Home চিকিৎসা সাফল্যের দ্বার প্রান্তে করোনা ভ্যাকসিন

সাফল্যের দ্বার প্রান্তে করোনা ভ্যাকসিন

by Amir Shohel

বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনা ঠেকাতে অবশেষে আশার আলো দেখালেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। কারণ সোমবার করোনা ভ্যাকসিন তৈরিতে সফল দাবি করেছে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। তারা বলছেন, এটি মানব শরীরের জন্য নিরাপদ। এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও উজ্জীবিত করতে পারে। আর মাত্র একদিন পরই রুশ সেনাবাহিনী ঘোষণা দিয়েছে, রাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিনও প্রস্তুত। যদিও তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপ শুরু হয়নি।

এ বছরের শুরুতেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয় নতুন আতঙ্ক। এই আতঙ্কের নাম- করোনা ভাইরাস। যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে মানব দেহে। একইসঙ্গে একের পর এক মৃত্যু সংবাদে দিশেহারা বিশ্ববাসী। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে ঘোষণা করা হয় লকডাউন। কিন্তু দীর্ঘদিনের লকডাউনে অর্থনৈতিক মন্দায় বেকার হয়ে পড়ে কোটি কোটি মানুষ।

তাই করোনা ভাইরাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে গবেষণায় নামেন বিশ্ব সেরা  চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। বিভিন্ন দেশের দু’শতোর বেশি স্থানে একযোগে চলছে গবেষণা। কিন্তু সাড়ে ছ’মাস পেরিয়ে গেলেও আশার আলো দেখাতে পারছিলেন না কেউ।

অবশেষে বিশ্ববাসীর কাছে প্রথম সুখবরটি জানালেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। সোমবার তারা ঘোষণা দেন, ভ্যাসিন প্রস্তুত। তাদের উদ্ভাবিত এ ভ্যকসিন মানব শরীরে নিরাপদ। প্রায় ১ হাজার ৭৭ মানুষের ওপর পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই এটি শরীরে অ্যান্টিবডি ও হোয়াইট ব্লাড সেল তৈরি করতে পারছে। আর এটা শরীরের ভেতর করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধেও লড়তে পারে।

তাদের এ আবিষ্কারের ঘোষণায় বিশ্ববাসী স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললেও এখনো খানিকটা পথ বাকি। কারণ এ ভ্যাকসিন পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারবে কি-না, তা বলার সময় এখনও আসেনি। এ নিয়ে চলছে সবশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ।

কিন্তু প্রশ্ন হলো কীভাবে কাজ করবে এই ভ্যাকসিন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শিম্পাঞ্জির শরীরের সাধারণ সর্দিকাশি তৈরি করে, এমন একটি ভাইরাসের জিন পাল্টে ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে করোনা ভাইরাসের ‘স্পাইক প্রোটিনের’ জিনগত বৈশিষ্ট্য ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।

এই ভ্যাকসিন তৈরিতে বিজ্ঞানীদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো মানব দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি, আর টি-সেলকে শক্তিশালী করা। অ্যান্টিবডি হলো, ছোট আকারের প্রোটিন, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। আর টি সেল হলো, রক্তের সাদা একটি কনিকা। এই ভ্যাকসিন  অ্যান্টিবডি ও টি-সেলকে শক্তিশালী করে।

বিজ্ঞানীরা জানান, ভ্যাকসিন দেয়ার ১৪ দিন পরে টি-সেলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বাড়ে। আর অ্যান্টিবডির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয় ২৮ দিনের মধ্যে। তবে দীর্ঘমেয়াদী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় এ ভ্যাকসিন কতোটা কার্যকর, সেটি এখনো পরীক্ষা করা হয়নি।

এই ভ্যাকসিনের আরও একটি বিষয়ের পরীক্ষা চলছে। কারণ, এটা নিরাপদ হলেও রয়েছে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যদিও সেগুলো খুব বেশি বিপদজনক নয়। কেননা পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৭০ শতাংশ মানুষই জানিয়েছে, টিকা নেয়ার পর তাদের জ্বর বা মাথাব্যাথা হয়।

এই ভ্যাকসিনের পুরোপুরি সফলতা তখনই আসবে, যখন কোনো পাশ্বর্প্রতিক্রিয়াও থাকবে না। এই ধাপের পরীক্ষায় যুক্তরাজ্যে ১০ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেবে। তবে পরীক্ষাটি অন্য দেশেও করা হবে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০ হাজার, দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই হাজার আর ব্রাজিলে পাঁচ হাজার মানুষের ওপরও পরীক্ষা করা হবে।

অন্যদিকে আরেকটি আশার বাণী শুনিয়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। মস্কো টাইমস-এর প্রতিবেদনে  বলা হয়েছে, রুশ ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের দ্বিতীয় ধাপ চলছে। আর তৃতীয় ধাপ শুরুই হয়নি। তবে দ্বিতীয় ধাপেই যেসব স্বেচ্ছাসেবককে ভ্যাকসিন দেয়া হয় তারা সবাই করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে। তাই নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে রাশিয়ার উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনও প্রস্তুত। এখন অপেক্ষার পালা, কবে সাধারন মানুষের হাতের নাগালে আসবে নিরাপদ করোনা ভ্যাকসিন। আর সেদিনই জন্ম নেবে এক নতুন পৃথিবী। নতুন আশা নিয়ে আবারো সামনে এগিয়ে যাবে মানবজাতি।

 

You may also like