Home ভ্রমণ সাজেক যেতে খেয়াল রাখতে হবে যেসব বিষয়

সাজেক যেতে খেয়াল রাখতে হবে যেসব বিষয়

by Newsroom

মেঘ ও পাহাড়ের লুকোচুরি খেলার এক অনিন্দ নিসর্গ সাজেক। প্রকৃতি এখানে ক্ষণে ক্ষণে তার রূপ বদলায়। মেঘের পাল তোলা তরী এসে ভিড়ে পাহাড়ের গায়ে। কখনো তীব্র শীত, আবার মুহূর্তেই বৃষ্টি। চোখের পলকেই চারপাশ ঘোমটা টানে সাদাকালো মেঘে।

এ যেন মেঘের উপত্যকা। মেঘেদের এ রাজ্যে নিজেকে মনে হয় একজন বাসিন্দা। হয় তো মনের অজান্তেই খুঁজতে থাকবেন সাদা মেঘের পরি অথবা মেঘের মধ্যে পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় ছুটে চলা রাজপুত্রকে। মন উদাস হয়ে হারিয়ে যাবে কোনো অচিন রাজ্যে, খুঁজে ফিরবে মানস পটে আঁকা প্রিয়জনকে। এটা এক ভিন্ন বাংলাদেশ।

বর্ষা পেরিয়ে শরৎ এসেছে। যদি আপনি মেঘের আর পাহাড়ের লুকোচুরি দেখতে চান, ছুঁয়ে দেখতে চান মেঘের পরীকে, অবগাহন করতে চান পেঁজা কুয়াশার অতল গহীনে; এটাই সাজেকে ঘুরার উপযুক্ত সময়।। এসময়ে পাহাড় আর মেঘের মিতালী অনূভব করতে পারবেন একান্তে।

এবার বলি সাজেকের কথা। সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাহাড়। চূড়ায় উঠতে উঠতে চোখের সামনে ভেসে উঠবে মিজোরাম সীমান্তের পাহাড় আর সবুজের মোহনীয় মিতালী। কংলাকের চূড়ায় উঠে চারপাশে তাকালে সত্যি সত্যি ভুলে যাবেন কিছু আগেও আপনি ছিলেন কোনো যান্ত্রিক নগরে দূষিত বাতাস, শব্দ এবং কর্কট সমাজে। আপনার মন, প্রাণ, দেহ পুলকিত হবে এক বিশুদ্ধ চিন্তা এবং অনুভূতিতে।

সূর্যোদয় ও অস্ত দেখার সুখানুভূতি সারাজীবন মনে রাখবেন। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অ-কবিও কবি হয়ে ওঠেন, অ-প্রেমিকও হয়ে ওঠেন প্রেমিক, একজন সচেতন ও অবচেতনে হয়ে ওঠেন উন্মাতাল, গুনগুন গান ধরেন মনের অজান্তে। একজন বৃদ্ধও সবুজের সুরা পান করে হয়ে ওঠেন তেজোদীপ্ত তরুণ।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর এবং জনপ্রিয় স্থান সাজেক ভ্যালি। বাংলাদেশের বৃহত্তম এ ইউনিয়নটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। এ ইউনিয়ন ভারতের ত্রিপুরা-মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকা। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৮০০ ফুট।

অবস্থান রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি থেকে এখানে যাতায়াত অনেক সুবিধাজনক। কারণ খাগড়াছড়ি দীঘিনালা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। তাই ভ্রমণ পিপাসুরা দীঘিনালা থেকেই সাজেক যেতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। সময়-সুযোগ পেলে ঘুরে আসতে পারেন এ নৈসর্গিক উপত্যকায়।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি রুটে বিভিন্ন পরিবহনের বাস চলাচল করে। বাসগুলো রাজধানী থেকে ছেড়ে কুমিল্লা, ফেনী পার হয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই হয়ে খাগড়াছড়ি পৌঁছায়। এতে সময় লাগে ৮ ঘণ্টার মতো। আপনি ব্যক্তিগত গাড়িতেও যেতে পারেন।

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে হবে খোলা জিপে, যা চান্দের গাড়ি নামেই পরিচিত। দুদিনের জন্যে ভাড়া করলে আপনাকে গুণতে হবে সাড়ে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। চান্দের গাড়িতে আসন সংখ্যা ১২টি।

সাজেক যেতে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে দীঘিনালা। দীঘিনালা নেমে আধাঘণ্টার জন্য ঘুরে আসতে পারেন হাজাছড়া ঝর্ণা থেকে, সেরে নিতে পারেন গোসলটাও। কারণ সাজেকে পানির খুব অভাব। তবে চিন্তার কিছু নেই, গোসল ও অন্যান্য কাজের জন্য দরকারি পানি প্রতিদিন ট্রাকে করে পৌঁছে যায় সাজেকে। পানি ব্যবহারে সাজেকে আপনাকে মিতব্যয়ী হতে হবে।

খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালার দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। দীঘিনালা থেকে বাকি রাস্তা আপনাকে যেতে হবে সামরিক বাহিনীর এসকর্টে। দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকর্ট শুরু হয় সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। তাই ওই সময়ের আগেই আপনাকে পৌঁছতে হবে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায়। সকালের এসকর্ট মিস করলে অপেক্ষা করতে হবে বিকেল অবধি।

দীঘিনালা থেকে বাগাইহাট ও মাচালংহাট হয়ে সরাসরি পৌঁছে যাবেন সাজেক। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যেতে সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতো। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ধরে চলা এ ছোট জার্নিটি সাজেক ট্যুরের অন্যতম আকর্ষণ। চারদিকে শুধু পাহাড় আর হরিতের সমারোহ আপনাকে ভুলিয়ে দেবে পথের ক্লান্তি।

যেভাবে ঘুরবেন

সাজেক পৌঁছে খাওয়া-দাওয়া করার পর দীর্ঘযাত্রার শেষে আপনাকে একটু বিশ্রাম নিতেই হবে। এছাড়া সাজেকের কাঠফাঁটা দুপুরের রোদে ঘোরাঘুরি না করে অপেক্ষা করাই ভালো। বিকেলে জিপে করে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সাজেক ভ্যালির আরও ভেতরে। সেখানে একটু উঁচু টিলায় উঠলেই উপভোগ করতে পারবেন সূর্যাস্ত।

সাজেকের সন্ধ্যা নামে অপরূপ এক সৌন্দর্য নিয়ে। দেখবেন মেঘমুক্ত নীলাকাশ একটু একটু করে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে আর মিটিমিটি করে জ্বলে উঠছে একটি দুটি করে তারা। আস্তে আস্তে শত সহস্র তারা চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠবে। সন্ধ্যার তারা ভরা আকাশ দেখতে দেখতে মৃদুমন্দ হাওয়ায় চায়ের কাপে চুমুক দিলে আপনার হৃদয়ে যে অনুভূতি আসবে, সেটাই হতে পারে আপনার সাজেক ভ্রমণের সবচেয়ে বড় আনন্দ।

যারা তারা দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য সাজেক খুবই আদর্শ একটি জায়গা। এমনকি যারা এখনও মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ দেখেননি, তারাও সাজেক ভ্যালিতে এসে জীবনে প্রথমবারের মতো দেখা পেতে পারেন আকাশগঙ্গার।

আরও পড়ুন: সৌন্দর্যের মূর্ত প্রতীক ‘গজনী অবকাশ কেন্দ্র’

ভোরে সূর্যোদয় দেখতে চাইলে হ্যালিপ্যাডে চলে যাবেন অবশ্যই। সেজন্যে উঠতে হবে খুব ভোরে, আর চলে যেতে হবে এক বা দুই নম্বর হ্যালিপ্যাডে। সাজেকে সূর্যোদয়ের সময় সোনালি আভা সাদামেঘের ওপর যখন ঠিকরে পড়ে, তখন অসাধারণ একদৃশ্যের অবতারণা হয়।

যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন-

  • সঠিক সময়ে এসকর্টস্থলে হাজির হওয়া।
  • মনে রাখবেন সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের ছবি তোলা যাবে না।
  • স্থানীয়দের সঙ্গে ছবি তোলার আগে অবশ্যই অনুমতি নেবেন।
  • ছুটির দিনে কটেজ পাওয়ার ঝামেলা এড়াতে একমাস আগে বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন।
  • যোগাযোগের জন্য রবি, এয়ারটেল বা টেলিটক সিম সঙ্গে রাখবেন।
  • সঙ্গে অবশ্যই অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র রাখবেন।
  • সঙ্গে করে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যাবেন। সব সময় বিদ্যুৎ নাও পেতে পারেন।
  • জিপের ছাদে বা মোটরসাইকেলে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন।
  • দুই-তিন দিনের জন্যে সাজেক গেলে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করার দরকার নেই। সাধারণ যাত্রীর মতই যাবেন, পয়সা বাঁচবে।
  • শুধু যাওয়ার জন্যেই গাড়ি নিবেন। আসার সময় অন্য গাড়িতে আসতে পারবেন।
  • দীঘিনালা থেকে ফোন করেও গাড়ি নিতে পারবেন।

বাড়তি পাওনা হিসেবে দেখতে পারেন

সাজেকের পাশাপাশি ঘুরে দেখতে পারেন খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝর্ণা, দেবতার পুকুর, হর্টিকালচার পার্ক, তৈদুছড়া ঝর্ণা, বিডিআর স্মৃতিসৌধ, মায়াবিনী লেক ও শান্তিপুর অরণ্য কুঠির।

উপপ্রধান তথ্য অফিসার, আঞ্চলিক তথ্য অফিস, পিআইডি, চট্টগ্রাম।
faruque_dewan@yahoo.com,

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like