Home সারাদেশ স্বপ্ননীড়ের চাবি পেয়ে কাঁদলেন সাহেরা-শুকুর

স্বপ্ননীড়ের চাবি পেয়ে কাঁদলেন সাহেরা-শুকুর

by Shohag Ferdaus
স্বপ্ননীড়

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার সাহেরা বেগম (৭০)। স্বামী হারিয়েছেন দশ বছর আগে। ভিক্ষা করে যা পেতেন তাই দিয়েই তিনি কোনোমতে দিন চলত। সাহেরা বেগম এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেকেও বিয়ে দিয়েছেন, সে তার স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকেন।

নিজের বলতে নেই কিছুই। নেই জমি, নেই কোনো থাকার ঘর। মাথা গোজার মতো ছিল না কোনো ঠাঁই। বাড়ির পাশে অন্যের জমিতে পলিথিন মোড়ানো খুপরি ঘরে বসবাস করতেন তিনি।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার জয়দেবপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি পাকা ঘর পেয়েছেন সাহেরা বেগম। তার চোখেমুখে আনন্দের শেষ নেই।

২৩ জানুয়ারি শনিবার সকালে আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদে ঘরের চাবি বুঝে নিতে আসেন সাহেরা বেগম। অনুষ্ঠানে তার হাতে ঘরের চাবি ও জমির দলিলের কাগজপত্র তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিরা। চাবি ও দলিল হাতে পেয়ে কেঁদে ফেলেন সাহেরা বেগম।

সাহেরা বেগম বলেন, ‘পাকা ঘরে থাকুম জীবনে স্বপ্নও দেহি নাই, মজিবের বেটি আমাগোরে পাকা ঘর দিব চিন্তাও করি নাই। আল্লাহ তাহাকে হায়াত দারাজ করুন।’

কথা বলছিলেন আর চোখ দিয়ে আনন্দঅশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল সাহেরা বেগমের। কথা বলছিলেন আর বারবার চোখ মুছলিলেন তিনি।

সাহেরা বেগম বলেন, ‘গরম কালে কোনো রহমে থাকি, শীত আইলে খুপরিতে থাকন যে কত কষ্টের তা বুঝাইতে পারুম না। তয় শেখের বেটি মরনের আগে মোরে একটু শান্তি দেলো।’

স্বপ্ননীড়

শুধু সাহেরা বেগমই নয় একই এলাকার মনিরা বেগম, আনিলা বেগম, মুকুল খান, শুকুর মোল্লাসহ সবার মুখেই হাসি ফুটেছে, আবার কেউবা অতি আনন্দে কাঁদছেন।

শুকুর মোল্লা বলেন, ‘সবই হপ্ন মনে হইতেছে। আমি পাকা ঘরে থাকুম বলেই তিনি কেঁদে ফেলেন। চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, মরনের আগে সব ইচ্ছা পূরণ হইল আমার। যে ছাওয়াল আমারে বাড়িত তন বাইর করে দিছিলো, ছাওয়ালের চাইত ভালা ঘরে মুই এহন ঘুমাব। সবই শেখের বেটি আর আল্লাহ’র রহমত।’

কথা হয় মোসাম্মৎ বেগমের (৭৫) সঙ্গে। তার স্বামী মারা গেছেন ৩০ বছর আগে। ৪ মেয়ে ও ২ ছেলের জননী তিনি। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ছেলে বিয়ে করে তাদের মতো সংসার করছে।

ঘরের চাবি হাতে পেয়ে তিনি আনন্দে আত্মহারা। তিনি বলেন, ‘বাবারে পরের বাড়িত থাকতে গিয়ে কতো কথা শুনুন লাগছে। আজ নিজের ঘরে থাকমু, এ যে কি আনন্দ, তোমারে বুঝাইতে পারুম না।’

‘আশ্রয়ণের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার’-এ স্লোগান সামনে রেখে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সারাদেশের মতো ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ২২০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে শনিবার বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে ‘স্বপ্নর নীড়’। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই উপজেলাতে আরও ১৫০টি ঘর প্রদান করা হবে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী জানান, উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ২২০টি ঘর দেয়া হল। পরবর্তীতে আরও ১৫০টি আবাসনের প্রকৃত উপকারভোগী ভূমিহীন ও গৃহহীনরাই পাবেন এ ঘরগুলো। ঘর বরাদ্দে যেন কেউ অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা না নিতে পারে, সে জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সঠিকভাবে তদারকি করা হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ফরিদপুর জেলায় প্রথম পর্যায়ে ১ হাজার ৪৮০ জন গৃহ ও ভূমিহীনের মাঝে ঘর ও জমি প্রদান করা হয়েছে।

ঘরের চাবি ও জমি হস্তান্তরের পূর্বে জাতীয় অনুষ্ঠানে ভিডিও কণফারেন্সে যুক্ত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বিপিএম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায়, ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম রেজা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকসহ সমাজের সর্বস্তরের ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করে।

আরও পড়ুন: ‘শেখের বেটি আমাগো ঘর বানাই দিতেছে’

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like