Home সারাদেশ কারাগারে নয় বাড়িতেই থাকছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামি

কারাগারে নয় বাড়িতেই থাকছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামি

by Newsroom

মাদক মামলার এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাসান আলী সরদারের সময় কাঁটছে বাড়িতে। মা-বাবার সেবা, গাছ লাগানো ও মাদক বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে কাঁটছে সময় এই মাদক ব্যবসায়ীর।

তবে ফৌজদারি আইনের বিভিন্ন ধারা বিশ্লেষণ করে আদালত বলেছে, যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর। যদি কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় তাহলে তা দণ্ডিতের বাকি জীবন বলে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে ৩০ বছর কারাদণ্ডের সুবিধা আসামি পাবেন না।

সংশোধনের সুযোগ দিয়ে মাদক মামলায় ব্যতিক্রমী রায় দিয়েছেন সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক ইয়াসমিন নাহার।

হাসান আলী সরদার (৩৮) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালি ইউনিয়নের ভাদড়া গ্রামের রজব আলী সরদারের ছেলে।

বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হাসান আলী সরদার  কুল বাগানে কাজ করছেন,  নিজের বাগানে লাগিয়েছেন ১০টি মেহগনি গাছ।

আলী জানান, আদালত যে শর্ত দিয়ে আমাকে বাড়িতে থাকার সুযোগ দিয়েছে সেই সকল শর্ত আমি মেনে চলছি। গাছ লাগিয়েছি, কুলের বাগান করে ব্যবসা শুরু করেছি। মাদক বিরোধী প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি। মা-বাবার সেবা করছি। যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, আমাকে দেখে শিখুন। মাদক ভালো জিনিস নয়, সমাজকে ক্ষতি করে। আপনারা ভালো হয়ে যান।

হাসান আলীর বাবা রজব আলী সরদার ও মা আকলিমা খাতুন জানান হাসান এখন অনেক বদলে গেছে। মাঠে-ঘাটে কাজ করে। আমাদের খোঁজখবর নেয়, সেবাযত্ন করে এতে আমরা খুশি।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ হুসাইন জানান, আদালতের শর্ত মেনে গাছ লাগানো, মাদক বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। সামাজিক মানুষদের সঙ্গে চলাফেরা করছে। হাসানের মত যদি সকলেই মাদককে না বলে মাদক বিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করে তবে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল হবে।

মাদক মামলাটি পরিচালনাকারী আসামী পক্ষের আইনজীবী এটিএম ফখরুল আলম জানান, তিন কেজি গাজাসহ আটকের পর র‌্যাব সাতক্ষীরা সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মাদক মামলা দায়ের করে। মামলার জিআর নং ৪৩/১৫ (টিআর ২৯/১৬)। গত ১০ নভেম্বর মামলাটির রায় ঘোষণা করে আদালত। আদালত আসামীকে এক বছরের সাজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশনে পাঠিয়েছেন সংশোধনের জন্য। সেখানে পাঁচটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। শর্ত ভঙ্গ করলে আসামীকে আবারও কারাগারে যেতে হবে। শর্ত মানলে, সাজা বাতিল হবে। তাছাড়া জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তাকে তিন মাস পর পর একটি রিপোর্ট দাখিল করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে আদালত।

সাতক্ষীরা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা সুমনা শারমিন ভয়েস টেলিভিশনকে জানান, এখন ছেলেটি অনেক ভালো কাজ করছে। আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। সেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে নিয়মিত। এখন মাছের ঘের করাসহ যে সকল শর্তে তাকে প্রবেশনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে সে সকল শর্ত মেনে কাজ করছে। গাছ লাগিয়েছে, মাদক বিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।

৭ বছর আগে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন হাসান আলী। ২০১৫ সালে তিন কেজি গাঁজাসহ সাতক্ষীরা সদরের খানপুর বাজার এলাকা থেকে র‌্যাবের হাতে আটক হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন।

গত ১০ নভেম্বর স্বাক্ষী শেষে সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক ইয়াসমিন নাহার মামলার রায় ঘোষনা করেন। রায়ে এক বছর সাজা প্রদান করে পাঁচটি শর্তে আসামীকে প্রবেশনে বাড়িতে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। শর্তগুলো হলো- কোনো প্রকার মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করবে না। কোনো খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে মিশবে না। প্রবেশনকালীন সময়ে ১০টি বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। পিতা-মাতার সেবা করতে হবে। সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন মাদকের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে হবে। শত ভঙ্গ করলে আসামীকে আবারও যেতে হবে কারাগারে। শর্ত সঠিকভাবে পালন করলে এক বছরের সাজা বাতিল হয়ে যাবে।

 

ভয়েস টিভি/ডিএইচ

You may also like