Home অর্থনীতি সবজির সঙ্গে দাম বাড়ছে মুরগি পেঁয়াজ আদারও

সবজির সঙ্গে দাম বাড়ছে মুরগি পেঁয়াজ আদারও

by Amir Shohel

শীতকালীন সবজি আগাম পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। তবে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিমসহ বেশিরভাগ সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার ওপরে। সবজির এই চড়া দামের মধ্যে নতুন করে দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের।

সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া কেজিতে রসুনের দাম ২০ টাকা এবং আদার দাম ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে।

ব্রয়লার মুরগির দামের বিষয়ে নিউ মার্কেট কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, ঈদের পর থেকেই ব্রয়লার মুরগি কম দামে বিক্রি হচ্ছিল। এতো দিন আমরা ১১০-১১৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। কিন্তু পাইকারিতে এখন ব্রয়লারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। যে কারণে কেজি ১২৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

আজিমপুরে ১২০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা মোশাররফ বলেন, কুরবানির ঈদের পর থেকে অনেক দিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা একেবারে কম ছিল। তবে সপ্তাহ দুই ধরে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেড়েছে। এ কারণেই হয়তো এখন দাম বাড়ছে। তবে সবজি বাজারের সঙ্গে তুলনা করলে দাম এখনো কমই আছে।

পেঁয়াজ নিয়ে কাণ্ডকারখানা কম হয়নি। গতবছর পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকায় উঠেছিল। যদিও পরবর্তীতে নানামুখী প্রচেষ্টায় পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় নেমে আসে। প্রায় দুই মাস ধরে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল। তবে এখন নতুন করে দাম বেড়ে তা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হয়েছে।

দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি দাম বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে।

মহামারি করোনা প্রকোপের শুরুতে ভোগানো আদার দাম যেন আবার পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে। দফায় দফায় দাম বেড়ে আদার কেজি আবার ২৫০ টাকায় উঠেছে। অবশ্য কোনো কোনো বাজারে ২০০ টাকা কেজিতেও আদা বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এসব বাজারে ১৭০ টাকা কেজিতে আদা বিক্রি হয়েছে।

দাম বাড়ার এ তালিকায় থাকা দেশি রসুনের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। আর ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা রসুনের দাম বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে।

হাতিরপুলের ব্যবসায়ী মনোয়ার বলেন, আদার দাম দুই সপ্তাহ ধরে বাড়ছে। আজ নতুন করে আরও বেড়েছে। দেশি আদা এখন বাজারে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তার অর্ধেক নষ্ট। যে কারণে আমদানি করা আদার ওপরে নির্ভর করে বাজার চলছে। এ কারণে প্রায় প্রতিদিনই আদার দাম বাড়ছে। দুদিন আগেও আদার কেজি ১৭০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আদার সঙ্গে এখন নতুন করে দাম বাড়ছে পেঁয়াজ ও রসুনের। আমদানি করা রসুনের কেজি গত সপ্তাহে ৬০ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন ৭০ টাকার নিচে বিক্রি করার উপায় নেই। আর ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা হয়েছে। যে আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, পাইকারিতে দাম বাড়ায় তা এখন ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।

এদিকে শীতের আগাম সবজি শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২২০ টাকা। ছোট আকারের ফুলকপি, বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা। এছাড়া গত কয়েক সপ্তাহের মতো এখনো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি। উস্তের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। এছাড়া পটল, কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা পিস। ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা।

সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, বন্যা ও বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণেই সবজির দাম এমন চড়া। তবে বাজারে শীতের আগাম সবজি আসতে শুরু করেছে। আগাম সবজির সরবরাহ বাড়লে সবজির দাম কিছুটা কমতে পারে।

কারওয়ানবাজার থেকে বাজার করা খায়রুল হোসেন বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে সব ধরনের সবজির দাম চড়া। ৫০ টাকার নিচে তো কোনো সবজি পাওয়া যায় না। এক আঁটি শাক কিনতেও ২০ টাকা লাগে। এখন আবার নতুন করে আদা, পেঁয়াজ, রসুনের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে গেলে শুধুই অস্বস্তি। বাজারে কোনো কিছুর দাম স্বস্তি দিচ্ছে না।

মালিবাগ হাজীপাড়া থেকে বাজার করা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা তাপস কুমার বলেন, আমরা চারজন সহকর্মী মিলে একটি বাসায় থাকি। আগে খাওয়ার জন্য আমাদের যে খরচ হতো, গত মাসে তার দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। অথচ এ সময়ে আমরা খাওয়ার পরিমাণ বাড়ায়নি, বরং কমিয়েছি। তারপরও খরচের লাগাম টানতে পারিনি।

তিনি বলেন, চলতি মাসে খরচ আরও বেশি হবে মনে হচ্ছে। কারণ পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মুরগির দাম বেড়ে গেছে। আমরা প্রতি শুক্রবার ব্রয়লার মুরগি খাই। গত সপ্তাহে ১১০ টাকা কেজি কিনেছি। আজ ১২৫ টাকা কেজি কিনতে হলে। এভাবে বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি।

You may also like