Home ধর্ম সালাম : সৌহার্দ্য ও আভিজাত্যের প্রতীক

সালাম : সৌহার্দ্য ও আভিজাত্যের প্রতীক

by Amir Shohel

‘সালাম’ ইসলামের অনুপম বৈশিষ্ট্য, নবীজী সা:-এর অন্যতম সুন্নত এবং শিষ্টাচার, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও আভিজাত্যের প্রতীক। ‘সালাম’- এর বাক্য বিনিময়ের দ্বারা অভিবাদন জানানোর পাশাপাশি পারস্পরিক কল্যাণকামিতার দোয়া করা হয় এবং এটি অনুমতি প্রার্থনায়ও সহায়ক হিসেবে কাজ করে। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে, এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সূরা নূর, আয়াত-২৭)

মানবসভ্যতায় যত অভিবাদনবাক্য বা রীতি প্রচলিত রয়েছে, তার কোনোটির তুলনা সালামের সাথে হতে পারে না। এটি এত ব্যাপক অর্থবোধক, সৌন্দর্যময় এবং তাৎপর্যপূর্ণ- যার বিশেষত্ব অন্য সব ক’টিতে অনুপস্থিত। সোজা কথায়, এটি সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ, অতুলনীয় এবং অদ্বিতীয়। যেমন- ‘আসসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ’- বাক্যের মাধ্যমে অভিবাদন, শ্রদ্ধা বা প্রীতি জানানোর সাথে সাথে এ দোয়াও করা হয় যে, ‘আপনার ওপর শান্তি, আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ বর্ষিত হোক’। সর্বোপরি, ‘সালাম’ বিনিময়ের মাধ্যমে মহান আল্লাহর স্মরণ করা হয়, স্মৃতিপটে তাঁর অনুগ্রহের কথা জাগ্রত হয়। পারস্পরিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের প্রতিশ্রুতিকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

মাপকাঠিতে ‘সালাম’-এর সাথে অন্য যেকোনো সম্ভাষণ বাক্য তুলনা করলে এত গভীর অর্থবোধক ও প্রাঞ্জল পাবেন না; বরং দুনিয়ার সব ক’টি স্বাগত বাক্যই সবদিক থেকে ‘সালাম’-এর তুলনায় সীমিত এবং স্বল্প অর্থজ্ঞাপক। যেমন- আমাদের একটি অভিবাদনবাক্য হচ্ছে- ‘শুভ সকাল’ এটির প্রতিশব্দ ‘গুড মর্নিং’ বা ‘সাবাহাল খাইর’- এগুলোর কোনোটিই ‘সালাম’-এর বাক্যের মতো মাহাত্ম্যপূর্ণ নয়, বরং এতটাই সীমিত যে- কেউ কস্মিনকালেও সকালের বাইরে মধ্যাহ্নে, বিকেলবেলা বা রাতে তা বলবে না, বরং ‘সকাল’ শব্দ পরিবর্তন করে উপযুক্ত শব্দ প্রয়োগ করে বলবে। ‘সালাম’-এর কোনো জুড়ি নেই। এটি সাহিত্য ও আভিজাত্যে কালোত্তীর্ণ এবং সর্বজনীন। দিনের শুরু কিংবা রাতের শেষ প্রহর, যেকোনো সময় অনায়াসে ‘আসসসালামু আলাইকুম…’ বলা যায় এবং এটি থেকে উত্তম কোনো শুভেচ্ছাবাক্য নাই-ও বটে।

আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর তোমাদেরকে যখন অভিবাদন করা হয় তখন তোমরা তা থেকে উত্তম প্রত্যাভিবাদন করবে বা তারই অনুরূপ করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর হিসাব গ্রহণকারী’ (সূরা নিসা, আয়াত-৮৬)। এ আয়াতের প্রথমাংশে আল্লাহ তায়ালা অভিবাদন প্রদানকারীকে প্রত্যুত্তরে আরো উত্তম বাক্য দিয়ে অভিবাদন জানানোর জন্য সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। যা ইসলামের সৌন্দর্য, কৌলীন্য ও শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক। ‘সালাম’-এর ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে- মুসলমানরা পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতে একে অন্যকে সালাম দেবে। এ ক্ষেত্রে রাজা-প্রজা, ছোট-বড়, শিক্ষক-ছাত্র, চাকর-মনিব, ধনী-দরিদ্র, আরবি-অনারবি, উঁচু-নীচুর কোনো ফারাক নেই। এমনকি কোমলমতি শিশুদের সালাম করাও রাসূল সা:-এর শিক্ষা ও আদর্শ। আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি একদল শিশুর পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে তিনি তাদের সালাম করে বললেন, রাসূল সা:ও তা করতেন (বুখারি : ৬২৪৭)। হ্যাঁ, ছোট বড়কে, পথচারী উপবিষ্টকে, আরোহণকারী পদাতিককে, আগন্তুক মেজবানকে, কমসংখ্যক লোক অধিকসংখ্যক লোককে আগে ‘সালাম’ দেয়া উত্তম বলে হাদিসে পাওয়া যায়। ব্যক্তিত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব, হিংসা, অহঙ্কার ইত্যাদি কারণে আগে ‘সালাম’ প্রদানে অনেক সময় অনীহা, অনাগ্রহ কাজ করে। এটি দূর করে যারা আগে ‘সালাম’ দিতে পারেন, হাদিসে তাদের জন্য অধিক পুণ্য ও অহঙ্কারমুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি রয়েছে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে আগে সালাম করে সে অহঙ্কারমুক্ত।’ (বায়হাকি)

আবদুুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত, এক লোক নবীজী সা:-কে জিজ্ঞেস করলেন, ইসলামে কোন কাজ উত্তম? তিনি বললেন, ‘তুমি মানুষজনকে আহার দেবে, পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে।’ (বুখারি : ৬২৩৬)

আরও পড়ুন : সালাম নিয়ে বিতর্ক, সেই ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা

‘সালাম’ পারস্পরিক প্রীতি-ভালোবাসা, দয়া-মমতা সৃষ্টি ও সম্পর্ক উন্নয়নে উল্লেøখযোগ্যভাবে কাজ করে। অধিক হারে সালাম বিনিময়ে অহমিকা, কদর্যতা, বিদ্বেষ, কঠোরতা ইত্যাদি নিন্দনীয় স্বভাব দূর হয়। রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা মুমিন (পরিপূর্ণ) না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর যতক্ষণ না পরস্পরকে ভালোবাসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের ঈমান পূর্ণ হবে না, আমি কি তোমাদেরকে একটি বিষয় শিক্ষা দেবো, যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবেÑ তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার করো।’ (মুসলিম)

ভুল উচ্চারণে সালাম দেয়া ছিল কুচক্রী ইহুদিদের ঘৃণ্য স্বভাব। সুতরাং এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আবদুুল্লøাহ ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘ইহুদিরা যখন তোমাদের প্রতি আসসামু আলাইকুম (তোমাদের মৃত্যু হোক) বলে সালাম দেয়, তখন তাদেরকে ‘ওয়া আলাইকা’ বলে উত্তর দাও। (মুসলিম : ৫৫৪৭)

আসুন, রাসূল সা:-এর আদর্শে উজ্জীবিত হই। শুদ্ধভাবে একে অন্যকে অধিকহারে বিশুদ্ধভাবে সালাম দেই এবং পিয়ারা নবীজী সা:-এর প্রিয় হই।

লেখক : সহকারী শিক্ষক, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, সিলেট।

You may also like