Home ভিডিও সংবাদ সাতক্ষীরার প্রথম উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ

সাতক্ষীরার প্রথম উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ

by Amir Shohel

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলার রাজারবাগান এলাকায় অবস্থিত একটি স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ’।এই কলেজটি বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত এবং সাতক্ষীরা জেলার প্রথম উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ব্রিটিশ আমলে উচ্চ শিক্ষার জন্য সাতক্ষীরায় কোন কলেজ ছিল না। উচ্চ শিক্ষার জন্য সাতক্ষীরা এলাকার শিক্ষার্থীদের খুলনা, বাগেরহাট ও পার্শ্ববর্তী কলকাতায় গিয়ে লেখাপড়া শিখতে হতো। ১৯৩৬-১৯৪০ সালের সাতক্ষীরার তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক পি.সি মজুমদার, সাতক্ষীরা পৌরসভার চেয়ারম্যান লীলাপদ মজুমদার, শিক্ষানুরাগী আব্দুল বারী খান, নিরোধ চ্যাটার্জী, আব্দুর রউফ খান, আব্দুল হাফিজ খান, মীর আহম্মদ আলীসহ অনেকেই সম্মিলিতভাবে সাতক্ষীরায় একটি কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন।

১৮৪২ সালে সর্বপ্রথম কয়েকটি থানা সমন্বয়ে প্রশাসনিক একক হিসেবে মহকুমা তৈরি হয়। ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারির ১ম সপ্তাহে সুলতান আহমেদ মহকুমা প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়ে সাতক্ষীরা পরিদর্শনে আসেন এবং তাকে কলেজ সম্পর্কে অভিহিত করা হলে তিনি কলেজ স্থাপনের উপর গুরুত্ব দেন। তিনি পূর্বের কমিটিতে এম.এ গফুর, আব্দুল বারী খান এবং অরবিন্দু নাথ মহোদয়বৃন্দদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কলেজ প্রতিষ্ঠা কমিটির অন্যতম সদস্য হরিচন্দ্র ঘোষের বিশেষ উদ্যোগে ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৪৬-৪৭ শিক্ষাবর্ষে কেবল উচ্চ মাধ্যমিক মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ খোলার অনুমোদন লাভ করে। ১৯৫০-৫১ শিক্ষাবর্ষ হতে উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান ও স্নাতক কলা বিভাগ খোলার অনুমোদন লাভ করে। ১৯৬৫ সালে কলেজে স্নাতক বাণিজ্য বিভাগ খোলার অনুমোদন পেলে ১৯৬৬ সালে ডিগ্রী বাণিজ্য নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়।

১৯৬৯-৭০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক বিজ্ঞান বিভাগ খোলা হলে সেখান থেকে সাতক্ষীরা কলেজ একটি পূর্ণাঙ্গ স্নাতক পর্যায়ের কলেজে হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজটি ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৮০ সালের পহেলা মার্চ জাতীয়করণ করা হয়।

১৯৯৪-৯৫ সালে অনুমোদন হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ। এরপর ১৯৯৮-৯৯ সালে বাংলা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, দর্শন, হিসাববিজ্ঞান ও প্রাণিবিদ্যার অনুমোদন লাভ করে। ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে ইংরেজি, ইতিহাস, উদ্ভিদবিদ্যা। শিক্ষাবর্ষ ২০১০-১১ সালে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও ভূগোল বিভাগ অনুমোদন হয়।এছাড়া এখানে স্নাতকোত্তর বিষয় সংখ্যা রয়েছে ৫ টি।শিক্ষাবর্ষ ১৯৯৭-৯৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা।এরপর শিক্ষাবর্ষ ২০১০-২০১১ সালে বাংলা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর বিষয়ে পড়ার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজটি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের এ জেলা শিক্ষার্থীদের কাছে সোনার হরিণের মতো। শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার প্রয়াসে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। সাতক্ষীরার প্রাচীন এই কলেজটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী ১৫টি বিষয়ে অনার্স ও ২টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া এইচএসসি ও ডিগ্রি পর্যায়ে রয়েছে প্রচুর শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী এ কলেজে অধ্যয়নরত রয়েছে।

এই কলেজে দুটি ছাত্র হোস্টেল, দুটি একাডেমিক ভবন, একটি মসজিদ, কলেজের উত্তর পাশে রয়েছে সুবিশাল লেক, খেলার জন্য রয়েছে বিশাল একটি মাঠ। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার পরিবেশ আরও মনোরম করার জন্যে ১৫টি সেমিনার গ্রন্থাগারসহ রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। এছাড়াও বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৭টি বিজ্ঞানাগার ও একটি আধুনিক কম্পিউটার ল্যাবও রয়েছে। কলেজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোভার স্কাউট ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) ও এর বাইরে রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী রক্ত দানকারী সংগঠন ‘মুক্ত অঙ্গন’।

বর্তমানে এ কলেজে ৭৯টি শিক্ষকের পদ রয়েছে। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদ রয়েছে ১৯টি। এই কলেজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অনেকেই বিসিএসসহ অন্যান্য সরকারি চাকুরি এবং দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত রয়েছে।কলেজটি ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা জেলার অন্যতম বিদ্যাপিঠ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like