুবিলী উৎসব উপলক্ষে স্কুলটিকে হাইস্কুলে উন্নীত করা হয়। নাম রাখা হয় ভিক্টোরিয়া একাডেমী। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে শেরপুর বালিকা বিদ্যালয়, ১৯৫৭ সালে সরকারী কৃষি প্রশিক্ষায়তন, ১৯৬৪ সালে শেরপুর কলেজ এবং পরে এস.এম. মডেল স্কুল, প্রতি উপজেলায় হাইস্কুল, স্বাধীনতার উত্তরকালে শেরপুর মহিলা কলেজ, ডাক্তার সেকান্দর আলী কলেজ, পলিটেকনিক স্কুল, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে।

শেরপুর

ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেরপুর তেরাবাজার জামিয়া সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসাটি জেলার বৃহত্তম কওমী মাদ্রাসা। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার কারিক্যুলাম অনুসারে এখানে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত শিক্ষাক্রম পরিচালিত হয়। প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে গড়জড়িপার বার দুয়ারী মসজিদ, মাইসাহেবার মসজিদ ও খরমপুর জামে মসজিদ তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রাচীন তিনটি মন্দিরের মধ্যে একটি শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউর মন্দির আড়াই আনী বাড়ির মহিলা কলেজ সংলগ্ন অপর দুটি যথাক্রমে শ্রী শ্রী মা ভবতারা মন্দির নয়আনী বাজারে এবং শ্রী শ্রী প্যারিমোহন মন্দির তিন আনী বাড়ির শেরপুর কলেজ সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। শেরপুর রোটারি ক্লাব ও রেড ক্রিসেন্ট রোডে শনি মন্দিরটি অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ।

সেসময় শেরপুর পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী চারটি বাজার প্রতি সপ্তাহে বসত। সেগুলি ছিল নয়আনী বাজার, রঘুনাথ বাজার, তেরাবাজার ও তিনানী বাজার। পৌরসভার দক্ষিণ পশ্চিম কোণায় শহরের বড় একটি পাট গুদাম ছিল।

বর্তমানে শেরপুরে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে, গজনী অবকাশ কেন্দ্র, মধুটিলা ইকোপার্ক, রাজার পাহাড় ও বাবেলাকোনা, মরিয়ম নগর গীর্জা, পানিহাটা দিঘী, পানিহাটা-তারানি পাহাড়, সীমান্ত সড়ক, চেল্লাখালী রাবার ড্যাম, অর্কিড পর্যটন কেন্দ্র (আজাহারের কলাবাগান), মাই সাহেবা জামে মসজিদ, ফসিহ্ উদ্দিন (রহ:) এর মাজার, শের আলী গাজীর মাজার, শাহ কামালের মাজার, কসবা মুঘল মসজিদ, ঝিনাইগাতীর ঘাঘড়া খান বাড়ি জামে মসজিদ, গড়জরিপা বার দুয়ারী মসজিদ, গড়জরিপা কালিদহ গাং এর ডিঙি, জরিপ শাহ এর মাজার, গোপী নাথ ও অন্নপূর্ণা মন্দির, নকলার ঐতিহাসিক বেড় শিমুল গাছ প্রভৃতি।

প্রবীন রাজনৈতিক ব্যক্তি আমান আলী মেম্বার বলেন, স্বাধীনতার পর শেখ সাহেব শেরপুরকে জেলা করার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে জিয়া সরকার মহকুমা এবং এরশাদ সাব জেলা ঘোষণা করেন। আগে শেরপুর জেলা শহরে প্রতিদিন দোকানপাট খোলা থাকতো না। সাপ্তাহিক হাট বসত। বর্তমানে চন্দ্রকান্ত স্কুল যেখানে সেখানে সাপ্তাহিক বড় হাট ছিল। চরাঞ্চল থেকে লোকজন গরু, ঘোড়া ও মহিষের গাড়িতে হাটে আসতো। তাদের বাহন বলতেই কেবল এসব গাড়িই ছিল।

দমদমা কালীগঞ্জের বাসিন্দা ও রাজনৈতিক ব্যক্তি গোলাম রাব্বানী সাধু বলেন, আমরা শুনেছি একসময় দমদমায় জাঁকজমক হাট বসত। অনেক বড় পাটের গুদাম ছিল। চরাঞ্চলের লোকজন মৃগী নদী দিয়ে বড়বড় নৌকা করে পাট নিয়ে এসে এই গুদামে বিক্রি করত।

আমাদের কালীগঞ্জে ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্ট ছিল। সেসময় এখানে সেনানিবাসও ছিল। আসামের দক্ষিণাঞ্চল, পশ্চিমে দেওয়ানগঞ্জ থেকে পূর্বে নেত্রকোনা পর্যন্ত বিচারকার্য ও শাসন সংরক্ষণ এ আদালত থেকেই পরিচালিত হতো।

আরও পড়ুন : শেরপুরে যাদুঘর উদ্বোধন

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like